মঙ্গলবার, ৭ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

আজ ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস আজ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ৭ জুন এক অবিস্মরণীয় ও তাৎপর্যপূর্ণ দিন। এদিন বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা আদায়ের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের ডাকে হরতাল চলাকালে নিরস্ত্র জনতার ওপর পুলিশ ও তৎকালীন ইপিআর গুলিবর্ষণ করে। এতে ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জে মনু মিয়া, সফিক ও শামসুল হকসহ ১১ জন শহীদ হন। শহীদের রক্তে ছয় দফা আন্দোলন স্ফূলিঙ্গের মতো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র; রাজপথে নেমে আসে বাংলার মুক্তিকামী জনগণ। ১৯৬৬ সালের ৭ জুন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ছয় দফা দাবির পক্ষে দেশব্যাপী তীব্র গণআন্দোলনের সূচনা হয়। এ ছয় দফার মধ্য দিয়েই বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন স্বাধীনতা-সংগ্রামে রূপ নেয়। ছয় দফা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আসে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ১১ দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং সর্বশেষ বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়। বঙ্গবন্ধু ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তাসখন্দ চুক্তিকে কেন্দ্র করে লাহোরে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের সাবজেক্ট কমিটিতে ছয় দফা উত্থাপন করেন। পরের দিন সম্মেলনের আলোচ্য সূচিতে যাতে এটি স্থান পায় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের ব্যবস্থা নিতে তিনি অনুরোধ করেন। কিন্তু সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর এ দাবির প্রতি আয়োজক পক্ষ গুরুত্ব দেয়নি।

এর প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু সম্মেলনে যোগ না দিয়ে লাহোরে অবস্থানকালেই ছয় দফা উত্থাপন করেন। ছয় দফার সমর্থনে ১৯৬৬ সালের ১৩ মে আওয়ামী লীগ আয়োজিত পল্টনের জনসভা থেকে ৭ জুন হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

মাসব্যাপী ছয় দফা প্রচারে ব্যাপক কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়। হরতালে তেজগাঁওয়ে বেঙ্গল বেভারেজের শ্রমিক সিলেটের মনু মিয়া পাকিস্তানি স্বৈরশাসকের গুলিতে প্রাণ হারান। এতে বিক্ষোভের প্রচ তা বাড়ে। তেজগাঁওয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণেও ছয় দফার মর্মবাণী উচ্চারিত হয়। পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীনও মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বে যুদ্ধ পরিচালনা এবং দেশের অভ্যন্তরে সব সরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয় ছয় দফার ভিত্তিতে। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ সৃষ্টিতে ছয় দফার ভূমিকা অপরিসীম।

ছয় দফা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তাঁরা ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য যারা জীবন দিয়েছেন তাদের স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানান। প্রতি বছর বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হয়। আজ সকাল সাড়ে ৬টায় দলীয় কার্যালয়ে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৮টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে স্থাপিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাবেন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। বেলা ১১টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। সভায় ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে সভাপতিত্ব করবেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে জাতীয় নেতৃবৃন্দ বক্তৃতা করবেন।

ছয় দফায় যা ছিল : ছয় দফার মূল বক্তব্য ছিল প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র বিষয় ছাড়া সব ক্ষমতা প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকবে। পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম পাকিস্তানে দুটি পৃথক ও সহজ বিনিময়যোগ্য মুদ্রা থাকবে। সরকারের কর ও শুল্ক ধার্য এবং আদায় করার দায়িত্ব প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকাসহ দুই অঞ্চলের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার আলাদা হিসাব থাকবে এবং পূর্ব বাংলার প্রতিরক্ষা ঝুঁকি কমানোর জন্য এখানে আধা-সামরিক বাহিনী গঠন ও নৌবাহিনীর সদর দফতর স্থাপনের দাবি জানানো হয়।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর