রবিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

ঈদে নৌযানগুলোয় জীবন রক্ষা সরঞ্জাম অপর্যাপ্ত

নিরাপত্তাহীনতায় দক্ষিণ-পশ্চিমের লাখো যাত্রী

রাহাত খান, বরিশাল

এবারের ঈদেও ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে বাড়ি ফিরছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের লাখ লাখ নৌযাত্রী। ঢাকা-বরিশাল নৌরুটের বড় নৌযানগুলোতে ৭০০ থেকে ১২০০ পর্যন্ত যাত্রী বহনের অনুমোদন থাকলেও ঈদের সময় ৩ থেকে ৪ হাজার যাত্রী পরিবহন করে তারা। অতিরিক্ত যাত্রীদের জন্য লঞ্চে থাকে না কোনো সুবিধা। মাঝপথে নৌ দুর্ঘটনা ঘটলেও জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জামও পাবেন না হাজারো যাত্রী। অগ্নিনির্বাপণেও নেই যথাযথ ব্যবস্থা। এ অবস্থায় অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই গোগাদানী হয়ে বাড়ি ফিরবেন ঘরমুখো যাত্রীরা। এদিকে সরকারি ছুটি দীর্ঘ হওয়ায় যাত্রীর চাপ সামাল দিতে ২৮ এপ্রিল থেকে ঢাকা-বরিশাল রুটের লঞ্চে স্পেশাল ট্রিপ (ডাবল ট্রিপ) শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রতি বছর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েক লাখ যাত্রী বাড়ি ফেরেন নৌপথে। তুলনামূলক কম ভাড়া, নিরাপদ ও আরামদায়ক হওয়ায় নৌপথে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তারা। এবারও নৌপথে বাড়ি ফিরতে উন্মুখ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ। এ লক্ষ্যে মধ্য রমজান থেকে লঞ্চের কেবিনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু করেছে নিজ নিজ কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া ঈদ উপলক্ষে দৃশ্যমান কোনো পূর্বপ্রস্তুতি দেখা যায়নি লঞ্চগুলোতে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাপ) সংস্থার পরিচালক রিয়াজুল কবির বলেন, এবারের ঈদে বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে ২৫ থেকে ২৬টি বড়-ছোট জাহাজ (লঞ্চ) যাত্রী পরিবহন করবে। ঢাকা প্রান্ত থেকে প্রতিদিন ১৬ থেকে ২০টি জাহাজ বরিশালের উদ্দেশে চলাচল করবে। ঈদের আগে ২০টি জাহাজে গড়ে প্রতিদিন ৬০ হাজার যাত্রী ঢাকা থেকে বরিশালে চলাচল করবেন। সে হিসাবে প্রতিটি জাহাজে গড়ে ৩ হাজার যাত্রী পরিবহন করা হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা-বরিশাল রুটে সর্বাধিক ১ হাজার ৪৫০ জন যাত্রী পরিবহনের বৈধতা রয়েছে এমভি কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের। একই রুটে নতুন সংযোজিত এমভি প্রিন্স আওলাদ-১০ লঞ্চে বৈধ যাত্রী ধারণক্ষমতা ১ হাজার ১৯ জন। লাইফ বয়া আছে ১৫৭টি, ফায়ার বাকেট ৯টি, অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র ৩৫টি ও হস্তচালিত পাম্প ১টি। একই রুটের এমভি সুন্দরবন-১১ লঞ্চে বৈধ যাত্রী ধারণক্ষমতা ১ হাজার ৯১ জন। লাইফ বয়া আছে ১৭৩টি, ফায়ার বাকেট ৩০টি ও অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র আছে ২৮টি। নিয়ম অনুযায়ী একটি লাইফ বয়ার লুপস (ঝুলন্ত রশি) ধরে সর্বাধিক চারজন যাত্রী সর্বোচ্চ ২৪ ঘণ্টা পানিতে ভেসে থাকতে পারেন। কিন্তু ঈদের সময় যাত্রীদের তুলনায় অর্ধেক লাইফ বয়াও রাখা হয় না কোনো লঞ্চে।

বরিশাল-ঢাকা রুটের এমভি সুন্দরবন-১১ লঞ্চের প্রথম শ্রেণির মাস্টার দেলোয়ার হোসেন বলেন, ঈদের সময় কোনো লঞ্চে ৩ থেকে ৪ হাজার যাত্রীও বহন করা হয়। কিন্তু সে তুলনায় লাইফ বয়া রাখা হয়নি কোনো লঞ্চে। শুধু বয়া নয়, লঞ্চগুলোতে অন্য সুরক্ষাসামগ্রীও কম আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে মাঝ নদীতে চলন্ত লঞ্চে আগুনের ঘটনা ঘটলে আপৎকালীন সময়ে কে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র চালাবে, ফায়ার বাকেট ব্যবহার করবে কে আর হস্তচালিত পাম্প দিয়ে পানি ¯ন্ডেপ্র করবে কে এমন কোনো পূর্বপ্রস্তুতি নেই কর্তৃপক্ষের।

তবে সুরভী নেভিগেশন কোম্পানির পরিচালক ও যাপ নেতা রিয়াজুল কবির বলেন, ঝালকাঠিতে লঞ্চে অগ্নিকান্ডের পর বিভিন্ন কোম্পানি তাদের লঞ্চে অগ্নিনির্বাপণ মহড়া করেছে। আপৎকালীন সবার দায়িত্ব ভাগাভাগি করে দেওয়া হয়েছে। তিনি স্বীকার করেন, ঈদ মৌসুমে যত যাত্রী পরিবহন করা হয় ওই সংখ্যক যাত্রীদের জন্য প্রয়োজনীয় লাইফ বয়ার ব্যবস্থা থাকে না। এত সংখ্যক জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম রাখার জায়গা লঞ্চে নেই বলে দাবি তার।

বিআইডব্লিউটিএ বরিশালের যুগ্ম-পরিচালক (বন্দর ও পরিবহন) মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঈদের সময় লঞ্চগুলোতে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রীদের জন্য লাইফ বয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। লঞ্চ মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, এবারের ঈদে প্রস্তুতি হিসেবে নৌপথের বিভিন্ন স্থানে বয়া ও বিকনবাতি স্থাপন এবং পন্টুন ও গ্যাংওয়ে মেরামত করা হয়েছে। এ ছাড়া নদীবন্দরে ভ্রাম্যমাণ আদালত, মেডিকেল টিম এবং ফায়ার সার্ভিসও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর