শিরোনাম
শুক্রবার, ৬ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

তামাকে ৩৯ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের প্রস্তাব

রাজধানীতে এক কর্মশালায় এ প্রস্তাব দিয়েছে তামাকবিরোধী গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

তামাকপণ্য ও বিড়ি সিগারেটে কর বাড়ালে ৩৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকার রাজস্ব পাওয়া যাবে বলে তামাকবিরোধী একটি বেসরকারি সংস্থার প্রস্তাবে ওঠে এসেছে। ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছেÑ যদি বাংলাদেশ সরকার ২০২২-২৩ অর্থবছরে সুপারিশ অনুযায়ী তামাকপণ্যের বিদ্যমান করব্যবস্থা সংস্কার করে, তাহলে চলতি অর্থবছরের চেয়ে সম্পূরক শুল্ক, স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ এবং ভ্যাট বাবদ ৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জিত হবে। এর ফলে সিগারেট খাত থেকে প্রায় ৩০ শতাংশ বাড়তি রাজস্ব আয় হবে বলে  জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

আগামী অর্থবছরের জন্য রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য বাড়াতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)কে উদ্দেশ্য করে সম্প্রতি রাজধানীতে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় এ প্রস্তাবটি দিয়েছে তামাকবিরোধী গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান)। চলতি অর্থবছর তামাক খাত থেকে ৩০ হাজার ২০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের প্রত্যাশা করছে সরকার। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়ের বলেন, প্রতিবছর সরকার বাড়তি রাজস্ব আয়ের জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে। কেবল তামাক খাতে কর সংস্কারের মাধ্যমে ৩৯ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় করা সম্ভব।

এ বি এম জুবায়ের আরও বলেন, তামাক খাতে রাজস্ব আহরণে দেশে কোনো নীতিমালা নেই। প্রতিবছর বাজেট তৈরির আগে এনবিআর তামাক কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসে তাদের প্রস্তাবকে অগ্রাধিকার দিয়ে তামাকপণ্যের কর ও মূল্য নির্ধারণ করে থাকে। তিনি তামাকের ওপর সুনির্দিষ্ট করারোপে প্রজ্ঞার প্রস্তাবটি অনুসরণের জন্য এনবিআরের প্রতি আহ্বান জানান।

যা আছে প্রজ্ঞার প্রস্তাবে : প্রতিষ্ঠানটি সিগারেটের ক্ষেত্রে প্রতি ১০ শলাকা প্যাকেটের নিম্নস্তরে খুচরা মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৩২.৫০ টাকা, মধ্যমস্তরে খুচরা মূল্য ৭৫ টাকা নির্ধারণ করে ৪৮.৭৫ টাকা, উচ্চস্তরে খুচরা মূল্য ১২০ টাকা নির্ধারণ করে ৭৮.০০ টাকা এবং প্রিমিয়ামস্তরে ন্যূনতম খুচরা মূল্য ১৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৯৭.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করে। অপরদিকে ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১১.২৫ টাকা এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৯ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করে।  এ ছাড়া প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৪৫ টাকা নির্ধারণ করে ২৭ টাকা এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করে সংগঠনটি। এর ফলে সিগারেটের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৬৫ শতাংশ, বিড়ির ক্ষেত্রে ৪৫ শতাংশ এবং ধোঁয়াবিহীন তামাক, জর্দা ও গুলের ক্ষেত্রে সেটি ৬০ শতাংশ হবে বলে জানানো হয়। সব ক্ষেত্রেই খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল থাকবে।

কর সংস্কারের ফলে যা হবে : প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী তামাকের ওপর সুনির্দিষ্ট করারোপ হলে শুধু রাজস্ব আয় বাড়বে তাই নয়; কর বাড়ানোর কারণে যেহেতু সিগারেটের দাম বাড়বে-ফলে এতে ধূমপায়ীর সংখ্যাও হ্রাস পাবে। প্রতিষ্ঠানটি তথ্য-উপাত্ত দিয়ে দেখিয়েছে তামাক খাতে প্রস্তাবিত কর সংস্কারের ফলে প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ প্রাপ্ত বয়স্ক ধূমপান থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত হবে এবং আট লাখ ৯৫ হাজারের অধিক তরুণ ধূমপান শুরু করতে নিরুৎসাহিত হবে।

প্রজ্ঞার হেড অব প্রোগ্রাম হাসান শাহরিয়ার বলেন, দেশে বর্তমানে তামাকে কর কাঠামো অত্যন্ত  জটিল। সিগারেটের ওপর বহুস্তর কর কাঠামো   চালু থাকায় বাজারে কম দামি সিগারেট সহজলভ্য হচ্ছে। এর ফলে ধূমপায়ীর ব্যবহৃত সিগারেটের  দাম বাড়লে অপেক্ষাকৃত কম দামি সিগারেট    সেবন করার সুযোগ পাচ্ছে। এ জন্য তিনি   প্রতিবছর মূল্যস্ফীতি হিসেবে ধরে, এর সঙ্গে তামাকের ওপর সুনির্দিষ্ট করারোপের সুপারিশ করেন। যুক্তরাজ্য ও ফিলিপাইনে এ ধরনের করব্যবস্থা চালু আছে বলেও জানান তিনি। 

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর