শুক্রবার, ১০ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

সীমান্তে তৎপর পাচারকারী

সিলেটে টার্গেট স্কুলছাত্রীরা, তিন সপ্তাহে নিখোঁজ দুই ছাত্রী

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সীমান্তে তৎপর পাচারকারী

সিলেট সীমান্তে হঠাৎ করে তৎপর হয়ে উঠেছে নারী পাচারকারী চক্র। স্কুলের ছাত্রীদের টার্গেট করে অপহরণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ওই চক্রের সদস্যরা। চক্রটিতে পুরুষ ও নারী সদস্য রয়েছে। স্থানীয় পরিবহন চালকরাও এই চক্রের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। অপহরণ রোধ ও চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারে গতকাল থেকে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় পুলিশের ৮টি টিম কাজ শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত অপহৃত দুই ছাত্রী নিখোঁজ রয়েছে। আর অপহরণকারী চক্রের হাত থেকে কৌশলে ফিরে আসতে পেরেছে আরও তিন ছাত্রী।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গেল প্রায় তিন সপ্তাহে ভারত সীমান্তবর্তী সিলেটের জৈন্তাপুরে নারী পাচারকারী চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। নারী ও পুরুষের সমন্বয়ে ওই চক্রটি উপজেলার বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রীদের টার্গেট করে অপহরণ করে পাচারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। স্কুলছাত্রীদের নানা কৌশলে অজ্ঞান করে সিএনজি অটোরিকশা ও টমটমে তুলে তারা অপহরণ করে। পরে তাদের ভারতে পাচার করে দেয়- এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে একাধিক সূত্র।

গতকাল সকালে জৈন্তাপুর উপজেলার ডিবিরহাওর এলাকার সেন্ট্রাল জৈন্তা উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রী স্কুলে যাওয়ার পথে দুজন নারী ও দুজন পুরুষ কৌশলে অজ্ঞান করে তাকে একটি টমটমে ওঠায়। অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার পথে জ্ঞান ফিরলে ওই ছাত্রী টমটম থেকে লাফ দিয়ে চিৎকার শুরু করলে অপহরণকারীরা পালিয়ে যায়। গত বুধবার একইভাবে  জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত ইউনিয়নের দরবস্ত উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে একইভাবে অপহরণের চেষ্টা চালায়। ওই ছাত্রীটিও টমটম থেকে লাফ দিয়ে নেমে আত্মরক্ষা করে। এর আগে গত মঙ্গলবার একই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এক ছাত্রী বাড়ি থেকে স্কুলে যাওয়ার জন্য রওনা দেয়। পথে অপহরণকারী চক্রের দুই সদস্য ওই ছাত্রীকে একটি কাগজ পড়ে দেওয়ার জন্য বলে। কাগজটি পড়া শুরু করতেই ওই দুই মহিলা তার মুখ চেপে ধরে একটি টমটমে (ইজিবাইকে) তুলে নেয়। উপজেলার ছৈলা এলাকায় যাওয়ার পর মেয়েটি ধস্তাধস্তি করে টমটম থেকে লাফ দিয়ে নেমে পালাতে সক্ষম হয়। এদিকে গত ২০ মে চিকনাগুল উচ্চবিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রী স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে ও ২৯ মে সেন্ট্রাল জৈন্তা উচ্চবিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির অপর এক ছাত্রী স্কুলে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়। উভয় ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে থানায় জিডি করা হলেও এখনো তাদের কোনো খোঁজ মেলেনি।

সূত্র জানায়, ওই চক্রের সদস্যরা স্কুলছাত্রীদের অপহরণ করে ভারতে পাচার করে দেয়। পরে দালালদের মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন নিষিদ্ধ পল্লীতে বিক্রি করে দেওয়া হয়। ভারত সীমান্তবর্তী জৈন্তাপুর উপজেলায় অপহরণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। পুলিশের পক্ষ থেকেও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রচারণা ও সতর্কতামূলক নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

জৈন্তাপুর মডেল থানার ওসি গোলাম দস্তগীর আহমদ বলেন, ‘জৈন্তাপুরে একটি অপহরণকারী চক্র সক্রিয় রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে আমরা তথ্য পেয়েছি। অপহরণের একাধিক অভিযোগও পাওয়া গেছে। স্কুলছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও অপহরণকারী চক্রের সদস্যদের ধরতে পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় লোকজনদেরও সচেতন করা হচ্ছে।’ সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) মো. লুৎফর রহমান জানান, জৈন্তাপুরে স্কুলছাত্রী অপহরণ ও অপহরণ চেষ্টার ঘটনায় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ৮টি টিম মাঠে নামানো হয়েছে।

তারা অপহরণকারীদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে কাজ করছে। আশা করা যাচ্ছে এই চক্রের সঙ্গে যেসব নারী-পুরুষ রয়েছে তাদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।’

 

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর