রবিবার, ১৫ মে, ২০২২ ০০:০০ টা
সম্পাদক পরিষদের সেমিনার

স্বাধীন সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইন পর্যালোচনায় কমিটি গঠন

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বাধীন সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে বিদ্যমান এবং নতুন ও পুরনো আইন পর্যালোচনা করে একটি সমন্বিত বক্তব্য তৈরির জন্য কমিটি গঠন করা হবে। বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে গতকাল সম্পাদক পরিষদ আয়োজিত সেমিনারে এ ঘোষণা দিয়েছেন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম। অনুষ্ঠানে বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে স্বাধীন সাংবাদিকতার বিকাশের সবচেয়ে বড় অন্তরায় হিসেবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে চিহ্নিত করেন সাংবাদিক নেতারা। এ ছাড়া প্রস্তাবিত নতুন আইনগুলোতে স্বাধীন সাংবাদিকতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন ধারা-উপধারা সংযোজন নিয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বক্তারা আরও বলেন, সংবাদ মাধ্যম ও সাংবাদিকদের পাশে নাগরিক সমাজ না দাঁড়ালে দেশে স্বাধীন সাংবাদিকতা রক্ষা করা সম্ভব নয়।  ‘ডিজিটাল নজরদারিতে সাংবাদিকতা’ শিরোনামে আয়োজিত এ সেমিনারে মাহফুজ আনামের সভাপতিত্বে ও সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হানিফ মাহমুদের (সম্পাদক, বণিক বার্তা) সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নোয়াবের সভাপতি এ কে আজাদ, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, সম্পাদক পরিষদের সহ-সভাপতি নিউ এজ সম্পাদক নুরুল কবীর ও ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, সম্পাদক পরিষদের কোষাধ্যক্ষ ও মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, বিএফইউজের একাংশের বর্তমান সভাপতি ওমর ফারুক, অপরাংশের সভাপতি এম আবদুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী এবং ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন, প্রতিদিনের বাংলাদেশ সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি, ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন এবং বগুড়া থেকে প্রকাশিত করতোয়া সম্পাদক মোজাম্মেল হক লালু। মাহফুজ আনাম বলেন, একটা প্রশ্ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। সাংবাদিকরা কী করেন, কেন তাদের ধরার জন্য এত আইন? সেই ব্রিটিশ আমলের আইন দিয়ে সাংবাদিকদের এ সময়ে এসেও ধরা হচ্ছে। মানহানির আইন, আদালত অবমাননার আইন দিয়ে সাংবাদিকদের ধরা হচ্ছে। এরপর নতুন করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন হয়েছে। এই আইন সাংবাদিকতার বিকাশের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অন্তরায় হিসেবে দেখা দিয়েছে। এরপর ডাটা প্রটেকশন অ্যাক্ট হচ্ছে, ওটি নিয়ে প্রবিধানামালা হচ্ছে, দেখা যাচ্ছে সব ক্ষেত্রেই সাংবাদিকদের ধরার ব্যবস্থা রাখাটাই মুখ্য হয়ে যাচ্ছে। এখন অবস্থাটা এমন হচ্ছে ডিজিটাল অপরাধ বন্ধের জন্য আইন যতটা না ব্যবহার হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার হচ্ছে। নোয়াব সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভীষণ উদ্বেগের সৃষ্টি করছে। মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশে^র বিভিন্ন দেশে ৫৭ ধরনের আইন করা হয়েছে সাংবাদিকদের নজরদারিতে নিয়ে আসার জন্য। তিনি বলেন, ১৯২৩ সালের অফিস সিক্রেটস অ্যাক্ট দিয়ে কিছু দিন আগে সাংবাদিকতা করার জন্য সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। নুরুল কবীর বলেন, কোনো সরকারের আমলেই সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীন পথচলা নিরঙ্কুশ ছিল না। শ্যামল দত্ত বলেন, ডিজিটাল নজরদারির এই সময়ে এসে সত্যিই কি আমরা মুক্ত সাংবাদিকতা করতে পারছি? মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, বর্তমান সময়ে ‘সেলফ সেন্সরশিপ’ প্রকট হয়ে উঠেছে। ওমর ফারুক বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যেসব ধারা সম্পর্কে সাংবাদিকরা আপত্তি দিয়েছিল তা সরকার মানেনি। এম আবদুল্লাহ বলেন, সাংবাদিকদের অনৈক্যের কারণেই সরকার একের পর এক স্বাধীন সাংবাদিকতার পথ রুদ্ধ করার আইন করতে পারছে। এ কারণে সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই। নজরুল ইসলাম মিঠু বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো আইনও সাংবাদিকতার বিকাশের পথেই বড় বাধা হিসেবে দাঁড়াচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর