শিরোনাম
সোমবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

হালদা নদী রক্ষায় উদ্যোগ ‘কাগুজে’

প্রায় প্রতিদিনই জব্দ করা হচ্ছে মা মাছ ধরার জাল

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

হালদা নদী রক্ষায় উদ্যোগ ‘কাগুজে’

উপমহাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী এখন বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ। এটিই দেশের একমাত্র একক নদী হিসেবে খ্যাত। অতি গুরুত্বপূর্ণ নদীটি এখন দখল ও মা মাছ নিধনসহ নানা সংকটে জর্জরিত। নদীটি রক্ষায় সরকারি নানা উদ্যোগ ও সিদ্ধান্ত রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, এসবের বেশিরভাগই কাগজে-কলমে। যার পরিপ্রেক্ষিতে নদীটি এখন ত্রাহি অবস্থা।  জানা যায়, এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত হালদায় মা মাছের ডিম ছাড়ার মৌসুম। অথচ প্রতিদিনই হালদা নদী থেকে মা মাছ ধরার জাল জব্দ করা হচ্ছে। গতকাল দুই হাজার মিটার, বৃহস্পতিবার চার হাজার মিটার ও বুধবার আট হাজার মিটার জাল জব্দ করা হয়। সঙ্গে দূষণও হচ্ছে। ফলে আগামী মৌসুমে ডিম প্রাপ্তি নিয়ে শঙ্কা তৈরি হচ্ছে।   

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, হালদা নদী রক্ষায় সরকারি নানা উদ্যোগ-সিদ্ধান্ত রয়েছে। এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কাজও হচ্ছে। তবে এখন তদারকি বাড়ায় অনিয়মগুলো বেশি প্রকাশ পাচ্ছে।

 তিনি বলেন, সামনে ডিম ছাড়ার মৌসুম। এখন প্রতিদিনই জাল উদ্ধার করা হচ্ছে। এটি মা মাছের জন্য বড় হুমকি। এখনই হালদা পাড়ের মানুষদের সচেতন হতে হবে। নইলে আগামী মৌসুমে এর নেতিবাচক প্রভাব  পড়তে পারে।        

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী বলেন, হালদা নদী রক্ষায় সরকারি বিভিন্ন কমিটি কাজ করছে। আমরা মনে করি, হালদা নিয়ে পাড়ের মানুষ যতদিন আন্তরিক, সচেতন ও সতর্ক না হবেন ততদিন হালদা নদীর সামগ্রিক পরিবেশ রক্ষা করা সম্ভব হবে না। এমনিতেই নদীটি নানা সমস্যায় জর্জরিত, এর সঙ্গে যদি প্রতিনিয়তই জাল বসানো হয়, তাহলে মা মাছের জন্য হুমকি হবে। কারণ একটা ইতিবাচক পরিবেশের ফলেই মা মাছ ডিম ছাড়তে হালদা নদীতে আসে। জাল এ পরিবেশ নষ্ট করে দিচ্ছে।  

জানা যায়, হালদা নদীর মা মাছ রক্ষায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ২০১০ সালের ১৪ অক্টোবর একটি গেজেট (এসআরও নং-৩৪৫) প্রকাশ করে। গেজেটে নাজিরহাট ব্রিজ থেকে কালুরঘাট ব্রিজ পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার (উত্তর থেকে দক্ষিণ) এলাকাকে অভয়াশ্রম ঘোষণা করে সারা বছর মাছ শিকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। গেজেটে ‘হালদা নদী সংযুক্ত ১৭টি খালে ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত মাছ শিকার নিষিদ্ধ এবং হালদাসংলগ্ন কর্ণফুলী, শিকলবাহা, চ্যাংখালি এবং শিকলবাহা খাল/নদীতে মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত মাছ শিকার নিষিদ্ধ’ করা হয়।  

২০২০ সালের ১৯ মে আদালতের দেওয়া নির্দেশনার আলোকে হালদা নদীর ডলফিন হত্যা রোধ, প্রাকৃতিক পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য এবং সব ধরনের মা মাছ রক্ষা সংক্রান্ত একটি কমিটি গঠিত হয়। ২০২০ সালের ২১ ডিসেম্বর হালদা নদীর তীরবর্তী ২৩ হাজার ৪২২ একর জায়গাকে প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ ও পরিবেশগত মানোন্নয়নের মাধ্যমে রুই জাতীয় মাছের নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিতকরণ ও গাঙেয় ডলফিনের আবাসস্থল সংরক্ষণে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে। গেজেটে হালদা নদী রক্ষায় ১২টি শর্ত মেনে চলার কথা বলা হয়েছে। তা ছাড়া গঠিত হয় হালদা নদীতে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ বাস্তবায়ন তদারকি কমিটি। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত হালদা নদীতে ইঞ্জিনচালিত/যান্ত্রিক নৌকা চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়।

এ ছাড়া ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় হালদা নদীতে খননযন্ত্র ও ইঞ্জিনচালিত নৌযান ব্যবহার বন্ধের সুপারিশ করে। একই সঙ্গে বালু তোলা, নদীতে জালের ব্যবহার, কলকারখানার বর্জ্য ও দূষিত পানি নদীতে প্রবেশ করতে না পারা, ডলফিনের নিরাপদ বিচরণ, প্রজনন ও গবেষণার ব্যবস্থা করতে বলা হয়। এত উদ্যোগ, সিদ্ধান্ত ও কমিটি গঠনের পরও হালদা নদীকে দখল, ডিম ছাড়ার মৌসুমে ইঞ্জিনচালিত বোট চালানো, জাল বসিয়ে মা মাছ ধরা, ডলফিন নিধন করাসহ নানা অত্যাচার অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিনই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। জাল উদ্ধার করা হচ্ছে। গত তিন বছরে হালদা নদী থেকেই মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে ৩৪টি ডলফিন।  

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর