বুধবার, ৮ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

কবে হবে পূর্ণাঙ্গ বার্ন ইউনিট

চট্টগ্রামে বারবার ঘটছে ভয়ংকর দুর্ঘটনা, বাড়ছে আতঙ্ক

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

কবে হবে পূর্ণাঙ্গ বার্ন ইউনিট

চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলায় বঙ্গোপসাগরকে কেন্দ্র গড়ে উঠেছে অন্তত ৬০টি শিপইয়ার্ড। এ জাহাজশিল্পের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ৫০ হাজার মানুষ। পক্ষান্তরে, চট্টগ্রামে আছেন প্রায় ৫০০ গার্মেন্ট। এসব তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করে অন্তত ৮ লাখ কর্মী। চট্টগ্রামে আছে দেশের বৃহত্তম সমুদ্রবন্দরের মতো একটি অতি ব্যস্ততম প্রতিষ্ঠান। এখানে প্রতিনিয়তই ব্যাপক পরিসরে হয় পণ্য হ্যান্ডলিং। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিয়তই ঝুঁকি মাথায় নিয়ে কাজ করেন শ্রমিকরা। শঙ্কা থাকে দুর্ঘটনার। দুর্ঘটনা ঘটেও। এর মধ্যে অধিকাংশই আগুন ও গ্যাস বিস্ফোরণ জাতীয়। অথচ চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ বার্ন ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। শনিবার সীতাকুন্ডের বিএম কনটেইনারে বিস্ফোরণে মারা যান ৪৯ জন এবং আহত হন অন্তত ৫০০ মানুষ। এ ঘটনার পর চট্টগ্রামে পূর্ণাঙ্গ বার্ন ইউনিট প্রতিষ্ঠা না হওয়ার বিষয়টি সামনে আসে। তৈরি হয় নানা সমালোচনা, ক্ষোভ। ২০০৬ সালেও চট্টগ্রামের কেটিএস অ্যাপারেলসে অগ্নিকান্ডে ৬৫ শ্রমিক মারা গিয়েছিলেন। তা ছাড়া ছোট বড় প্রতিটি ঘটনার সময়ই উন্নত চিকিৎসার জন্য দগ্ধদের নিতে হয় ঢাকায়। গতকাল সীতাকুন্ডে বিস্ফোরণে দগ্ধদের দেখতে আসেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান ডা. সামন্ত লাল সেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে একটি বিশেষায়িত বার্ন হাসপাতালের জন্য ১৫ বছর ধরে চেষ্টা চালাচ্ছি। হাসপাতালের স্থান নিয়ে সমস্যা হচ্ছিল। এখন নতুন করে চারটি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি স্থান অর্থ সহায়তাকারী দেশ চীনের পছন্দ হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আজকের সংকটাপন্ন রোগীদের ম্যানেজ করতে অনেক কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শয্যা আছে ২৬টি, রোগী ভর্তি করা হয়েছে কয়েক গুণ বেশি। বাধ্য হয়ে পাশের গাইনি ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়। তা ছাড়া এ ইউনিটে সংকটাপন্ন রোগী রাখা যায় না। আইসিইউ দরকার হলে সমস্যায় পড়ে যাই। তবে নতুন একটি বার্ন ইউনিট স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’ বৃহত্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির সদস্যসচিব এইচ এম মুজিবুল হক বলেন, ‘বাণিজ্যিক রাজধানীর মতো একটি বড় শহরে পূর্ণাঙ্গ বার্ন ইউনিট গড়ে না ওঠাটা আসলেই দুঃখের বিষয়। প্রতিটি বড় অঘটনেই আমরএটি হাড়ে হাড়ে খেসারত দিচ্ছি। সংকটাপন্ন রোগীকে নিতে হয় ঢাকায়। পথিমধ্যে মৃত্যুও ঘটে। আমাদের প্রশ্ন, আর কত মৃত্যুর পর একটি পূর্ণাঙ্গ বার্ন ইউনিট গড়ে উঠবে?’ জানা যায়, ২০১৪ সালে ১০০ শয্যার বিশেষায়িত একটি বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেওয়া হয় মন্ত্রণালয়ে। প্রস্তাবে ১০ শয্যার আইসিইউ, তিনটি অস্ত্রোপচার কক্ষ ও অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রাখা হয়। ২০১৬ সালে প্রকল্পের অর্থায়নে এগিয়ে আসে চীন। বার্ন ইউনিট গড়ে তুলতে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনাও করে। কিন্তু বার্ন ইউনিট স্থাপনের জন্য জায়গা চূড়ান্ত না হওয়ায় অর্থায়ন থেকে সরে আসে চীন। পরে স্থান চূড়ান্ত হলে চীন আবারও অর্থায়নে সম্মতি জানায়। অবশেষে চমেক হাসপাতালের প্রধান ছাত্রাবাসের কাছে গোয়াছি বাগান এলাকায় ১০০ শয্যার বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতালের জন্য একটি স্থান নির্ধারণ করা হয়। শিগগিরই চীনা প্রতিনিধি দল এসে স্থান পরিদর্শন করার কথা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর