রবিবার, ৫ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

রুয়েটের ব্যাংক হিসাব থেকে ৭ কোটি টাকা গায়েব!

আজ আসছে ইউজিসির তদন্ত দল

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) একটি প্রকল্পের হিসাব থেকে গায়েব হয়ে গেছে ৭ কোটি টাকার বেশি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এই অর্থ বরাদ্দ দিয়েছিল। ২৬ কোটি ১১ লাখ টাকার প্রকল্পটি শেষ হয় ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট। তখন ব্যাংকের হিসাবে ১৩ কোটি ১৩ লাখ ৩৩ হাজার ৪১৪ টাকা ছিল। সেখান থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৬ কোটি টাকা দেওয়া হয়। এরপর ব্যাংকের হিসাবে ৭ কোটি ৫৬ লাখ ১০ হাজার ৫৮১ টাকা স্থিতি ছিল। ২০১৭ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ওই স্থিতি থেকে ৭ কোটি ১৪ লাখ ৭৩ হাজার ৭২৮ টাকা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ব্যাংক হিসাব থেকে অর্থ সরিয়ে নেওয়া, তথ্য গোপন করে প্রকল্পের কাজ শেষ করার রিপোর্ট দাখিল করার বিষয়টি তদন্তে আজ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) একটি তদন্ত দল রাজশাহী আসছে। গত ২০ এপ্রিল ইউজিসির উপ-পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) রোকসানা লায়লা স্বাক্ষরিত পত্রে এ তদন্তের কথা রুয়েট উপাচার্যকে জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে এ প্রকল্পের পরিচালক রুয়েটের অধ্যাপক আবদুল আলীমকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন- ইউজিসির পরিচালক (উন্নয়ন ও পরিকল্পনা) ড. ফেরদৌস জামান, উপ-পরিচালক রোকসানা লায়লা ও উপ-পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) আবদুল আলীম।

অভিযোগ উঠেছে, ২০১৭ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ব্যাংক হিসাব থেকে ৭ কোটি ১৪ লাখ ৭৩ হাজার ৭২৮ টাকা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত রুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক আবদুল আলীম। অবশ্য তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি ছাড়াও পাঁচজন প্রকল্প পরিচালক ছিলেন। এখন কেন এমন অভিযোগ উঠছে বা তদন্ত হচ্ছে- সেটি তদন্ত দলকে জিজ্ঞাসা করুন।’

রূপালী ব্যাংকের রুয়েট শাখার হিসাব নম্বর-৩৭২৩০২০০০০৪৩৮ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রকল্প সমাপ্তি ও পরিদর্শন শেষ হয় ২০১৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি। তখন ওই হিসাব নম্বরে ৭ কোটি ৫৬ লাখ ১০ হাজার ৫৮১ টাকা স্থিতি ছিল। নিয়ম অনুযায়ী এই টাকার তথ্য ইউজিসিকে জানাতে হবে। কিন্তু সেটি না জানিয়ে ২২ মার্চ ২০১৭ থেকে ৩০ জুন ২০২০ পর্যন্ত কয়েক দফায় ৭ কোটি টাকার বেশি সরিয়ে নেওয়া হয়। এখন হিসাব নম্বরটিতে অবশিষ্ট রয়েছে ৫০ লাখ ৩৬ হাজার ৮৫৯ টাকা।

ইউজিসির উপ-পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) রোকসানা লায়লা জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘পাঁচটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন বিভাগ চালুকরণের লক্ষ্যে অবকাঠামোগত ও ল্যাবরেটরি সুবিধাদি সৃষ্টিকরণ’ আমব্রেলা প্রকল্পের আওতায় রুয়েটের গ্লাস অ্যান্ড

 সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ চালুকরণ শীর্ষক সাব-প্রকল্পের জন্য ২৬ কোটি ১১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রকল্পটি শেষ হয়েছে বলে প্রতিবেদন দেন প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক আবদুল আলীম। কিন্তু প্রকল্পটির বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয় ইউজিসি। তথ্য গোপন করে প্রকল্প সমাপ্তি রিপোর্ট দেওয়া, ২০১৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা প্রকল্প পরিদর্শনে এলেও গচ্ছিত টাকার বিষয়টি গোপন করা, ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না নিয়ে প্রকল্প চালু রাখা ও বিল প্রদান করা, প্রকল্প শেষে প্রকল্পের অ্যাকাউন্টে চেক ও অব্যবহৃত টাকা জমা না দেওয়া, প্রকল্প শেষে প্রকল্পের ব্যাংক হিসাব বন্ধ না করা, ২০১৬ সালের পর প্রকল্প থেকে প্রায় ১৩ কোটি টাকা বিল দেওয়া হলেও ভ্যাট ও আইটি বাবদ কেটে রাখা টাকা (১০%) সংশ্লিষ্ট দফতরে জমা না দেওয়া, এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অব্যবহৃত টাকা ফেরত প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ না করার বিষয়টি তারা তদন্ত করবেন।

রুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম শেখ জানান, তার দায়িত্ব নেওয়ার আগেই একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে চেক ইস্যু, ব্যাংকে গচ্ছিত থাকা অব্যবহৃত টাকা সম্পর্কে ইউজিসিকে না জানানোসহ কিছু বিষয়ে আপত্তি আছে। সেটি তদন্তে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল আসছে। তারা তদন্ত করার পর এ বিষয়ে তিনি বলতে পারবেন, ৭ কোটি টাকা কোথায় গেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর