সোমবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা
নিখোঁজের ১০ বছর পার

ইলিয়াসের সন্ধান দাবিতে ফের সরব সিলেট বিএনপি

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

ইলিয়াসের সন্ধান দাবিতে ফের সরব সিলেট বিএনপি

সময় পেরিয়ে হয়ে গেছে এক দশক। ইলিয়াস আলীর জন্য অপেক্ষার নিদারুণ প্রহর যেন তবু ফুরাচ্ছে না। গাড়িচালক আনসার আলীসহ বিএনপির সাবেক এই কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ‘নিখোঁজ’ হওয়ার ১০ বছর পূর্ণ হয়েছে গতকাল। এই দীর্ঘ সময়ে ইলিয়াস আলীর ন্যূনতম কোনো খোঁজ মেলেনি। ইলিয়াস বেঁচে আছেন কি না তাও জানে না কেউ। তবে বিএনপি নেতা-কর্মীরা মনে করেন ইলিয়াস অক্ষত আছেন। তাকে ফিরে পাওয়ার বিষয়টি নির্ভর করছে সরকারের সদিচ্ছার ওপর। সরকার আন্তরিক হলেই ইলিয়াসকে ফিরে পাওয়া সম্ভব। তাই ১০ বছরে ঝিমিয়ে পড়া ইলিয়াস ইস্যু ফের চাঙা করতে চাইছে সিলেট বিএনপি। নিখোঁজের ১০ বছর পূর্তি থেকে নতুন করে ধারাবাহিক আন্দোলন করার প্রস্তুতি নিতে যাচ্ছে সংগঠনটি। আর এবার নতুন করে এ আন্দোলনে যুক্ত করা হচ্ছে উপজেলা পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের।

ইলিয়াস আলী ‘নিখোঁজের’ ১০ বছরপূর্তি উপলক্ষে সিলেট জেলা বিএনপি দুই দিনের ও মহানগর শাখা এক দিনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে উপজেলা বিএনপির নেতারা প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন। আর জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে এই স্মারকলিপি। জেলা বিএনপির দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচি হিসেবে আজ সোমবার আয়োজন করা হয়েছে ইলিয়াস আলীসহ ‘নিখোঁজ’ সব নেতা-কর্মীর সন্ধান দাবিতে আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল। এ ছাড়া মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে গতকাল প্রতিবাদী আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সিলেট জেলা বিএনপির সদ্য সমাপ্ত কাউন্সিলে নির্বাচিত সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরীর প্রতিশ্রুতির মধ্যে ছিল ইলিয়াস আলীর সন্ধান দাবিতে আন্দোলন জোরদার। নির্বাচিত হওয়ার পর দুই নেতা তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ইলিয়াস ইস্যুতে ধারাবাহিক আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে পরিকল্পনা আঁটছেন বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা মনে করি ইলিয়াস আলী সরকারি হেফাজতে আছেন। সরকার চাইলেই ইলিয়াসকে তার পরিবার, বিএনপি ও সিলেটবাসীর কাছে ফিরিয়ে দিতে পারে। কিন্তু সরকার ইলিয়াস আলীর জনপ্রিয়তাকে ভয় পেয়ে তাকে গুম করে রেখেছে। এ অবস্থায় ইলিয়াস আলীকে ফিরে পেতে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। তাই আপাতত দুই দিনের কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। এরপর জেলাজুড়ে ধারাবাহিক কর্মসূচি দেওয়া হবে।’

সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী বলেন, ‘ইলিয়াস আলী সিলেটের মাটি ও মানুষের নেতা। সিলেটে জনগণের অংশগ্রহণে ফের ইলিয়াস আন্দোলন জোরদার করা হবে। এ লক্ষ্যে প্রস্তুতিও চলছে।’

দলীয় সূত্র জানায়, ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল মধ্যরাতে ঢাকার বনানী থেকে গাড়িচালকসহ নিখোঁজ হন ইলিয়াস আলী। ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল সারা দেশ। সেই আন্দোলনে ইলিয়াসের উপজেলা বিশ্বনাথে তিনজনসহ সারা দেশে প্রাণ হারান আটজন। প্রথম দিকে ইলিয়াসের সন্ধান দাবিতে উচ্চকিত ছিলেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের কণ্ঠস্বর ম্রিয়মাণ হয়ে যায়।

দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও জানা যায়নি ইলিয়াস আলী কোথায় আছেন। তার ভাগ্যে কী ঘটেছে তা আজও অমীমাংসিত রহস্য হয়ে আছে। ইলিয়াসের সন্ধানের জন্য তার স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনা সাক্ষাৎ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। কিন্তু তবু খোঁজ মেলেনি বাংলাদেশের উজানে ভারতের টিপাইমুখ বাঁধবিরোধী আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রাখা ইলিয়াসের। তার জন্য আজও পথ চেয়ে থাকেন মা সূর্যবান বিবি।

ইলিয়াস আলীর মতো আনসার আলীর জন্যও তার পরিবার অন্তহীন অপেক্ষায় আছে। আনসারের স্ত্রী মুক্তা বেগম বলেন, ‘আমি এখনো আনসার আলীকে ফিরে পাওয়ার দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে আছি। মেয়েকে নিয়ে এ আশায় বেঁচে আছি। সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, ইলিয়াস আলী আর আনসারকে ফিরিয়ে দেওয়া হোক।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর