শুক্রবার, ১৩ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

ওসমানী ঘিরে মেগা পরিকল্পনা

বদলে যাচ্ছে হাসপাতালের সেবার মান, কমছে দুর্ভোগ

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

ওসমানী ঘিরে মেগা পরিকল্পনা

সিলেট বিভাগের ১ কোটি মানুষের উন্নত চিকিৎসার ভরসাস্থল এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। হাসপাতালের পরিবেশ, অপ্রতুল সেবা ও মান নিয়ে একসময় ছিল বিস্তর অভিযোগ। দালালদের দৌরাত্ম্যের কাছে অসহায় ছিলেন রোগীরা। সেই অবস্থার উত্তরণে ওসমানী হাসপাতাল ঘিরে নেওয়া হয়েছে মেগা পরিকল্পনা। একদিকে চলছে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, অন্যদিকে সেবার মান ও সুবিধা বাড়ানোর চেষ্টা। সব মিলিয়ে চিকিৎসাসেবায় নতুন করে আশার আলো জাগাচ্ছে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসন থেকে নির্বাচিত হওয়ার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান ড. এ কে আবদুল মোমেন। এরপর থেকে তিনি সিলেটের স্বাস্থ্যসেবা খাত ঢেলে সাজাতে নানা পরিকল্পনা নেন। নতুন হাসপাতাল নির্মাণের পাশাপাশি তিনি জোর দেন ওসমানী হাসপাতালের সেবার মানোন্নয়নে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে হাসপাতালে পরিচালক হিসেবে যোগ দেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন ছাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মাহবুবুর রহমান ভুইয়া। তার যোগদানের পর হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ সেবার মানোন্নয়নে আরও গতি আসে। ডা. মাহবুবুর রহমান যোগদানের পর অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা নিশ্চিত ও হাসপাতালকে দালালমুক্ত করার কাজে হাত দেন। হাসপাতালের কর্মচারীদের দিয়ে শুরু করেন গোয়েন্দা নজরদারি। দালালদের চিহ্নিত করতে হাসপাতালের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ইউনিফর্ম, নেমপ্লেট ও আইডি কার্ড পরিধান বাধ্যতামূলক করা হয়। এতে ধরা পড়ে দালাল সিন্ডিকেটের অনেক সদস্য। ফলে কমে আসে দালালের উৎপাত। খাবারের মানোন্নয়ন, হাসপাতালের ভিতরের অবৈধ দোকান ও হকার উচ্ছেদ, পরিচ্ছন্নতা বৃদ্ধি, নির্দিষ্ট দিন ও সময়ের বাইরে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের হাসপাতালে প্রবেশ ও রোগীদের প্রেসক্রিপশনের ছবি তোলায় নিষেধাজ্ঞা জারি ও সেবা কার্যক্রম মনিটরিংয়ে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। বর্তমান পরিচালকের এই উদ্যোগ রোগীদের প্রশংসা কুড়ায়। গেল কয়েক মাসে হাসপাতালে নতুন দুটি সার্জারি ওয়ার্ড চালু করা হয়। চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সক্রিয় রাখতে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান, উপপরিচালক মো. আবদুল গফ্ফার এবং সহকারী পরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ ও ডা. মাহবুবুল আলম মিলে প্রতিদিন হাসপাতালে রাউন্ড  বের হচ্ছেন।

এ ছাড়া বেশির ভাগ টেস্টের ল্যাব ও বিভাগ ২৪ ঘণ্টা চালু রাখা, হাসপাতালের অকেজো ওটি সংস্কার ও মেরামত, বিভাগীয় প্রধানের অনুমতি ব্যতীত পরীক্ষার জন্য কোনো রোগীকে বাইরে না পাঠাতে পরিচালকের কড়াকড়ি নির্দেশনায় বেড়েছে হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ সেবার মান।

এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের বিশেষ উদ্যোগে ওসমানী হাসপাতালের নতুন ১০ তলা আউটডোর ভবনে মেডিসিন, নিউরো মেডিসিন, চর্মরোগসহ আরও কয়েকটি বিভাগ ও ১০ শয্যার একটি আইসিইউ ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে। করোনাকালীন রোগীদের সেবা নিশ্চিতে ১০ হাজার লিটার অক্সিজেন রিজার্ভারের জায়গায় ৩০ হাজার লিটার রিজার্ভের ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাসপাতালে একটি অক্সিজেন জেনারেটর বসানোর কাজও চলমান রয়েছে। ওসমানী হাসপাতালে বর্তমানে ১৫ তলা একটি ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। ওই ভবন নির্মাণের পর সেখানে কিডনি, ক্যান্সার ও কার্ডিয়াক রোগীদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভুইয়া। হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের পেছনে আরও একটি ১০ তলা ভবন নির্মাণ করে সম্প্রসারণ করা হয়েছে সেবা কার্যক্রম। হাসপাতালে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের কাজও চলমান রয়েছে। ওসমানী হাসপাতালে রোগীর চাপ কমাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন ওসমানী হাসপাতাল ইউনিট-২ নির্মাণের উদ্যোগ নেন। তার উদ্যোগে বর্তমান সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের পাশে একটি জেনারেল হাসপাতাল তৈরিরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর