রাজধানীর মতিঝিল থেকে জাল জুডিশিয়াল ও নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প এবং কোর্ট ফি তৈরির জালিয়াত চক্রের মূল হোতা ফরমান আলী সরকারসহ (৬০) চারজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। গ্রেফতার বাকি তিনজন হলেন মো. তুহিন খান (৩২), আশরাফুল ইসলাম (২৪) ও মো. রাসেল (৪০)। জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) ও র্যাব-৩০-এর যৌথ অভিযানে ১৯ লাখ ৩ হাজার ৫২০ টাকার জুডিশিয়াল ও নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প উদ্ধার ছাড়াও ৫ হাজার কার্টিজ পেপার, একটি মনিটর, একটি সিপিইউ, একটি প্রিন্টার ও নগদ ৮ লাখ ৮৬ হাজার ৪৬০ টাকা জব্দ করা হয়।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, সম্প্রতি র্যাব-৩ ও এনএসআই গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে, একটি অসাধু চক্র দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর মতিঝিলে বেশি লাভের আশায় জাল জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ও রেভিনিউ স্ট্যাম্প প্রতারণামূলকভাবে জনসাধারণের কাছে বিক্রি করে আসছে। এর পরই চালানো হয় এ অভিযান।
বৈধ ও অবৈধ স্ট্যাম্পের পার্থক্য করা খুবই কঠিন উল্লেখ করে লে. কর্নেল আরিফ বলেন, ‘এসব অবৈধ স্ট্যাম্প তৈরির ফলে একদিকে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। অন্যদিকে এসব অবৈধ স্ট্যাম্প গ্রহণের ফলে সেবাগ্রহীতাদের সম্পদ-সম্পত্তি হুমকির মুখে পড়ছে। আমরা যাদের গ্রেফতার করেছি তাদের কাছে কোনো লাইসেন্স ছিল না। তবে লাইসেন্সধারী বৈধ ভেন্ডাররাও জাল স্ট্যাম্প বিক্রি করে থাকেন। তারা ১ লাখ টাকার বৈধ স্ট্যাম্পের সঙ্গে আরও ১০ লাখ টাকার অবৈধ স্ট্যাম্প রাখছেন এমন তথ্য আমরা পেয়েছি।’জাল স্ট্যাম্প নিয়েছেন এমন ভেন্ডারদের তালিকা পেয়েছেন কি না- জানতে চাইলে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘কিছু তালিকা আমরা পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। তবে অভিযানের জন্য আপাতত আমরা তাদের নাম-ঠিকানা বলতে চাইছি না।’
গ্রেফতারদের বিষয়ে আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, জালিয়াত চক্রের মূল হোতা ফরমান আলী সরকার নিজেকে ভেন্ডার হিসেবে পরিচয় দিলেও তার কাছে থাকা স্ট্যাম্প সম্পর্কে সঠিক হিসাব দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। সিন্ডিকেটের যোগসাজশে এসব স্ট্যাম্প তৈরি অথবা সংগ্রহ করে নিজের কাছে রেখে প্রতারণার মাধ্যমে আসল হিসেবে তিনি বিক্রি করতেন। জব্দ হওয়া স্ট্যাম্পগুলোর কাগজ ও মুদ্রণ সঠিক নয়। এগুলো ছিদ্রবিহীন ও পেছনে আঠালো প্রলেপের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এসব স্ট্যাম্প নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যযুক্ত নয়। গ্রেফতাররা কোনো ট্রেজারি চালান দেখাতে পারেননি।
র্যাব বলছে, ফরমান আলী কুড়িগ্রাম সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করেন। ১৯৯৩ সালে স্ট্যাম্প ভেন্ডারের ব্যবসায় জড়ান তিনি। তার বিরুদ্ধে এর আগেও সিআইডির কাছে একই কাজের জন্য মামলা হয়। সে মামলায় তিনি গ্রেফতার ও জেলহাজতে ছিলেন। বর্তমানে তিনি জামিনে থাকায় ওই মামলায় হাজিরা দিয়ে যাচ্ছেন। গ্রেফতার তুহিন খান ও রাসেল আর্থিক লাভের আশায় এসব অবৈধ জাল স্ট্যাম্প মতিঝিলের বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ দোকানে বিক্রি করতেন। তারা তিন থেকে চার বছর ধরে এ প্রতারণা ও জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত। তুহিন রাজধানীর শনিরআখড়া মাদরাসা থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। আশরাফুল পুটিকাটা সিন্দুরমতী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। তিনি এর আগে গ্রামীণফোন কোম্পানিতে চাকরি করতেন। গ্রেফতার রাসেল কোনাপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। তার বিরুদ্ধে পল্টন থানায় ২০১২ সালে একটি অস্ত্র আইন ও একটি অপহরণের মামলা রয়েছে।