বুধবার, ১৮ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে কী হবে আগামী বর্ষায়

পানি নিষ্কাশনের প্রধান কয়েকটি খালের মুখে বাঁধ । সরু হয়ে গেছে খাল

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে কী হবে আগামী বর্ষায়

সামান্য বৃষ্টিতে ডুবে যায় চট্টগ্রামের নিম্নাঞ্চল। বর্ষা মৌসুমে কী হবে তা নিয়ে এখনই মহাদুশ্চিন্তায় নগরবাসী -বাংলাদেশ প্রতিদিন

চট্টগ্রামে ৫ মে মাত্র ২৫ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। ওই বৃষ্টিতেই প্লাবিত হয় নগরের অনেক নিম্নাঞ্চল। অথচ গত বছরের ১ জুন ১২৬ মিলিমিটার এবং ১ জুলাই চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ ২১৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে আবহাওয়া অফিস। বৃৃষ্টিতে টইটম্বুর অবস্থা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এখন পানি নিষ্কাশনের প্রধান কয়েকটি খালের মুখে বাঁধ এবং খাল সরু হয়ে গেছে। তাই অতীতের মতো রেকর্ড সৃষ্টি করা বৃৃষ্টি হলে কী হবে চট্টগ্রাম নগরের প্রায় ৭০ লাখ বাসিন্দার। ফলে এখন থেকেই নগরবাসীর মধ্যে শঙ্কা-আতঙ্ক ভর করেছে। তদুপরি ৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সর্বশেষ জলাবদ্ধতাবিষয়ক সমন্বয় সভায়ও বাঁধ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল।

জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরের অভিশাপখ্যাত জলাবদ্ধতা নিরসনে তিনটি সংস্থা ১০ হাজার কোটি টাকার পৃথক চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে সিডিএ ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার মেগা প্রকল্প এবং ২ হাজার ৩১০ কোটি টাকা ব্যয়ে চাক্তাই খাল থেকে কর্ণফুলী নদীর তীর কালুরঘাট সেতু পর্যন্ত সাড়ে আট কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ১ হাজার ৩৬২ কোটি ৬২  লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করছে বহদ্দারহাট থেকে বারইপাড়া হয়ে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত ২ দশমিক ৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৬৫ ফুট প্রস্থের একটি নতুন খাল।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ১ হাজার ৬২০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করছে ‘চট্টগ্রাম মহানগরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ জলাবদ্ধতা নিষ্কাশন উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প। কিন্তু প্রকল্পগুলোর আশানুরূপ অগ্রগতি নেই। ফলে বর্ষা এলেই সঙ্গে নিয়ে আসে চরম আতঙ্ক-ভয়, দুর্যোগ। চসিকের মেয়র (ভারপ্রাপ্ত) মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের অধীনে বর্তমানে আটটি খাল থেকে বাঁধ ও মাটি অপসারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া চসিকও নিয়মিত খাল থেকে মাটি অপসারণসহ পানি নিষ্কাশনের মতো সংস্কার কাজ চলমান রেখেছে। মেগা প্রকল্পের কাজটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত জলাবদ্ধতা নিরসন হবে না। তবে চসিক সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে বর্ষায় পানি দ্রুত খাল হয়ে কর্ণফুলী নদীতে নেমে যায়। বিষয়টা কঠোরভাবে তদারকি করা হচ্ছে।

চসিক সূত্রে জানা যায়, নগরে ছোট-বড় মোট ৫৭টি খাল আছে। এর মধ্যে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের অধীনে ৩৬টি খাল খনন-সংস্কার কাজ চলছে। বাকি খালগুলো চসিকের নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে পরিষ্কার করার কথা থাকলেও তা হয়নি। তবে কয়েক মাস আগে থেকে চসিক খাল পরিষ্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করে। অন্যদিকে নগরের ৪১ ওয়ার্ডে খাল-নালা আছে ১ হাজার ১৩৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে নিরাপত্তাবেষ্টনী ছাড়াই খালের পাড় রয়েছে ১৯ কিলোমিটার। উন্মুক্ত নালা রয়েছে ৫ হাজার ৫২৭টি স্থানে। বর্ষাকালে এসব নালাও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। গত এক বছরে নালা ও খালে পড়ে মারা গেছেন পাঁচজন। খোঁজ মেলেনি একজনের। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় খালের পাড়ে প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণের জন্য খালে বাঁধ দেওয়া হয়। এ কারণে পানি চলাচলের পথ সরু হয়ে যায়। অনেক জায়গায় ভরাট হয়ে যায় খাল। আবার বাঁধের কারণে খালের সঙ্গে সংযুক্ত নালার পথ বন্ধ হয়ে আছে। চাক্তাই খাল, বিবি মরিয়ম খাল ও রাজা খালে আছে মাটির স্তূপ। ২ নম্বর গেট থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত চশমা খালের বিভিন্ন এলাকায়, বহদ্দারহাট থেকে উত্তর দিকের মির্জা খালের বিভিন্ন এলাকায়, চান্দগাঁও এলাকার আরাকান সড়কের পাশ দিয়ে যাওয়া ডোম খালের একাংশসহ বিভিন্ন স্থানে দেওয়া প্রতিরোধ দেয়াল এখনো আছে। এ কারণে সামান্য বৃষ্টিতেও তৈরি হয় জলাবদ্ধতা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর