রংপুর বিভাগের লালমনিরহাট রেলওয়ে ডিভিশনের তিস্তা রেলসেতুসহ শতাধিক সেতুর মেয়াদকাল উত্তীর্ণ হয়েছে। ওইসব সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে চলছে ট্রেন। তবে রেল বিভাগ বলছে অধিকাংশ সেতুই মেরামত করা হয়েছে। এদিকে দুই সপ্তাহ আগে ঝুঁকিপূর্ণ তিস্তা রেল সেতুর পাশে আরেকটি সেতু নির্মাণের সমীক্ষা করেছে রেলের একটি টিম। রেল সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাট ও পাকশী দুটি রেল ডিভিশন নিয়ে পশ্চিমাঞ্চলীয় রেলওয়ে। এর মধ্যে লালমনিরহাট রেল বিভাগে রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী ও বগুড়া জেলার ওপর দিয়ে রেলপথ রয়েছে ৫ দশমিক ১ কিলোমিটার। এই রেল পথে সেতু রয়েছে প্রায় ৪১০টি। এর অধিকাংশই অবস্থা খুব নাজুক। এসব সেতুর মধ্যে শতাধিক সেতুর মেয়দোত্তীর্ণ হয়েছে অনেক আগেই। জানা গেছে, ২০১৭ সালে বন্যার সময় পশ্চিমাঞ্চলীয় রেলের ১২৫টির বেশি স্থানে রেল লাইনের ক্ষতি হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, লালমনিরহাট জেলায়। বন্যায় রেল লাইনের পাথর পানির তোড়ে ভেসে যায়। সেই সময় থেকে বেশ কয়েকটি রেল সেতুও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। এদিকে ১৮৯৯-১৯০০ সালে তিস্তা নদীর উপর রেলওয়ে সেতুটি নির্মিত হয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে অন্য একটি সেতু থেকে স্প্যান, গার্ডার ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করে ১৯৭২ সালে তা মেরামত করা হয়। সেতুটির মেয়াদ ১০০ বছর ধরা হলে ২০০০ সালে সেতুটি শত বছর পার করেছে। বর্তমানে সেতুটি মেয়াদোত্তীর্ণের ২২ বছর চলছে।
সেতুটি বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তবে আশার আলো এই মেয়াদোত্তীর্ণ তিস্তা রেলসেতু পাশেই আরেকটি নতুন সেতু নির্মাণ করা হবে। ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতুর পাশে আরেকটি সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে রেল বিভাগ। দুসপ্তাহ আগে লালমনিরহাটে একটি উচ্চ পর্যায়ের টিম এসেছিল। তারা সেতু পরিদর্শন শেষে সমীক্ষাও করে গেছেন। সমীক্ষা যাচাই শেষে তিস্তায় আরেকটি নতুন সেতুর মুখ দেখতে পাবে বৃহত্তর রংপুরবাসী।
সূত্রমতে, লালমনিরহাট রেল বিভাগের সেতুগুলো ব্রিটিশ আমলে নির্মিত। তখন এগুলো চুন-সুড়কি দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল। এগুলোর আয়ুষ্কাল ৬০ বছর এবং আরসিসি সেতুর মেয়াদ ধরা হয় ১০০ বছর। লালমনিরহাট রেল বিভাগের শতাধিক রেল সেতু বহু আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। তবে পার্বতীপুর থেকে পঞ্চগড় পর্যন্ত রেলসেতুগুলো নতুন করে মেরামত করা হয়েছে রেলসূত্র দাবি করেছে। সূত্রমতে আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেনগুলোকে ঘণ্টায় ৬৫ কিলোমিটার গতিতে চালাবার কথা। ওই গতিতে সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করলে ট্রেন ও যাত্রীদের অস্বাভাবিক ঝাঁকুনি খেতে হয়। এছাড়া মালবাহী ট্রেন সেতুর ওপর উঠলে সেতু ও ট্রেন দুটোই অত্যাধিক কাঁপে।রেলের লালমনিরহাট ডিভিশনার ইঞ্জিনিয়ার আহসান হাবিব বলেন, দুই সপ্তাহ আগে তিস্তা রেল সেতুর পাশে আরেকটি সেতুর সমীক্ষা করে গেছেন একটি দল। ডিভিশনে কতগুলো সেতু মেয়াদোত্তীর্ণ কিংবা ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে তা কাগজ না দেখে বলা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে তিনি বলেন অধিকাংশ সেতু মেরামত করা হয়েছে।