বুধবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা
তদন্ত প্রতিবেদন

হিজাব নয়, স্কুল ড্রেস না পরায় শিক্ষার্থীদের পেটানো হয়

নওগাঁ প্রতিনিধি

নওগাঁর মহাদেবপুরের দাউল বারবাকপুর উচ্চবিদ্যালয়ে হিজাব পরায় শিক্ষার্থীদের পেটানো হয়নি বরং বিদ্যালয়ের নির্ধারিত পোশাক (স্কুল ড্রেস) পরে না আসায় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে পিটুনি দেওয়া হয়েছিল। সোমবার রাত ৮টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের কাছে জমা দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। প্রশাসনের তরফ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান মহাদেবপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবদুল মালেক কমিটির তিন সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে ইউএনও মিজানুর রহমানের কাছে চার পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তদন্তে হিজাব পরায় শিক্ষার্থীদের পেটানোর অভিযোগের সত্যতা মেলেনি। তদন্তে কমিটির কাছে মনে হয়েছে, স্কুল ড্রেসের কারণে গত ৬ এপ্রিল বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পাল ও শরীর চর্চা শিক্ষক বদিউল আলম শিক্ষার্থীদের পেটান। আর স্কুলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে শিক্ষক আমোদিনী পালকে ফাঁসানোর জন্য ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। যারা গুজব ছড়িয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিটি। এ ছাড়া ৭ এপ্রিল বিদ্যালয়ে ১৫০ থেকে ২০০ ব্যক্তি হামলা চালিয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

মিজানুর রহমান আরও বলেন, স্কুল ড্রেস না পরে আসায় শিক্ষক আমোদিনী পাল ও আরেক শিক্ষক বদিউল আলম শিক্ষার্থীদের পিটুনি দেন। অথচ প্রধান শিক্ষক ধরনী কান্ত বর্মণ শুধু শিক্ষক আমোদিনী পালকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেন। এ ঘটনা তদন্ত কমিটির কাছে উদ্দেশ্যমূলক মনে হয়েছে। শুধু আমোদিনী পালকে কারণ দর্শাতে বলায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। এ ছাড়া প্রতিবেদনে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে শিক্ষার্থীদের পেটানোয় শিক্ষক আমোদিনী পাল ও শিক্ষক বদিউল আলমের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। কারা গুজব ছড়িয়েছে, তদন্ত কমিটি তাদের চিহ্নিত করতে পেরেছে কি না, জানতে চাইলে ইউএনও বলেন, কিছু ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা গেছে। তবে এ মুহূর্তে নাম বলা যাচ্ছে না। আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হলে সবাই জানতে পারবেন। তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি যেসব পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ দিয়েছে, সেগুলো আমলে নিয়ে এ ঘটনায় যেখানে যেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, তা করা হবে। প্রভাবমুক্ত হয়ে তদন্ত করতে পেরেছেন বলে উল্লেখ করেন তদন্ত কমিটির প্রধান আবদুল মালেক। তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক, ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও এলাকাবাসী সবাইকে আমরা ডেকেছিলাম। সবার সবকিছু শুনে ও তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করেছি। ইউএনও মহোদয় প্রতিবেদন গ্রহণ করেছেন। প্রতিবেদনে পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সাতটি সুপারিশও করা হয়েছে। প্রভাবমুক্ত হয়েই আমরা তদন্ত করতে পেরেছি। ঘটনায় কে, কীভাবে দায়ী তা বলার এখতিয়ার আমাদের নেই। তবে প্রতিবেদনে মোটামুটি সব দেওয়া আছে।

এদিকে গত রবিবার বিকালে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক ধরনী কান্ত পাল বাদী হয়ে স্কুলে হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে অজ্ঞাত ১৪০/১৫০ জনের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে হামলাকারীরা বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার পাশাপাশি কয়েকটি প্লাস্টিকের চেয়ার ভাঙচুর করে বলে ওই জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে। জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার কথা জানিয়েছেন থানার ওসি আজম উদ্দিন মাহমুদ।

হিজাব পরায় বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়েছে বলে গত বুধবার অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনার জের ধরে পরদিন বৃহস্পতিবার স্থানীয় অনেক মানুষ ওই স্কুলে গিয়ে প্রতিবাদ জানান এবং স্কুলের আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন। এ ঘটনা তদন্তে প্রশাসনের পক্ষ থেকে গত বৃহস্পতিবার উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এর আগে শিক্ষা বিভাগের পক্ষ থেকে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

গত কয়েকদিন থেকে হিজাব নিয়ে ছড়ানো গুজবে ফেসবুকসহ সংবাদ মাধ্যমে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। এ খবর গড়িয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম পর্যন্ত।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর