বুধবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

ব্যাংক ঘিরে সক্রিয় প্রতারক চক্র

ভিতরেই ওত পেতে থাকে চক্রের সদস্যরা

শাহ দিদার আলম নবেল, সিলেট

ঈদ এলেই সিলেটের ব্যাংকিং খাতে বেড়ে যায় ব্যস্ততা। প্রবাস থেকে স্বজনদের পাঠানো রেমিট্যান্স নিতে ভিড় করেন লোকজন। এ ছাড়া ঈদের কেনাকাটার জন্যও বেড়ে যায় লেনদেন। তাই প্রতিবছর ব্যাংক ঘিরে সক্রিয় হয়ে ওঠে অপরাধী চক্র। ছিনতাই ও প্রতারণার নানা কৌশল বেছে নেয় ওই চক্রের সদস্যরা। এ বছর ঈদকে সামনে রেখে ব্যাংক ঘিরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে প্রতারক চক্র। ব্যাংকের বাইরে ও ভিতরে নানা কৌশলে তারা গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা। প্রতারিত হওয়ার বিষয়টি গ্রাহকের ব্যক্তিগত- এমন যুক্তি দেখিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষও এর দায় নিতে চান না। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গ্রাহকদের অসচেতনতার কারণে প্রতারণার ঘটনা ঘটায় তারাও আইনের আশ্রয় নিতে চান না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, যে কৌশলে প্রতারণার ঘটনা ঘটছে তাতে গ্রাহকরা সচেতন না হলে তা রোধ করা কঠিন। আর এ ব্যাপারে ব্যাংক কর্তৃপক্ষেরও উচিত নজরদারি আরও বাড়ানো। গত ২১ এপ্রিল সাউথ ইস্ট ব্যাংক উপশহর শাখায় খুচরা নোট আনতে যায় ‘দুধওয়ালা’ নামক মিষ্টান্ন উৎপাদনকারী একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী হৃদয় দেব। ব্যাংকের নিচে যাওয়ার পর খুচরা নোট এনে দেওয়ার কথা বলে কৌশলে ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্রের ওই সদস্য। এ ঘটনায় পুলিশে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ‘দুধওয়ালা’ কর্তৃপক্ষ। দুধওয়ালার পরিচালক শাকিল জামান জানান, ‘প্রতারণার ঘটনার পর আমরা ব্যাংকে গিয়েছিলাম। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা পাইনি। সিসি টিভির ফুটেজ দেখার জন্য দুই হাজার টাকা জমা দিয়ে আবেদন করতে হয়েছে।’ উপশহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মিল্টন রায় চৌধুরী জানান, দুধওয়ালা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর তিনি ব্যাংকে গিয়েছেন। কিন্তু তাৎক্ষণিক সিসি টিভির ফুটেজও দিতে অস্বীকৃতি জানায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এসআই মিল্টন জানান, এর আগে আরেকটি প্রতারণার অভিযোগ পেয়েছেন তিনি। ওই ঘটনাটি ঘটেছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক উপশহর শাখায়। ব্যাংকের ওই শাখায় এক নারী টাকা তোলার জন্য এসেছিলেন। ব্যাংকে ভিড় থাকায় তিনি অপেক্ষা করছিলেন। ওই সময় স্যুট-টাই পরা এক ব্যক্তি এসে নিজেকে ব্যাংক কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে সহযোগিতা করার কথা বলে তার কাছ থেকে চেক নিয়ে যায়। এরপর টাকা তুলে কৌশলে সটকে পড়ে ওই প্রতারক। এসআই মিল্টন বলেন, ‘প্রতারক চক্রের সদস্যরা ব্যাংকের ভিতর ও বাইরে অবস্থান নিয়ে অপকর্ম করে থাকে। তাই গ্রাহকদের নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যাংকগুলোর আরও নজরদারি বাড়ানো উচিত। ব্যাংকের ভিতর ও আশপাশে প্রতারণার পাশাপাশি ছিনতাইকারীদেরও চোখ থাকে ব্যাংকে আসা লোকজনের দিকে।

ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে নিয়ে যাওয়ার সময় ছিনতাইয়ের শিকার হন অনেকে। নগরীর বালুচরের কামাল আহমদ চৌধুরী জানান, একটি ব্যাংকের জিন্দাবাজার শাখা থেকে টাকা উত্তোলন করে রিকশাযোগে তিনি বাসায় ফিরছিলেন। টিভি গেটের কাছে যাওয়ার পর একটি মোটরসাইকেলে দুজন ছিনতাইকারী এসে তার গতিরোধ করে সঙ্গে থাকা টাকা ছিনিয়ে নেয়। কামাল আহমদ জানান, টাকা উত্তোলন করে বের হওয়ার পর মোটরসাইকেল আরোহী ওই দুই ছিনতাইকারীকে তিনি ব্যাংকের বাইরে দেখেছেন। তার ধারণা ব্যাংক থেকে অনুসরণ করে এসে ছিনতাইকারীরা তার টাকা ছিনতাই করেছে।

তবে ব্যাংককে ঘিরে প্রতারণার কোনো অভিযোগ জানা নেই বলে মন্তব্য করেছেন সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মো. আজবাহার আলী শেখ। তিনি বলেন, ব্যাংকে টাকা জমা বা উত্তোলন করতে এসে প্রতারণার শিকার হয়েছেন এরকম কোনো অভিযোগ কেউ করেনি। তবে গ্রাহকরা যাতে নিরাপদে লেনদেন করে গন্তব্যে ফিরতে পারেন এ ব্যাপারে মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সব ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে, কোনো গ্রাহক বড় অংকের টাকা উত্তোলন করলে পুলিশকে অবগত করতে। পুলিশের সহযোগিতা চাইলে ওই গ্রাহককে নিরাপত্তা দিয়ে তার গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর