মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা
ঢাবির আলোচনা সভায় ‘মোশতাককে শ্রদ্ধা’

ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি ছাত্রলীগের রহমত উল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত আলোচনা সভায় মুজিবনগর সরকারের সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. রহমত উল্লাহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পরিকল্পনাকারী খন্দকার মোশতাক আহমদের প্রতিও ‘শ্রদ্ধা জানান’ বলে অভিযোগ ওঠে। পরে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। গতকাল দুপুরে অধ্যাপক রহমত উল্লাহর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানকে স্মারকলিপি দেয় ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন উপাচার্যের হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন। এদিকে, ছাত্রলীগের স্মারকলিপি দেওয়ার দেড় ঘণ্টা আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে মোশতাক আহমদের প্রতি ‘শ্রদ্ধাজ্ঞাপক কিছু বলে থাকলে’ তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন অধ্যাপক ড. রহমত উল্লাহ। ছাত্রলীগের স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যাকান্ডের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড, বাঙালির হৃদয়ে ‘কুখ্যাত মীরজাফর’ হিসেবে ঘৃণিত খন্দকার মোশতাক আহমদকে জ্ঞাত-অজ্ঞাতভাবে শ্রদ্ধা জানানোর মতো যে কোনো ঘটনা-বক্তব্যকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চূড়ান্তভাবে প্রত্যাখ্যান করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জাতির জনকের খুনির নাম উচ্চারিত হতে পারে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ এ ঘটনাকে ধৃষ্টতামূলক বলে মনে করে। একই সঙ্গে শুধু বক্তব্য প্রত্যাহারই নয়, এ বক্তব্যের জন্য আমরা তাকে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানাই। রহমত উল্লাহর আনুষ্ঠানিক ক্ষমাপ্রার্থনা নিশ্চিতপূর্বক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবিলম্বে এ বিষয়ে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।’ স্মারকলিপি গ্রহণ শেষে উপাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্রলীগকে আমি ধন্যবাদ দিই। যৌক্তিকভাবেই তারা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। তাদের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত করার মানুষ সমাজে খুব বেশি থাকবে না। মহান মুক্তিযুদ্ধ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, বাংলাদেশ, ভাষা আন্দোলন- এগুলোর সঙ্গে ষড়যন্ত্রকারী বা অশুভ মহলের ধারণা, মত বা দর্শনের প্রতিফলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জাতি কখনো গ্রহণ করবে না। আমি এর সঙ্গে সহমত জ্ঞাপন করি। আশা করি, এটির সুন্দর সমাধান আসবে।

এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ড. রহমত উল্লাহ বলেন, ‘মুজিবনগর সরকারে কে কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন, সেগুলো বলতে গিয়ে আমি অজ্ঞতাবশত কোনো কিছু বলে থাকি, তার জন্য আমি ক্ষমা চাই। এই নামটা (খন্দকার মোশতাক) উচ্চারণ করা নেহাতই আমার ইচ্ছার বাইরে ছিল। আমি বলব না- এটি আমি ইচ্ছাকৃত উচ্চারণ করেছি। নামটি যেহেতু উচ্চারিত হয়েছিল, সেটাই ছিল ভুল।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি যখন কথা বলেছি, তখন তো সব গুছিয়ে বলিনি। অনেক পত্রিকায় দেখছি, আমি লিখিত বক্তব্য দিয়েছি। কিন্তু আমার বক্তব্য লিখিত ছিল না। আমি একটা কাগজে কিছু পয়েন্ট নোট করে লিখে নিয়ে গিয়েছিলাম। পয়েন্টগুলো লিখেছিলাম এইচটি ইমামের ‘বাংলাদেশ সরকার, ১৯৭১’ বই থেকে। পুরো বক্তব্যের দুই-তিন শব্দ বা বাক্য ব্যবহার করলে, সামনে বা পিছনে না জানলে বক্তব্যকে অন্যভাবে ব্যাখ্যা করার সুযোগ আছে। আমার একটি বক্তব্যে যদি ‘স্লিপ অব টাং’ হয়ে থাকে, সেটাকে দিয়ে আমাকে পুরোপুরি মূল্যায়ন বা অন্যভাবে দেখা হয়, তাহলে আমার দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া আর কিছু বলার নাই।’ এদিকে, ‘খন্দকার মোশতাককে শ্রদ্ধা দেখানোয়’ বিকালে রাজু ভাস্কর্যে অধ্যাপক রহমত উল্লাহর কুশপুত্তলিকা দাহ করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। উল্লেখ্য, অধ্যাপক রহমত উল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের সঙ্গে যুক্ত। তিনি বিভিন্ন সময় নীল দল থেকে মনোনীত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট, সিন্ডিকেট, ডিন, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর