বুধবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

শৈল্পিক সৌন্দর্যে শখের হাঁড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

শৈল্পিক সৌন্দর্যে শখের হাঁড়ি

শখের হাঁড়ি। নামের মধ্যে ফুটে ওঠে শৈল্পিক সৌন্দর্য আর শৌখিনতা। যে হাঁড়ির রং-বৈচিত্র্য আর প্রতীক দেখলেই মনে পড়ে বাঙালিয়ানা। মেলা কিংবা আত্মীয়ের বাড়িতে মিষ্টি নিয়ে যাওয়া, শখের হাঁড়ির জুড়ি মেলা ভার। বাঙালির ক্ষয়িষ্ণু এক ধারা শখের হাঁড়ি। প্রতি বছর বৈশাখ এলেই মেলা মাতায় সুশান্ত পালের শখের হাঁড়ি। কিন্তু এবার মেলা মাতাবে না শখের হাঁড়ি। দুই বছর করোনা আর এবার রমজানে বৈশাখ। তাই ভাটা পড়েছে সুশান্ত পালের প্রস্তুতিতে। ইতিহাসখ্যাত মৃৎশিল্পী বীতপাল ও ধীমান বরেন্দ্রভূমিতে হাজার বছর আগে তৈরি করেছিলেন চিত্রকলা ও ভাস্কর্যের বিখ্যাত এক ঘরানা। সে ঘরানার ক্ষয়িষ্ণু এক ধারা আজও প্রবহমান রাজশাহীর কুমারদের ঘরে ঘরে। কুমাররা নকশাদার হাঁড়ি তৈরি করলেও বিষয়বৈচিত্র্য এবং ব্যবহার-উপযোগিতার কথা বিবেচনায় রাজশাহীর চিত্রিত শখের হাঁড়িই বিখ্যাত। রাজশাহীর পবা উপজেলার বসন্তপুর গ্রাম সুশান্ত পাল দীর্ঘকাল আঁকড়ে আছেন এ শখের হাঁড়ি নিয়ে। তিনি জানান, আগে মেলায় শখের হাঁড়ির প্রচলন ছিল। এখন সেই হাঁড়ি বিক্রি হয় না। সব দখল করে আছে প্লাস্টিকের পণ্যে। আগের মতো তাই মেলা ঘিরে প্রস্তুতি নেই। বৈশাখী মেলা থেকে মুড়ি-মুড়কি কিংবা মেয়ের বিয়েতে শখের হাঁড়িভর্তি মিষ্টি উপহার হিসেবে পাঠানো একসময় ছিল রাজশাহীর মানুষের বিশেষ রীতি। এ অঞ্চলের লোকসংস্কৃতি ও জীবনযাপনে শখের হাঁড়ি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে চিহ্নিত।

সে জায়গা এখন আর নেই বলছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক বনি আদম। তিনি বলেন, শখের হাঁড়িতে বিভিন্ন বার্তা থাকে। চিত্রিত বার্তা সৌন্দর্যের, রোমান্সের বার্তা দেয়। কিন্তু সে দিনগুলো আধুনিকার নামে ফিকে হয়ে গেছে।

কালের বিবর্তন ও আধুনিকতার গ্রাসে লোকজ ঐতিহ্য প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। যেটুকু টিকে আছে তা রক্ষায় সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ শিল্পী সুশান্ত পালের। পরবর্তী প্রজন্ম এ শিল্পের প্রতি আগ্রহী নয় জানিয়ে সুশান্ত পালন বলেন, ‘আমার অবর্তমানে শখের হাঁড়ির ঐতিহ্য মুছে যেতে পারে চিরতরে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর