বৃহস্পতিবার, ১৯ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নাম ভাঙিয়ে কোটি টাকা আত্মসাৎ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে সখ্যতা রয়েছে বলে প্রচারণা চালাতো চক্রটি। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১০-১২ ভাগ অগ্রিম অর্থ আদায় করত। বিশ্বস্ততা অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নাম ও ছবি নিজেদের মোবাইল ফোনে সেভ করে কথা বলত। একপর্যায়ে কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ভুয়া দালিলিক চুক্তিও সম্পন্ন করত। চক্রটি গত ৩ বছরে এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে অন্তত ২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারির পর গত মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টন এলাকা থেকে র‌্যাব-৩ ও এনএসআইয়ের যৌথ অভিযানে চক্রের মূলহোতাসহ দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন- মনসুর আহমেদ ও মো. মহসিন চৌধুরী। তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন দলিল ও ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট উদ্ধার করা হয়। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, চক্রের সদস্যদের মোবাইল নম্বর মূলহোতা মনসুর ও তার সহযোগী মহসিনের মোবাইলে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের নাম ও ছবি দিয়ে সেভ করে। পরবর্তীতে তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ পাইয়ে দেওয়ার বিষয়ে চ্যাটিং করে। এসব চ্যাটিং কনটেন্ট তারা এমনভাবে  তৈরি করে যাতে যে কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মনে করে তারা ইতোপূর্বে অনেক কাজ অর্থের বিনিময়ে পাইয়ে দিয়েছেন। তাদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের খুবই সুসম্পর্ক রয়েছে বলে বোঝানো হতো। এই চক্রের সদস্য সাইফুল বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতে রয়েছেন।

যে নিজেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জয়েন্ট সেক্রেটারি পরিচয় দিতেন। ঠিকাদারদের সামনে কথিত সাইফুলের সঙ্গে লাউড স্পিকারে প্রকল্পের বিষয়ে আলোচনা করতেন মনসুর ও মহসিন। নিজেদের প্রতিষ্ঠিত ও স্বনামধন্য হিসেবে উপস্থাপন করতে তারা হাজার হাজার কোটি টাকার ভুয়া ব্যাংক গ্যারান্টি দেখাতেন। তারা কোনো অফিসে মিটিংয়ের সময় বেশভুষা পরিবর্তন করে দামি গাড়ি ও বডিগার্ড নিয়ে নিজেদের উপস্থাপন করতেন। নিজেদের আরও বিশ্বাসযোগ্য করে উপস্থাপনের জন্য বিভিন্ন দেশে কাজের জন্য ভ্রমণ করেছেন, এমন ছবি প্রদর্শন করতেন।

র‌্যাব কর্মকর্তা আল মঈন বলেন, চক্রটি সরকারি কোনো চলমান প্রকল্পের কাজ পাওয়ার যোগ্য বিশেষ করে নদী ড্রেজিং, বাঁধ নির্মাণ করে এমন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে খুঁজে বের করত। তাদের অগ্রিম ১০-১২ শতাংশ কমিশনের বিনিময়ে বিভিন্ন কাজ পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে চুক্তি করে টাকা হাতিয়ে নিত। চক্রটি বর্তমানে তিতাস নদী ড্রেজিং, আড়িয়াল খাঁ বিলের ড্রেজিং ও নদীর তীররক্ষা বাঁধ প্রকল্প, ঢাকা মহানগর উত্তর সিটি করপোরেশনের ড্রেনের সংস্কার কাজ, রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি অফিস ও বিশ্ববিদ্যালয় ভবন নির্মাণকাজসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজ পাইয়ে দেওয়ার নামে বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতারণার পরিকল্পনা করছিল।

তিতাস নদী ড্রেজিং ও আড়িয়াল খাঁ বিলের দুটি প্রকল্পের কাজ পাইয়ে দেওয়ার নামে ভুয়া চুক্তির ডকুমেন্টস পাওয়া গেছে। তারা আর কোন কোন প্রকল্পের নামে কী পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে, তা পরবর্তী তদন্তে জানা যাবে। তবে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, তারা গত ৩ বছরে প্রায় ২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। চক্রের আরও পাঁচ-সাতজন সদস্যের নাম পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। মনসুরের বিভিন্ন রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের ছবি দেখা গেলেও তার কোনো পদ-পদবির তথ্য পাওয়া যায়নি। তিনি নিজেকে বিশ্বস্ত করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় ছবি তুলতেন। সব ছবি তুলতে পেরেছেন তাও নয়, কিছু ক্ষেত্রে ছবি এডিট করে ফেসবুকে শেয়ার করেছেন।

র‌্যাব মুখপাত্র আল মঈন আরও বলেন, মনসুর প্রথমে স্থানীয় এলাকায় জমির দালালি করতেন। পরবর্তীতে ঢাকায় একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকাকালে এভাবে প্রতারণার বিষয়টি তার মাথায় আসে। পরবর্তীতে এক কর্মচারীর মাধ্যমে সাইফুলের সঙ্গে পরিচয় হলে প্রতারণার জন্য চক্রটি গড়ে তোলেন। আটক মহসিন প্রথমে ঢাকার মালিবাগে গার্মেন্ট ব্যবসা করতেন। পরবর্তীতে ব্যবসায়িক ক্ষতির কারণে তার ফ্যাক্টরিটি বিক্রি করে দেন। পরবর্তীতে মতিঝিলে মনসুরের সঙ্গে পরিচয়ের মাধ্যমে এই প্রতারক চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর