রবিবার, ৫ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

খুলনায় কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের মেডিকেল রিপোর্ট নিয়ে তোলপাড়

পুলিশ কর্মকর্তাকে বাঁচাতে ভিকটিমকে যৌনকর্মী বানানোর চেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

খুলনায় পুলিশ কর্মকর্তা কর্তৃক কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় মেডিকেল রিপোর্ট (মেডিকো লিগ্যাল রিপোর্ট) নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ধর্ষণের ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নিতে ওই রিপোর্টের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ভিকটিমকে যৌনকর্মী বানানোর চেষ্টা চলছে। এতে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে ভুক্তভোগী ও তার পরিবার। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। জানা যায়, ফেসবুক সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানের জন্য গত ১০ মে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) পরিদর্শক মঞ্জুরুল হাসান মাসুদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ওই কলেজছাত্রী। ফেসবুকে তার ছবি পোস্ট করে কেউ খারাপ মন্তব্য করেছে- এই অভিযোগ করেছিলেন কলেজছাত্রী। মাসুদ তাকে পিবিআই খুলনা অফিসে ডেকে নিয়ে ঘটনার বিস্তারিত শুনে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। পরে মোবাইল ও ইমোতে কলেজছাত্রীর সঙ্গে কয়েক দফা কথা বলেছেন মাসুদ। সর্বশেষ ১৫ মে তাকে ছোট মির্জাপুরের একটি অফিসকক্ষে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনায় মাসুদের বিরুদ্ধে খুলনা থানায় মামলা হয়। মামলা নং-১৫ (তারিখ- ১৫.০৫.২২)। এরপর থেকেই মাসুদ তার কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন।

এদিকে গত ৩০ মে খুলনা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের মেডিকেল রিপোর্টে ‘old tear present & there was no sign of recent, forceful, sexual intercourse’ উল্লেখ থাকায় রিপোর্টের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ওই কলেজছাত্রীকে যৌনকর্মী বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এর মধ্যে খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে পিবিআই পরিদর্শক মঞ্জুরুল হাসান মাসুদ বলেন, তার (মেয়েটি) সঙ্গে আগে থেকেই অনেকের শারীরিক সম্পর্ক আছে। এ ছাড়া ছোট মির্জাপুরের ওই স্থানে মেয়েটিই তাকে পরিকল্পিতভাবে ডেকে নিয়ে যায় এবং সেখানে ধর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

তবে মেডিকেল রিপোর্ট দেওয়া ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক ডা. ফাহমিদা শবনম বলেন, রিপোর্টে বলা হয়েছে জোরপূর্বক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। কারণ শারীরিক পরীক্ষায় এ জাতীয় কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেখানে সম্মতিতে ইন্টারকোর্স বা এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। মেয়েটির বক্তব্যে ওই ঘটনার বিবরণও রিপোর্টে উল্লেখ আছে।

অপরদিকে মেয়েটির কাছে ওই দিন অতিরিক্ত একসেট জামা ছিল ও খুলনা থানা পুলিশের আরেক কর্মকর্তা মিরানের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে পিবিআই পরিদর্শক মাসুদকে ফাঁসানো হয় বলে কলেজছাত্রীকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী কলেজছাত্রী মুঠোফোনে জানান, তাকে মোবাইলে কল দিয়ে ডেকে নেওয়া হয়েছে যার রেকর্ড তার ফোনে আছে। এ ছাড়া ওই দিন তার কাছে ছোট পার্স ব্যাগ ছিল, যাতে টাকা পয়সা ছাড়া আর কিছু রাখা যায় না। আর পুলিশ কর্মকর্তা মিরানকে তিনি চেনেন না। তিনি বলেন, তাকে অসহায় পেয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে। এখন মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ঘটনার ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে।

পিবিআই, খুলনার পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান জানান, ঘটনার পর থেকেই সে (মাসুদ) কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছে। তাকে বরখাস্তের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর