মঙ্গলবার, ৭ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

দুই মামলার জেরে ৯৬ পুকুরের ইজারা বন্ধ

খাস কালেকশনে পছন্দের লোককে বরাদ্দের আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে ১ হাজার ৩৮১টি খাসপুকুর ইজারা দিতে দরপত্র আহ্বান করা হয়। প্রতি বছরের মতো এবারও স্থানীয় মৎস্যজীবী সংগঠনগুলো ইজারা নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দফতরে যান। কিন্তু সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, তালিকায় থাকা ৯৬ পুকুর এবার ইজারা দেওয়া হবে না। ওই পুকুরগুলো ইজারা না দিতে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা আছে। তবে স্থানীয় মৎস্যজীবী সংগঠনের সদস্যদের আশঙ্কা- মামলার অজুহাতে ইজারা না দিয়ে পরে খাস কালেকশনে পছন্দের লোকজনকে বরাদ্দ দেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দফতর সূত্র জানায়, মহিদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি আদালতে মামলা করে ইজারা প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেন। মহিদুল ইসলাম স্থানীয় ফরিদপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড নামে একটি সংগঠনের সদস্য। মহিদুলের মামলার সূত্র ধরে অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা যায়, অসংখ্য পুকুরের মধ্যে আদালতের নিষেধাজ্ঞা আছে মাত্র দুটি পুকুরের বিরুদ্ধে। তাও সেই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ পার হয়ে গেছে। উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি ও আদালতের কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, মাদারপুর এলাকার মহিদুল ইসলাম ইজারা প্রক্রিয়ায় থাকা সিরিয়াল নম্বর-৯৩ ও ১২৩ নম্বর পুকুরের ইজারা বন্ধ রাখার দাবি জানিয়ে আদালতে মামলা করেন। উচ্চ আদালতের বিচারক বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খন্দকার দিলিরুজ্জামানের যৌথ বেঞ্চ গত বছরের ২৬ অক্টোবর ছয় মাসের জন্য স্থগিতাদেশ দেন। আদালতের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার মেয়াদও শেষ হয়েছে। মামলার বাদী মহিদুল ইসলাম জানান, পুকুর ইজারায় অনিয়মের অভিযোগে তিনি আদালতে মামলা করেছেন। দুটি নয়, সব পুকুরের নামেই তার মামলা বলে দাবি করেন। উচ্চ আদালতের কাগজপত্রে দুটি পুকুরের তথ্য আছে বলা হলে তিনি বলেন, ‘আমি এখন কাজে আছি। এসব মোবাইলে বলা যাবে না। সামনাসামনি বলব।’ স্থানীয় মৎস্যজীবী সংগঠনের সদস্যরা জানান, এখন ইজারা প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু তালিকায় থাকায় ওই পুকুরগুলোর নামে মামলা আছে দেখিয়ে ইজারা না দিয়ে পরে খাস কালেকশনে পছন্দের লোকজনকে বরাদ্দ দেওয়া হবে। উপজেলার স্বচ্ছ মৎস্যচাষি সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি সাবিয়ার রহমান জানান, তালিকায় থাকায় পুকুর দেখে তিনি ইজারা পেতে দরপত্র দাখিল করেন। দরপত্র অনুযায়ী তার নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরে উপজেলা ভূমি অফিস থেকে ফোন করে জানানো হয়, ওই পুকুরের নামে মামলা আছে। তারপর ইজারা বাতিল করা হয়। তিনি মামলার কাগজপত্র তুলে দেখেন শুধু দুটি পুকুরের নামে আদালতে মামলা আছে।

তার নামে যে পুকুর বরাদ্দ হয়েছিল, সেটির নামে কোনো মামলা নেই। এভাবে মামলা না থাকলেও মামলা দেখিয়ে ইজারা দেওয়া বন্ধ করে রাখা হয়েছে। মোহাম্মদপুর জোটাবটতলা মৎস্যচাষি সমবায় সমিতি লিমিটেডের সহসভাপতি নাসিরুল ইসলাম জানান, তিনি যেসব পুকুরের বিপরীতে দরপত্র জমা দিয়েছিলেন, সেগুলোর নামে কোনো মামলা ছিল না। অনলাইনে করা আবেদন সফল হয়েছে বলে জানানো হয়। দরপত্র জমা দেওয়ার পর তাকে ফোন করে জানানো হয়, ওই পুকুরগুলোর নামে উচ্চ আদালতে রিট করা হয়েছে। পরে তিনি খোঁজ নিয়ে দেখেছেন ওই পুকুরগুলোর নামে কোনো রিট নেই। মাদারপুর উত্তর মৎস্যচাষি সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম জানান, ভালো পুকুরগুলো ইজারা দেওয়া হচ্ছে না। যেগুলো বড় পুকুর, সেগুলোর নামে মামলা আছে দেখিয়ে ইজারা দেওয়া হচ্ছে না। এর আগে এমন ঘটনা ঘটেনি।

গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানে আলম জানান, পুকুর ইজারা প্রক্রিয়া বন্ধ নেই। মামলা থাকার কারণে ওই পুকুরগুলো ইজারা দেওয়া হয়নি। দুটি পুকুরের নামে মামলা করলেও ৯৬ পুকুর ইজারা বন্ধ কেন- এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর