মঙ্গলবার, ৩১ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে ‘গিলা পার্টি’র দাপট

মাদক মাফিয়ারা চালু করেছে ‘ম্যান মর্টগেজ’ পদ্ধতি, কক্সবাজারে কমপক্ষে ২০ গিলা পয়েন্ট চিহ্নিত

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে ‘গিলা পার্টি’র দাপট

মাদকের অন্ধকার জগতে চলছে ‘গিলা পার্টি’র দাপট। মাদকের ট্রানজিট পয়েন্ট কক্সবাজার জেলার কমপক্ষে ২০টি ‘গিলা’ পয়েন্ট থেকে মানবদেহে ইয়াবা প্রবেশ করিয়ে পাচার হয় দেশের বিভিন্ন জায়গায়। ‘গিলা’ পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রতিদিনই পাচার করছে ইয়াবার শত শত চালান। গিলা পার্টির ব্যবসা নির্বিঘ্ন করতে মাদক মাফিয়ারা চালু করেছে ‘ম্যান মর্টগেজ’ নামে বিশেষ পদ্ধতি। এতে চালান গন্তব্যে  পৌঁছে লেনদেন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত ইয়াবার ক্রেতার একান্ত আপনজন বন্ধক থাকে বিক্রেতার কাছে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের অনুসন্ধানে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। ইয়াবার গিলা পদ্ধতি নিয়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মুজিবুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ‘ইয়াবার পাচার নির্বিঘ্ন করতে গিলা পদ্ধতি ব্যাপক হারে অনুসরণ করছে ইয়াবা মাফিয়ারা। এরই মধ্যে কক্সবাজারের বেশ কিছু গিলা পয়েন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব পয়েন্ট নিয়ন্ত্রণকারীদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে।’ মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের সহকারী পরিচালক সোমেন মন্ডল বলেন, ‘কক্সবাজারের স্থানীয় লোকজন ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলার মাদক মাফিয়ারা গিলা পদ্ধতিতে ইয়াবা পাচার করছে। মাদক পাচারকারী চক্রের সদস্যরা বেড়ানোর নাম করে কক্সবাজার যায়। আসার সময় ইয়াবার চালান খেয়ে পাচার করে। প্রতি হাজার পিস ইয়াবার জন্য ক্যারিয়াররা ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা পেয়ে থাকে। তাই লোভে পড়ে অনেকেই গিলা পার্টির সদস্য হয়ে যাচ্ছে।’ অনুসন্ধানে জানা যায়, কক্সবাজারে কমপক্ষে ২০টি গিলা পয়েন্ট রয়েছে। পয়েন্টগুলো হলো- টেকনাফের পানখালী, নোয়াখালী পাড়া, হ্নীলা, জালিয়া পাড়া, হোয়াক্যং,  মৌলভীবাজার, টেকনাফ সদর, রামুর গোয়ালিয়া পালং (মিনি বান্দরবান), উখিয়ার মরিচ্যা, ঈদগা চৌপলদন্ডী ব্রিজ, কক্সবাজার সদরের পাহাড়তলী, লাইট হাউস, টেকপাড়া, বাহারছড়া, নাজিরারটেক, সমিতি পাড়া, দনিয়ানগর, কুরুশকুল অন্যতম। এ পয়েন্টগুলোতে থাকা মাচাং ঘর,  মোটরঘর এবং টংঘরে বসে বিশেষ পদ্ধতিতে ইয়াবা গিলে। এরপর বিলাসবহুল গাড়িতে চড়ে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যায়। নির্ধারিত গন্তব্যে গিয়ে আবাসিক হোটেলে অবস্থান করে পেট থেকে খালাস করা হয় ইয়াবার চালান। রবিবার মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের চট্টগ্রাম মেট্রো অফিসে কথা হয় গিলা পার্টির সদস্য বাগেরহাটের রহমত উল্লাহর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পাঁচ দিন আগে ম্যান মর্টগেজ হিসেবে টেকনাফে যাই। জিম্মাদার (মর্টগেজ) হিসেবে থেকে ঢাকায় একাধিক চালান পাঠায়। ঢাকায় ফিরে যাওয়ার সময় নিজেই আড়াই হাজার পিস ইয়াবা গিলে বহন করি। কিন্তু পথে গ্রেফতার করে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর।’ একই সময় কথা হয় ইয়াবাসহ গ্রেফতার হওয়া জয়নাল আবেদীনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কক্সবাজারের ব্যবসায়ীরা বাকিতেই ইয়াবা বিক্রি করে। এ জন্য ক্রেতার একজনকে জিম্মাদার হিসেবে রাখে। ইয়াবার চালান গন্তব্যে পৌঁছার পর পুরো টাকা পরিশোধ করে। তখন জিম্মাদারকে ছেড়ে দেয়। কেউ টাকা না দিলে জিম্মাদারের ওপর চালানো হয় নির্যাতন।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর