রবিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে ঝুঁকি বাড়াচ্ছে মেডিকেল বর্জ্য

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে ঝুঁকি বাড়াচ্ছে মেডিকেল বর্জ্য

চিকিৎসা বর্জ্য (ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ) বিধিমালা, ২০০৮ অনুযায়ী সংক্রামক বর্জ্য ইনসিনারেটরের মাধ্যমে বিনষ্ট করতে হবে। অথচ এ নিয়ম কেউ মানছেই না। চট্টগ্রামে ইনসিনারেটর মেশিন আছে। কিন্তু সংক্রামক মেডিকেল বর্জ্যগুলো নষ্ট না করে তা ফেলা হচ্ছে যত্রতত্র, বিক্রি করা হচ্ছে ভাঙারি দোকানে। হাসপাতালগুলোর বর্জ্যও যত্রতত্র খোলা জায়গায় পড়ে থাকে। ফলে চট্টগ্রামে ঝুঁকি বাড়াচ্ছে দূষিত মেডিকেল বর্জ্য। গত ৩১ মার্চ নগরের বন্দর থানাধীন ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের টিজি কলোনির একটি ভাঙারি কারখানা থেকে তিন মণ মেডিকেল বর্জ্য উদ্ধার করে পরিবেশ অধিদফতর। এসব বর্জ্য হাসপাতাল থেকে অপসারণ করে ইনসিনারেটরে নষ্ট করার কথা থাকলেও তা না করে ভাঙারির দোকানে বিক্রি করা হয়।  হাসপাতাল বর্জ্যরে মধ্যে আছে- রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত সুই, সিরিঞ্জ, গজ কাপড়, ব্যান্ডেজ, পুঁজযুক্ত তুলা, ফেসমাস্ক, পিপিই, হ্যান্ডগ্লাভস, নেজাল সোয়াব, স্যালাইনের খালি ব্যাগ, প্লাস্টিকের সিরিঞ্জ, ওষুধের শিশি-বোতল, রক্তের ব্যাগ, ওষুধ ও রাসায়নিক দ্রব্য। নগরের সরকারি-বেসরকারি ২৮২টি হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে দৈনিক প্রায় ১০ টন মেডিকেল বর্জ্য উৎপাদন হয়। জানা যায়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) গত ১১ জানুয়ারি নগরের হালিশহর আনন্দবাজার এলাকায় একটি ইনসিনারেটর স্থাপন করে। ৩ কোটি  টাকা ব্যয়ে কেনা মেশিনটির দৈনিক তিন মেট্রিক টন চিকিৎসা বর্জ্য পোড়ানোর ক্ষমতা রয়েছে। তবে মেশিনটি বসানোর আগে জাইকা সমীক্ষা পরিচালনা করে জানায়, নগরের হাসপাতালগুলো থেকে দৈনিক দেড় টন মেডিকেল বর্জ্য সংগ্রহ করা যাবে। কিন্তু বর্তমানে এ পরিমাণ মেডিকেল বর্জ্য পাওয়া যাচ্ছে না। হাসপাতালগুলো থেকে চট্টগ্রাম সেবা সংস্থা নামে একটি প্রতিষ্ঠান পৃথককৃত বর্জ্য ইনসিনারেটরে দেওয়ার কথা। কিন্তু হাসপাতাল বর্জ্য চার ভাগে ভাগ না করার কারণে আশানুরূপ ইনসিনারেটরে যাচ্ছে না। বর্তমানে নগরের ১৬৩টি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে সেবা সংস্থাটি বর্জ্য সংগ্রহ করছে। কিন্তু বর্তমানে নগরের স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান মোট ২৮২টি। জাইকা বলছে, ‘দৈনিক দেড় টন বর্জ্য সংগ্রহ করার কথা। কিন্তু তা পাওয়া যাচ্ছে না। তবে আস্তে আস্তে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। সবাই নিজ দায়িত্বে বর্জ্য পৃথক করে দিলে তা পোড়ানো সহজ হতো।

পরিবেশও দূষিত হতো না। এখন এলোমেলোভাবে হাসপাতাল বর্জ্য পড়ে থাকলে তা স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য হুমকি। পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম নগরের সহকারী পরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক বলেন, নিয়ম অনুযায়ী সংক্রামক বর্জ্য ইনসিনারেটরের মাধ্যমে নষ্ট করতে হবে। নগরের হাসপাতালগুলোর চিকিৎসা বর্জ্য সংগ্রহ করে তা নষ্ট করা হচ্ছে ইনসিনারেটর মেশিনে। চট্টগ্রাম সেবা সংস্থা দায়িত্ব পালন করছে। কিন্তু কিছুদিন আগে ভাঙারির দোকানে মেডিকেল বর্জ্য পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এটি বিচারাধীন। গত বছরের ৩১ আগস্ট চিকিৎসা বর্জ্য বিধিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগে সংস্থাটিকে আড়াই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। তিনি বলেন, মেডিকেল বর্জ্য যত্রতত্র পড়ে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ। পরিবেশও দূষণ করে। স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতি। এ ব্যাপারে আমরা নিয়মিত তদারকি করি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।

সরেজমিন চমেক হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের পেছনের একাধিক ডাস্টবিনে পড়ে আছে নানারকম বর্জ্য। এর সঙ্গে মিলেমিশে আছে মেডিকেল বর্জ্যও। এসব বর্জ্য ওয়ার্ড থেকে পৃথকভাবে সংগ্রহ করার কথা থাকলেও তা হয় না। সাধারণ, লাল, কালো ও সবুজ ডাস্টবিনে পৃথক করে রাখার কথা থাকলেও তা করা হয় না। অভিন্ন চিত্র চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালসহ বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোরও। এখানে পড়ে থাকে সাধারণ ময়লার সঙ্গে হাসপাতালের বিভিন্ন সংক্রামক বর্জ্য।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর