মঙ্গলবার, ৭ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

সিলেটে রাজপথ দখলের চ্যালেঞ্জ

দলীয় কর্মসূচি পালনের নামে পাল্টাপাল্টি শোডাউন করেছেন উভয় দলের নেতা-কর্মীরা

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেটে রাজপথ দখলের চ্যালেঞ্জ

দীর্ঘদিন ধরে সিলেটের রাজপথ ছিল শান্ত। দেশের বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বৃহৎ কোনো কর্মসূচি না থাকায় খুব একটা সরগরম ছিল না রাজপথ। বিভিন্ন দিবসে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা র‌্যালি আর রেজিস্ট্রারি মাঠে সমাবেশ কিংবা হোটেলের হলরুমে আলোচনা সভার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল বিএনপির কার্যক্রম। কিন্তু হঠাৎ করে সিলেটের রাজপথ নিজেদের দখলে রাখার ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। দলীয় কর্মসূচি পালনের নামে পাল্টাপাল্টি শোডাউন করেছেন উভয় রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা। রাজপথে একে অপরকে মোকাবিলার চ্যালেঞ্জও দিয়েছেন উভয় দলের নেতারা। এই অবস্থায় রাজপথে সংঘাত সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন সিলেটের সাধারণ মানুষ।

গত ৩০ মে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সিলেট নগরীতে বিশাল শোক র‌্যালি করে জেলা ও মহানগর বিএনপি। ওই দিন বাঁশের লাঠিতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা এবং ফেস্টুন বেঁধে হাজারো নেতা-কর্মী র‌্যালিতে অংশ নেন। দলের একাধিক সূত্র জানায়, র‌্যালিতে সরকারদলীয় নেতা-কর্মী কিংবা প্রশাসন বাধা দিলে তা প্রতিহত করার প্রস্তুতি নিয়েই ওইদিন র‌্যালি বের করে বিএনপি। তবে কড়া পুলিশি নিরাপত্তার কারণে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শেষ হয় র‌্যালি। শহীদ মিনারে র‌্যালি পরবর্তী সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ও সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এই র‌্যালিকে সিলেট থেকে সরকার পতনের প্রথম কর্মসূচি বলে ঘোষণা দেন। সরকার পতন ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আদায়ের লক্ষ্যে সিলেটের রাজপথ বিএনপির দখলে রাখারও ঘোষণা দেন আরিফ। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের কটূক্তির প্রতিবাদে গত ২৩ মে সিলেট নগরীর কোর্ট পয়েন্ট থেকে বিশাল মিছিল বের কওে জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগ। মিছিলটি চৌহাট্টায় গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। মিছিল থেকে ফেরার পথে চৌহাট্টায় ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এর দুই দিন পর ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল নগরীতে বিশাল মিছিল করে। ওই সময় বিএনপি নেতারা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে তাদের সাহস ও উৎসাহ দেন। ওই মিছিল থেকেও বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সিলেটের রাজপথ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার ঘোষণা দেন। এদিকে ‘শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি ও বিএনপির দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের’ প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত শনিবার সিলেটে বিশাল শোডাউন করেছে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। বৃষ্টি উপেক্ষা করে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ রেজিস্ট্রারি মাঠ থেকে পৃথক মিছিল বের করে। পরে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। মিছিলে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের হাজারো নেতা-কর্মী অংশ নেন। মিছিল পরবর্তী সমাবেশ থেকে সিলেটের রাজপথে বিএনপিকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

রাজপথ দখল নিয়ে সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী বলেন, ‘বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আদায় করতে বিএনপি রাজপথে আছে। রাজপথের আন্দোলনকে টার্গেট করে    মহানগরীর প্রতিটি ওয়ার্ড কমিটি করা হচ্ছে। সিলেটের রাজপথ বর্তমানে বিএনপির দখলে আছে। আগামীতে আন্দোলন আরও জোরদার করা হবে। রাজপথে বিএনপির কর্মসূচিতে কোনো ধরনের বাধা এলে তা প্রতিহত করার প্রস্তুতিও আমাদের রয়েছে।’

আন্দোলন কর্মসূচির নামে বিএনপি কোনো ধরনের সহিংসতা করলে ছাড় দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ রাজপথের দল হিসেবে রাজপথেই আছে। সব কেন্দ্রীয় কর্মসূচি যথাযথভাবে পালন করা হচ্ছে। বিএনপি সহিংসতার পথ বেছে নিলে ছাড় দেওয়া হবে না। রাজপথেই এর সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর