বুধবার, ৮ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

চলছে আহাজারি অপেক্ষা স্বজনের

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগ। এখান দিয়েই প্রবেশ করছে সীতাকুন্ডে বিস্ফোরণে আহত-নিহতদের বহনকারী সব অ্যাম্বুলেন্স। ফলে এখানেই অপেক্ষার প্রহর গুনছেন দুর্ঘটনায় নিখোঁজদের স্বজনরা। এখানে প্রায় সারাক্ষণ চলছে আহাজারি। স্বজন হারানোর বেদনায় বিধ্বস্ত হয়ে তারা কাটাচ্ছেন নির্ঘুম রাত।

জানা যায়, সীতাকুন্ডে বিএম কনটেইনারে বিস্ফোরণের ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত ৪৩ জন মারা যান। এর মধ্যে ২৫ জনের লাশ শনাক্ত করে পরিবারে হস্তান্তর করা হলেও ১৮ জনকে শনাক্ত করা যায়নি। তাদের শনাক্তে সোমবার হাসপাতালের সামনে বুথ স্থাপন করে ডিএনএ টেস্টের জন্য নিখোঁজদের স্বজনদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এক মাস পর মিলবে এর রিপোর্ট। কিন্তু তিন দিন ধরেই নিখোঁজদের স্বজনরা হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, বার্ন ইউনিট, চক্ষু বিভাগ ও বিএম কনটেইনার গেটের সামনে হারানো স্বজনদের খুঁজছেন। জীবিত না হোক, অন্তত স্বজনের লাশটা চান তারা।

বিস্ফোরণে নিখোঁজ হন বিএম কনটেইনার ডিপোর এফ?এলটি অপারেটর (ক্রেনচালক) মো. মনির হোসেন। তার বাড়ি সীতাকুন্ডের উত্তর ফকিরপাড়ায়। বিস্ফোরণের আগে বাড়িতে বলেছিলেন ‘বেঁচে থাকলে কথা হবে’। সেটিই মনিরের শেষ কথা। এর পর থেকে তার আর কোনো খোঁজ নেই। বেঁচে আছেন কি না জানে না পরিবার। মনিরের ভাই ব্যানার ও ছবি নিয়ে হাসপাতালের সামনে অবস্থান করছেন। মনিরের বড় ভাই মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘অগ্নিকান্ডের খবর রাতেই বাড়িতে জানিয়েছিল মনির। কথা বলার একপর্যায়ে বলল ‘বেঁচে থাকলে কথা হবে’। এরপর ফোন কেটে দেয়। এটাই শেষ কথা। এর পর থেকে ফোন বন্ধ। এখন বিভিন্ন স্থানে গিয়েও খুঁজে পাচ্ছি না। বেঁচে আছে কি না জানি না। গতকাল ডিএনএ নমুনা দিয়েছি। অন্তত ভাইয়ের লাশটা চাই। তাতে কিছুটা হলেও শান্তি পাব।’

অন্যদিকে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থেকে কুমিরা স্টেশনের ফায়ার ফাইটার শফিউল ইসলামের খোঁজে এসেছেন তার স্বজনরা। বৃদ্ধ বাবা আবদুল মান্নান হোসেন ছুটছেন ঢাকায়। বিস্ফোরণের পর থেকে খোঁজ নেই শফিউলের। শফিউলের স্ত্রী বর্তমানে অন্তঃসত্ত্বা। গত বছর বিয়ে করেছেন তিনি। তার স্বজনরা বলেন, পরিবারের দুই সন্তানের মধ্যে শফিউল ইসলাম বড়। তিনিই সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম।

তা ছাড়া স্বামীর খোঁজে আসেন রেশমা বেগম। তার কোলে তিন মাস বয়সী শিশু। সাত মাস বয়সী শিশুকন্যা নিয়ে স্বামীর খোঁজে আসেন ইসফাহান সুলতানা। আর জামাইর খোঁজে আসেন শ্বশুর মোহাম্মদ লিটন। তিনি পেশায় অটোরিকশা চালক। তার জামাই শাহজাহান কাভার্ড ভ্যান চালাতেন। তাদের ঘরে এক মাস ও ছয় বছর বয়সী দুই ছেলে। বিস্ফোরণের সময় শাহজাহান ফোনে যোগাযোগ রেখেছিলেন শ্বশুরের সঙ্গে। এভাবে নিখোঁজ হওয়াদের স্বজনরা হন্যে হয়ে খুঁজছেন। গুনছেন অপেক্ষার প্রহর। চলছে স্বজনহারাদের আহাজারি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর