স্বামী আর তিন সন্তান নিয়ে সংসার ছমিরন বেগমের। থাকেন জাফলংয়ের আসামপাড়ায়। একসময় বেশ সুখের সংসার ছিল তাদের। স্বামী রহমত মিয়াকে নিয়ে ধলাই নদীতে পাথর তুলতেন ছমিরন। সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে দুই বছর ধরে পাথর উত্তোলন বন্ধ। এর পর থেকে বিকল্প হিসেবে দিনমজুরের পেশা বেছে নেন রহমত। অনটনের সংসার এভাবেই চলছিল। কিন্তু এবারের ভয়াবহ বন্যা তছনছ করে দিয়েছে ছমিরনের সংসার। এ অবস্থায় দেশের শীর্ষ শিল্প গ্রুপ বসুন্ধরার ত্রাণ পেয়ে দারুণ খুশি ছমিরন। গতকাল বিকালে সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিনের কাছ থেকে ত্রাণের প্যাকেট হাতে নিয়ে ছমিরন কৃতজ্ঞতা জানান বসুন্ধরা গ্রুপকে। অশ্রুভেজা কণ্ঠে বললেন, ‘দুই দিন বাদে আইজ ঘরর ছুলা জ্বলব। আল্লায় বসুন্ধরা গ্রুপর ভালা খরউক্কা। যেনতাইন ই ত্রাণ দিছইন আল্লায় তারার দুনিয়া-আখেরাতর ভালা খরউক্কা।’ (দুই দিন পর আজ ঘরের চুলা জ্বলবে। আল্লাহ বসুন্ধরা গ্রুপের ভালো করুন। যারা এ ত্রাণ দিয়েছেন আল্লাহ তাদের দুনিয়া ও আখেরাতে ভালো করুন।) সিলেটের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য দ্বিতীয় দফায় বসুন্ধরা গ্রুপের পাঠানো ৫ হাজার প্যাকেট ত্রাণ গতকাল বিতরণ শুরু হয়েছে। সিলেট জেলা পুলিশের মাধ্যমে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১২ উপজেলার অসহায় লোকজনের মধ্যে এ ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন গতকাল সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিতীয় ধাপের এ ত্রাণ বিতরণ উদ্বোধন করেন। এর আগে সিলেটের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আরও ৭ হাজার প্যাকেট ত্রাণ পাঠায় বসুন্ধরা গ্রুপ। ৩০ মে থেকে সেগুলোও জেলার ক্ষতিগ্রস্ত ১২ উপজেলায় বিতরণ করা হয়। পুলিশ সুপারের নির্দেশে তালিকা করে থানা পুলিশ সেগুলো ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে পৌঁছে দেয়। সিলেটের মতো সুনামগঞ্জের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৮ হাজার প্যাকেট ত্রাণ পাঠায় বসুন্ধরা। সিলেট ও সুনামগঞ্জ মিলিয়ে বসুন্ধরার ত্রাণ পেয়েছে ২০ হাজার পরিবার। গতকাল পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন নিজ হাতে গোয়াইনঘাটের পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের হাজী সোহরাব আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে বসুন্ধরা গ্রুপের ত্রাণ বিতরণ করেন। বসুন্ধরা গ্রুপের এই মানবিক কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করে পুলিশ সুপার বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপের স্লোগান হচ্ছে “দেশ ও মানুষের কল্যাণে”। অকালবন্যায় সিলেটের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে বসুন্ধরা গ্রুপ তাদের স্লোগানের যথার্থতা প্রমাণ করেছে।’ ত্রাণ বিতরণকালে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. লুৎফর রহমান, গোয়াইনঘাট সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুল হক, গোয়াইনঘাট সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার প্রবাস কুমার সিংহ, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক ইখতিয়ার উদ্দিন, গোয়াইনঘাট থানার ওসি কে এম নজরুল ইসলাম, পূর্ব জাফলং ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফুর রহমান লেবু, বাংলাদেশ প্রতিদিন সিলেট অফিসের নিজস্ব প্রতিবেদক শাহ্ দিদার আলম নবেল, বাংলানিউজের সিনিয়র করেসপনডেন্ট নাসির উদ্দিন, নিউজ টোয়েন্টিফোরের নিজস্ব প্রতিবেদক সৈয়দ রাসেল, কালের কণ্ঠের আলোকচিত্রী আসকার আমিন রাব্বি, নিউজটোয়েন্টিফোরের ক্যামেরাপারসন শফি আহমেদ প্রমুখ।