শনিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

পদ নিয়ে দ্বন্দ্বে তালা ঝুলছে সন্ধানীতে

দফায় দফায় বৈঠকেও মিলছে না সমাধান

জয়শ্রী ভাদুড়ী

নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে পাল্টাপাল্টি কমিটি ঘোষণায় অচল হয়ে পড়েছে স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদান নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সন্ধানী। দ্বন্দ্বের জেরে তালা ঝুলেছে সন্ধানীর কেন্দ্রীয় অফিসে। সমস্যা সমাধানে সন্ধানীর অচল অবস্থা নিরসন কমিটি কয়েক দফা বৈঠক করলেও মেলেনি সমাধান।

জানা যায়, দেশের স্বাস্থ্য খাতের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সন্ধানী। ১৯৭৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে যাত্রা শুরু হয় সংগঠনটির। ধীরে ধীরে দেশে স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদান আন্দোলনের পথিকৃৎ হয়ে ওঠে সংগঠনটি। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ অর্জন করে স্বাধীনতা পদক। সংগঠনটির সাবেক দায়িত্বশীল ও উপদেষ্টারা বলছেন, নেতৃত্ব ঘিরে পাল্টাপাল্টি কমিটি ঘোষণায় কার্যত অচল হয়ে পড়েছে ঐতিহ্যবাহী সংগঠন সন্ধানীর কেন্দ্রীয় কার্যক্রম।

গত ৭ জানুয়ারি ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সন্ধানী ঢাকা মেডিকেল কলেজ ইউনিটের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি আবদুর রউফ উল্লাসকে সভাপতি এবং সন্ধানী ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ইউনিটের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি শামীম রেজাকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০২১-২২ সেশনের কেন্দ্রীয় পরিষদ গঠন করা হয়। এরপর গত ১২ জানুয়ারি ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজে নতুন করে আরেকটি পাল্টা কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটিতে সভাপতি করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী মো. রাফায়েত হোসেনকে এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজের নিশিত কুমার মন্ডলকে। পাল্টাপাল্টি কমিটি গঠনে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নেয়। সাতটি ইউনিটে দুই দফা কমিটি হয়েছে। এগুলো হলো- শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ ইউনিট গাজীপুর, শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ ইউনিট গোপালগঞ্জ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ইউনিট, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ইউনিট, শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ইউনিট জামালপুর, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ ইউনিট, কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ ইউনিট মানিকগঞ্জ। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দুজন শুধু সন্ধানী ঢাকা মেডিকেল কলেজ ইউনিটে।

সন্ধানীর উপদেষ্টা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব নিরসনে উপদেষ্টাদের পক্ষ থেকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি একটি মিটিং ডাকা হয়। সেখানে নানা আলোচনা ও পরামর্শের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. তোসাদ্দেক হোসেন সিদ্দিকী জামালের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি হাইপাওয়ার কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে সদস্য সচিব করা হয় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ইএনটি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটুকে। এ ছাড়া কমিটির প্রধান উপদেষ্টা করা হয় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে। কমিটিতে বিএসএমএমইউ’র সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান, অধ্যাপক ডা. এ কে এম সালেক, সংসদ সদস্য ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না, বিএসএমএমইউ’র ট্রেজারার অধ্যাপক ডা. মো. আলী আসগর মোড়ল, সন্ধানীর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য অধ্যাপক ডা. মোশাররফ হোসেন মুক্ত, ডা. আবদুল কাইয়ুমকে সদস্য করা হয়। গত ৭ ফেব্রুয়ারি উপদেষ্টা কমিটির মিটিংয়ে দুই কমিটিই স্থগিত ঘোষণা করা হয়। এ সময় পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত নবগঠিত দুই কমিটি কেন্দ্রীয় সন্ধানীর ব্যানারে কোনো সভা, প্রচারণা বা কর্মসূচি পালন করতে পারবে না বলে জানানো হয়। তবে শুধু রক্তদান ও ত্রাণ কর্মসূচি চলমান থাকবে। এমনকি কমিটি স্থগিত থাকাকালীন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় অফিস উপদেষ্টা পরিষদের চক্ষুদান সমিতির তত্ত্বাবধানে চলবে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি সংগঠনটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও দ্বন্দ্ব নিরসনে গঠিত হাইপাওয়ার কমিটির বৈঠকে ১৫ মে ঢাকায় কেন্দ্রীয় সম্মেলনের মাধ্যমে পুনরায় কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু মো. রাফায়েত হোসেন এবং নিশিত কুমার মন্ডল ২৬ মার্চ তালা ভেঙে ভবনে প্রবেশ করে এবং মাসিক সভা আহ্বান করে। তারা নেমপ্লেট পরিবর্তন করে তাদের কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি নেন। ১ এপ্রিল মিটিং ডাকেন তারা। এ ঘটনার পরে ওই দিনই উল্লাস এবং শামীম রেজা গ্রুপ তাদের দেওয়া তালা ভেঙে ভবনে নতুন করে তালা দেয়। তারাও ১ তারিখ সন্ধানী ভবনে রক্তদান কর্মসূচি হাতে নেয়। মুখোমুখি এ কর্মসূচি ঠেকাতে সন্ধানীর অচল অবস্থা নিরসন কমিটি সন্ধানী ভবনে প্রোগ্রাম বন্ধ করতে ভবন সিল করেছে এবং জিডি করেছে। এ ব্যাপারে সন্ধানীর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য অধ্যাপক ডা. মোশাররফ হোসেন মুক্ত বলেন, সন্ধানীতে কমিটি নিয়ে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিরোধ নিরসনে ১২ এপ্রিল সভা আহ্বান করা হয়েছে। সব ইউনিটকে নিয়ে আমরা এ সমস্যা সমাধান করব। এ ব্যাপারে কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটুর কাছে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে মতামত দিতে অস্বীকৃতি জানান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর