মঙ্গলবার, ৫ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ছেই

প্রতিদিন ১১০০-এর বেশি রোগী আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ছেই

গত কয়েকদিনে ভ্যাপসা গরমে রাজধানীর মহাখালীর আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীদের উপচে পড়া ভিড় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি বাড়ছে। আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে প্রতিদিন ১১০০-এর বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে। স্থান সংকুলান না হওয়ায় অস্থায়ী তাঁবু টাঙিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে রোগীদের। রাজধানীর অন্য হাসপাতালগুলোতেও বাড়ছে ডায়রিয়া আক্রান্তদের ভিড়। আইসিডিডিআরবি সূত্রে জানা যায়, আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে মার্চ মাসে ২৯ হাজার ৬৮১ জন রোগী ভর্তি হয়েছিল। এদের ২৩ শতাংশ বা ৬ হাজার ৮২৬ জন ছিল তীব্র ডায়রিয়ার রোগী। এপ্রিলেও একই পরিস্থিতি আছে। প্রতিদিন আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে ১ হাজারের বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে। গতকাল বিকাল ৫টা পর্যন্ত ৯৪২ জন রোগী আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এপ্রিলের বাকি তিন দিনে ভর্তি হয়েছে ৩ হাজার ৭১৯ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা যায়, জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সারা দেশের হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে ৪ লাখ ৬১ হাজার ৬১১ জন। এর মধ্যে মারা গেছে দুজন। ডায়রিয়ায় সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে ঢাকা বিভাগে। এই বিভাগে আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ৫৯ হাজার ২৪৭ জন। সবচেয়ে কম আক্রান্ত হয়েছে বরিশাল বিভাগে। আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ৪১৫ জন। আট বিভাগের হিসাবে দেখা যায়, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগে ডায়রিয়ার আক্রান্তের সংখ্যা ফেব্রুয়ারির চেয়ে মার্চ মাসে কমেছে। অন্য সব বিভাগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। আইসিডিডিআরবি ও আইইডিসিআরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিন ধরনের রোগী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসে। কিছু রোগীর শরীরে তীব্র পানিশূন্যতা দেখা যাচ্ছে। কিছু রোগীর পানিশূন্যতা আংশিক। কিছু রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলেও পানিশূন্যতা দেখা যাচ্ছে না। ডায়রিয়া আক্রান্ত হলে সুস্থ হতে আইসিডিডিআরবি কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে প্যাকেট স্যালাইন আধা লিটার পানিতে গুলিয়ে খেতে হবে। বড়দের (১০ বছরের বেশি বয়সী) ডায়রিয়া হলে প্রতিবার পায়খানার পর ১ গ্লাস (২৫০ মিলি) খাবার স্যালাইন খেতে হবে। শিশুদের ডায়রিয়া হলে প্রতিবার পায়খানার পর শিশুর যত কেজি ওজন তত চা-চামচ বা যতটুকু পায়খানা হয়েছে আনুমানিক সেই পরিমাণ খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি দুই বছরের নিচের শিশু অবশ্যই মায়ের বুকের দুধ খাবে ও শিশুকে কোনো অবস্থাতেই বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করা যাবে না। ৬ মাসের অধিক বয়সী রোগী খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি সব ধরনের স্বাভাবিক খাবার খাবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যতদিন পানি, স্যানিটেশন ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না হবে ততদিন পর্যন্ত আমরা ডায়রিয়া-কলেরার ঝুঁকিতে থাকব। ডায়রিয়া মোকাবিলায় আমরা পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রেখেছি। স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোর এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তারা ঢাকা শহরে পানি সরবরাহ করে, পয়ঃনিষ্কাশনে কাজ করে। সিটি করপোরেশন, ওয়াসার সঙ্গে মিটিং করে আমরা ডায়রিয়া নিয়ে সতর্কতার বিষয়ে জানিয়েছি। তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে, পর্যাপ্ত স্যালাইন রয়েছে। কলেরা শনাক্তে কিট পর্যাপ্ত রয়েছে। কিন্তু ঢাকার এই চিত্র যদি বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে সামলানো মুশকিল হবে।’

 

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর