শিরোনাম
রবিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

বাড়ি ফিরতে টিকিট যুদ্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাড়ি ফিরতে টিকিট যুদ্ধ

গতকাল ট্রেনের ঈদের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। কমলাপুর রেলস্টেশনে টিকিটের জন্য উপচে পড়া ভিড় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দুই বছর করোনার বিধিনিষেধের কারণে অনেকেরই ঈদ করা হয়নি গ্রামের বাড়িতে। করোনা সংক্রমণ কমে যাওয়ায় আবারও গ্রামে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে ঈদ পালনের আশায় বুক বেঁধেছে মানুষ। তবে বিপত্তি বাধিয়েছে অগ্রিম টিকিট। লঞ্চের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে গেছে অধিকাংশ টিকিট। ২৬ এপ্রিলের পরের বাসের টিকিটও হাওয়া। গতকাল থেকে অনলাইনে ও স্টেশনে শুরু হয়েছে ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি। তবে শুরুতেই অনলাইনে টিকিট কিনতে গিয়ে সার্ভার জটিলতায় ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। আবার আগের দিন থেকে স্টেশনে শুয়ে-বসে কাটিয়েও টিকিট না পেয়ে ফিরে গেছেন অনেক যাত্রী। এদিকে যাত্রী ও বাস কাউন্টারের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৮, ২৯ ও ৩০ তারিখের টিকিটের চাহিদা বেশি। তবে ২৬ তারিখের পরের বাসের টিকিট অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে।

শুরুতেই রেলের সার্ভার ত্রুটি : বাস ও লঞ্চের টিকিট আগেই শেষ হয়ে যাওয়ায় শেষ ভরসা হিসেবে ট্রেনের টিকিটের অপেক্ষায় ছিল অধিকাংশ মানুষ। গতকাল সকাল ৮টা থেকে ঈদ যাত্রার ৫০ শতাংশ টিকিট অনলাইনে এবং বাকি ৫০ শতাংশ কাউন্টারে বিক্রি শুরু হয়। প্রথম দিন দেওয়া হয় ২৭ এপ্রিলের টিকিট। টিকিট কালোবাজারি ঠেকাতে এবার টিকিট কিনতে দেখাতে হচ্ছে জন্ম নিবন্ধন সনদ বা জাতীয় পরিচয়পত্র। তবে শুরুতেই সার্ভার ত্রুটির কারণে রেলের ই-টিকেটিং ওয়েবসাইটে ঢুকতে পারেননি যাত্রীরা। এ সময় ওয়েবসাইটে একটি বার্তা লিখে ধৈর্য ধরতে বলা হয়। পৌনে ৯টার দিকে সার্ভার ঠিক হলেও শেষ হয়ে যায় অনেক রুটের টিকিট। ক্ষুব্ধ অনেক যাত্রী ফেসবুকে প্রশ্ন তোলেন- ‘সার্ভার ত্রুটির কারণে ওয়েবসাইট বন্ধ ছিল। সেখানে টিকিট শেষ হয়ে যায় কীভাবে?’

এদিকে ২২-২৩ ঘণ্টা রেলস্টেশনে অপেক্ষা করেও সরাসরি টিকিট কাটতে পারেননি অনেকে। শনিবার থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার খবরে শুক্রবার দুপুর থেকেই রেলস্টেশনে ভিড় করতে থাকেন টিকিট প্রত্যাশীরা। সামনে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা থাকায় অনেক শিক্ষার্থী বইপত্র নিয়ে হাজির হন স্টেশনে। চাদর বিছিয়ে স্টেশনেই লেখাপড়া শুরু করেন। তবে শুক্রবার লাইনে দাঁড়িয়েও শনিবার টিকিট না পেয়ে পরের দিনের টিকিটের জন্য স্টেশনে আরও একটা দিন অপেক্ষা করতে দেখা গেছে অনেককে। গতকাল বিকালে গিয়ে যাত্রীদেরকে নিজেদের মধ্যে নাম ও মোবাইল নম্বর দিয়ে সিরিয়াল মেইনটেইন করতে দেখা গেছে। হাফিজ নামের এক যাত্রী বলেন, মশার কামড় খেয়ে সারারাত অপেক্ষা করেও টিকিট পাইনি। কতক্ষণ এক জায়গায় শুয়ে বসে থাকা যায়, তাই সবাই মিলে সিরিয়ালের ব্যবস্থা করেছি। যাতে চাইলে কেউ ঘুরে ফিরে এসে সিরিয়াল অনুযায়ী টিকিট পেতে পারেন।

রেল সূত্র জানায়, এবার রাজধানীর ৫টি স্থান থেকে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। কমলাপুর থেকে সমগ্র পশ্চিমাঞ্চলের ও খুলনা স্পেশাল টিকিট বিক্রি হবে। বিমানবন্দর স্টেশন থেকে বিক্রি হবে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী ট্রেনের টিকিট, তেজগাঁও থেকে বিক্রি করা হবে ময়মনসিংহ, জামালপুর ও দেওয়ানগঞ্জগামী ট্রেনের টিকিট, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে মোহনগঞ্জ ও হাওর এক্সপ্রেসের টিকিট এবং ফুলবাড়িয়া থেকে সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী ট্রেনের টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। এবার ঈদে ৬টি স্পেশাল ট্রেনসহ ৯২টি আন্তনগর ট্রেনের ট্রিপ বাড়ানো হয়েছে। ৬ জোড়া স্পেশাল ট্রেনগুলো হলো- চাঁদপুর স্পেশাল ১ ও ২, দেওয়ানগঞ্জ স্পেশাল, খুলনা স্পেশাল এবং সোলাকিয়া স্পেশাল ১ ও ২।

বাসের টিকিট আগেই শেষ : ১৫ এপ্রিল থেকে শুরু হয় বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি। অধিকাংশ কাউন্টার থেকে বলছে ২৬ তারিখের পরের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। বাসকর্মীরা বলছেন, অধিকাংশ মানুষ শেষের দিকে বাড়ি যাবে। কিন্তু, ওই সংখ্যক টিকিট আমাদের বাসগুলোতে নেই। এদিকে অগ্রিম টিকিট কাটতে গিয়ে বিভিন্ন কাউন্টারে গিয়ে হয়রানির শিকার হয়েছেন অনেকে। এক কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে অন্য কাউন্টারের কথা। তবে ২৬ এপ্রিলের আগের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে অনেক কাউন্টারে। বাধ্য হয়ে অনেকে আগে পরিবার বাড়ি পাঠিয়ে নিজে থেকে যাচ্ছেন পরে যাওয়ার জন্য।

লঞ্চে বিক্রি শুরুর আগেই টিকিট শেষ : সিট খালি থাকা সাপেক্ষ আগামী ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে লঞ্চের টিকিট বেচাকেনা। তবে টিকিট বিক্রির শুরুর দিনেই শেষ অধিকাংশ লঞ্চের টিকিট। ঢাকা-বরিশাল রুটের বিলাশবহুল বিভিন্ন লঞ্চের একটি কেবিনের ভাড়া সর্বনিম্ন ১ হাজার ৪০০ থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। ২২টি লঞ্চে কেবিনের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন হাজার। কিন্তু লঞ্চের অগ্রিম টিকিট বিক্রির দিনই সব কেবিনের টিকিট বিক্রি শেষ।

লঞ্চ কর্তৃপক্ষ বলছে, কেবিন সংখ্যার চেয়ে চাহিদা অন্তত চার গুণ। এ ছাড়া কেবিনের জন্য অনেক প্রভাবশালীর ফোনের কারণে সাধারণ মানুষকে কেবিন দিতেও বেগ পেতে হয়েছে বলে জানান অনেকে। বিপুল পরিমাণ যাত্রীর কারণে নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর