বুধবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

তিন বছরের কমিটি, চার নেতায় আড়াই বছর পার

ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগ

রফিকুল ইসলাম রনি

চার নেতা দিয়ে চলছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগ। সম্মেলনের আড়াই বছর পার হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি এই চার নেতা। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর মেয়াদি এ কমিটির সময় শেষ হবে আগামী ১১ নভেম্বর। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, কমিটি গঠনে একমত না হওয়া, আবার কেন্দ্রের হস্তক্ষেপসহ নানা ইস্যুতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ এই দুই ইউনিটে। স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ-উত্তর শাখার সর্বশেষ সম্মেলন ২০১৯ সালের ১১ ও ১২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। ১৬ নভেম্বর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নির্বাচনের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখায়ও নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়। উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হন ইসহাক মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান নাঈম। দক্ষিণের সভাপতি পদে নির্বাচিত হন কামরুল হাসান রিপন এবং সাধারণ সম্পাদক হন তারিক সাঈদ। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর মেয়াদি এই কমিটি দুই বছরের বেশি সময় পার করলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি। এতে সংগঠনের পদপ্রত্যাশী নেতারা হতাশ হয়ে পড়েছেন বলে জানা গেছে। নাজুক অবস্থা ঢাকা মহানগরের থানা-ওয়ার্ড কমিটিগুলোতেও। দুই শাখার প্রায় সব থানা-ওয়ার্ড কমিটিই মেয়াদোত্তীর্ণ। সম্মেলন না হওয়ার অগোছালো অবস্থায় রয়েছে সংগঠনের তৃণমূল। গত বছরের জুলাই মাসের মধ্যে কমিটি করার নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দিলেও ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এক হয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেনি। মহানগর উত্তরের পদপ্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আনিসুর রহমান নাঈম একসময় ইসহাক মিয়ার অনুসারী ছিলেন। কিন্তু মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়ার পরে তিনি নিজের মতো চলেন। তৈরি হয় দ্বন্দ্ব। সভাপতি ইসহাক মিয়ার সঙ্গে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও মতপার্থক্য থাকায় ঢাকা মহাগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি। পদপ্রত্যাশীদের অভিযোগ, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনই নিজের পক্ষের লোক ভারী করতে কাজ করছেন। এ জন্য কেন্দ্রীয় কমিটি একাধিকবার মহানগরকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নির্দেশনা দিলেও তারা কর্ণপাত করেননি। উত্তরের পাশাপাশি মনস্তাত্ত্বিক প্রতিযোগিতা ও দ্বন্দ্ব দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগেও কম নয়। নেতাদের অনুসারীরা যার যার নেতাদের নামে স্লোগান দেওয়ার অভিযোগ পুরনো। এ ছাড়া নিজের লোক সৃষ্টিতে তারাও প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে নেই। এ নিয়ে কাদা ছোড়াছুড়ি বহু হয়েছে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজন চলেন আলাদা গ্রুপ নিয়ে। তাদের গ্রুপিং প্রকাশ্যে এসেছে বিভিন্ন পোস্টার ও বিলবোর্ডে। এক নেতার ছবি থাকলে আরেক নেতার ছবি থাকে না।

অভিযোগ আছে, ঢাকা দক্ষিণে স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক শীর্ষ নেতা দল গোছানোর চেয়ে বেশি ব্যস্ত অর্থ উপার্জনে। কে কত বড় ঠিকাদারি করবে সেই প্রতিযোগিতা বেশ দূর পর্যন্ত গড়িয়েছে। টাকা ও কাজের পেছনে ছুটতে গিয়ে কমিটি করার কোনো মনোযোগ ছিল না তাদের।

জানা গেছে, দলীয় প্রোগ্রামে প্রকাশ্য চলে দলাদলি এবং নিজ নেতার নামে স্লোগান। এ জন্য ত্যাগী ও দলের পুরনো নিবেদিত কর্মীরাও পড়েছেন বিপাকে।

ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের অধীনে ২৪টি থানা এবং ৫৪টা ওয়ার্ড রয়েছে। দক্ষিণের অধীনে ২৫টি থানা এবং ৭৫টি ওয়ার্ড রয়েছে। এগুলোর প্রায় সব কমিটিই মেয়াদোত্তীর্ণ। এতে ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়েও নেতৃত্বের ফাটল দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন নতুন নেতৃত্ব না আসায় এসব থানা-ওয়ার্ডে নতুন নেতৃত্ব আসতে পারছে না। অনেকেই আবার দলের দুঃসময়ে কর্মী ও ত্যাগীদের বাদ দিয়ে নিজের বলয় তৈরি করতে চাচ্ছেন বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক তারিক সাঈদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজ শেষ পর্যায়ে। আমরা এ মাসেই দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সভাপতি (কামরুল হাসান রিপন) ওমরাহ পালন করতে যাওয়ায় পিছিয়ে যাচ্ছে। আশা করি খুব দ্রুত কমিটি ঘোষণা করতে পারব।’

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন টেলিফোনে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনাকালীন আমাদের মানবিক কাজে বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। আমরা আমাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজও করেছি। এটা অনেকদূর এগিয়েও নিয়েছি। যে কোনো সময় পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে।

ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইসহাক মিয়া বলেন, আমরা আশা করছি খুব কম সময়ের মধ্যেই আমাদের কমিটি দিয়ে দিতে পারব। ঢাকা মহানগর উত্তরের থানা-ওয়ার্ড কমিটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা দায়িত্ব পাওয়ার পরই তো করোনা শুরু হয়। ফলে সেভাবে কমিটিগুলো নতুন করে করতে পারিনি। আগের করা কমিটি দিয়েই এখনো চলছে। এখন করোনা যেহেতু কমে গেছে, আশা করছি খুব শিগগিরই থানা-ওয়ার্ড কমিটির সম্মেলনের কাজও শুরু করতে পারব।

শীর্ষ চার নেতার মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে এমন কথা মানতে নারাজ সবাই। প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বের কথা স্বীকার না করলেও আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড পর্যন্ত জানে স্বেচ্ছাসেবক লীগদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণেই তিন বছর মেয়াদি কমিটি আড়াই বছরেও পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর