বুধবার, ১১ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

আসামিপক্ষ হাই কোর্টে হয়নি সাক্ষ্যগ্রহণ

পুলিশ হেফাজতে রায়হান হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) বন্দরবাজার ফাঁড়িতে হেফাজতে রায়হান আহমদ হত্যা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের নির্ধারিত তারিখ ছিল গতকাল। এজন্য কারাগার থেকে আসামিদের আদালতে নিয়ে আসা হয়। তবে মহানগর দায়রা জজ আদালতের কার্যক্রম শুরুর পর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা এ মামলায় অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে যাওয়ার কথা জানান। অবশ্য আদালত সাক্ষ্যগ্রহণের সিদ্ধান্ত দেয়। কিন্তু একজন আইনজীবীর মৃত্যুতে কোর্ট রেফারেন্স থাকায় পরে আর সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। আজ ও আগামীকালও সাক্ষ্য গ্রহণের ধার্য তারিখ রয়েছে।

গতকাল দুপুর ১২টার দিকে রায়হান হত্যা মামলার আসামি বরখাস্ত এসআই আকবর হোসেন ভুঁইয়াসহ অন্যদের কারাগার থেকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মহানগর দায়রা জজ মো. আবদুর রহিমের আদালতে শুরু হয় এ মামলার কার্যক্রম। কিছুক্ষণ পর সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি নওশাদ আহমেদ চৌধুরী সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেন, সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য রায়হানের মা সালমা বেগম, স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নী ও চাচাশ্বশুর আদালতে হাজির ছিলেন।

 কিন্তু তাদের সাক্ষ্য নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘কারাগার থেকে আসামিদের আসতে একটু দেরি হয়েছে এবং একজন আইনজীবীর মৃত্যুতে কোর্ট রেফারেন্স ছিল। এ ছাড়া আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আদালতে একটি দরখাস্ত দিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন এ মামলার চার্জ গঠনের বিরুদ্ধে তারা হাই কোর্টে রিভিশনে গিয়েছেন। কিন্তু মামলার কার্যক্রম বন্ধ বা স্থগিত এ মর্মে কোনো কিছু আনেননি। শুধু তারা একটা লইয়ার সার্টিফিকেট দাখিল করেছেন। পরে আদালত বলেছেন আমি সাক্ষ্য নেব এবং আপনাদের পিটিশনটাও দেখব। পরে দেখা গেল আজ (মঙ্গলবার) আর কিছু সম্ভব হচ্ছে না কোর্ট রেফারেন্সের কারণে। পরে আদালতের কার্যক্রম মুলতবি করা হয়।’

তিনি জানান, রায়হান হত্যা মামলায় হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইন তৎসহ ৩০২ দন্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারা ও ২০১ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। কিন্তু আসামিপক্ষ শুধু হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে মামলাটি চালাতে চান। এজন্য অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে তারা হাই কোর্টে গেছেন।

এর আগে ১৮ এপ্রিল সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আবদুর রহিমের আদালতে ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে রায়হান হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়। এরও আগে ১২ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের তারিখ থাকলেও তা পিছিয়ে নেওয়া হয়েছিল।

২০২০ সালের ১১ অক্টোবর ভোরে সিলেট শহরের আখালিয়ার এলাকার বাসিন্দা রায়হান আহমদকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তিনি সেখানে মারা যান। পরদিন তার স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নী কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্তে প্রথমে পুলিশ ছিল। পরে সে বছরের ১৩ অক্টোবর মামলাটি স্থানান্তর করা হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই)। গত বছরের ৫ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক আওলাদ হোসেন আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ১ হাজার ৯০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

যে ছয়জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয় তার পাঁচজনই পুলিশ সদস্য। তাদের সবাইকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তারা হলেন- বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভুঁইয়া, এসআই হাসান উদ্দিন, এএসআই আশেক এলাহী, কনস্টেবল টিটুচন্দ্র দাস ও হারুনুর রশিদ। অভিযুক্ত অন্যজন আবদুল্লাহ আল নোমান, যার বাড়ি কোম্পানীগঞ্জে। তার বিরুদ্ধে ঘটনার পর ভিডিও ফুটেজ গায়েব করার অভিযোগ রয়েছে। এ ছয়জনের বিরুদ্ধেই অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। অভিযুক্ত পাঁচ পুলিশ সদস্য কারাগারে থাকলেও নোমান এখনো পলাতক। সম্প্রতি গণমাধ্যমকে নোমান জানিয়েছেন তিনি কয়েকটি দেশ ঘুরে বর্তমানে ফ্রান্সে অবস্থান করছেন। সেখানে তিনি নাগরিকত্ব পাওয়ার চেষ্টায় রয়েছেন।

প্রসঙ্গত, রায়হান হত্যা ঘটনার পর পালিয়ে যান এসআই আকবর। ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর দুপুরে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার লক্ষ্মীপ্রসাদ ইউনিয়নের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকে এসআই আকবর হোসেন ভুঁইয়াকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন ১০ নভেম্বর তাকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি চান তদন্ত কর্মকর্তা; আদালত সাত দিনই মঞ্জুর করে। রিমান্ড শেষে ১৭ নভেম্বর তাকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত আকবরকে কারাগারে পাঠান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর