বরিশালে পৃথক দুই মায়ের হাতে দুই শিশু হত্যার ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছে সবাইকে। দুই মা নিজের পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে অনৈতিক কর্মকান্ড করার সময় সন্তানরা দেখে ফেলায় তাদের হত্যা করা হয়েছে বলে স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে এমন ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন নারী বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থায় সমাজ পরিবর্তনের জন্য সমন্বিত উদ্যোগ চেয়েছেন শিক্ষাবিদরা। পরকীয়া প্রেমের কারণে সন্তান হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হলে অন্য মায়েরা সতর্ক হবেন বলে প্রত্যাশা আইনজীবীদের। এ ধরনের অপরাধ কমাতে সামাজিক ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার পাশাপাশি সুস্থ সংস্কৃতিচর্চা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। মায়ের কোলে সন্তান সবচেয়ে নিরাপদ। এটাই চিরন্তন। কিন্তু বরিশালের উজিরপুরে ২৭ মে রাতে শিশু দীপ্ত মন্ডল (৮) এবং সদর উপজেলার শায়েস্তবাদে একই দিন দুপুরে শিশু তন্নী আক্তারকে (১৩) শ্বাস রোধ করে হত্যার ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছে সবাইকে। পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে মায়ের বিকৃত যৌনাচার দেখে ফেলায় হত্যা করা হয় ওই দুই শিশুকে। উজিরপুর থানার ওসি আলী আরশাদ এবং নগরীর কাউনিয়া থানার ওসি আবদুর রহমান মুকুল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বরিশাল মহিলা পরিষদের সভাপতি নারী বিশেষজ্ঞ রাবেয়া বেগম জানান, মায়ের পরকীয়া প্রেমের কারণে দুই শিশুকে প্রাণ দিতে হয়েছে। গর্ভধারিণী মা যখন তার সন্তান হত্যা করেন, এর চেয়ে বড় ভাবনার বিষয় আর কিছু হতে পারে না। এ ঘটনা ভাবিয়ে তুলছে। তিনি বলেন, সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে এমন ঘটনা ঘটছে। দাম্পত্য জীবন সুখের না হলে স্বামী ও স্ত্রী উভয়েই বিপথগামী হন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন বাড়ানো এবং সুস্থ সমাজ বিনির্মাণ করতে হবে। একই সঙ্গে বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেলের বিকৃত সিরিয়াল বন্ধ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।
পরিবর্তনশীল সমাজের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে জনসচেতনতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন। তিনি বলেন, পরকীয়া সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। এই ব্যাধি এখন জীবন কেড়ে নিচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানের পথও রয়েছে। নৈতিক শিক্ষার পাশাপাশি আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং সুস্থ সামাজিক মূল্যবোধ জাগিয়ে তুলতে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। পরকীয়ার কারণে দুই সন্তান হত্যাকারী দুই মায়ের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছেন বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মানবেন্দ্র বটব্যাল। নিম্ন আদালতের সর্বোচ্চ শাস্তি উচ্চ আদালতেও বহাল থাকলে অন্য মায়েরা বা হবু মায়েরা সতর্ক হবেন বলে মনে করেন এই সিনিয়র আইনজীবী।
সার্বিক বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, মায়ের হাতে সন্তান খুনের চেয়ে বড় অপরাধ আর হতে পারে না।এর থেকে বড় উদ্বেগের খবর আর নেই।
তিনি বলেন, এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সব স্তরে নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে। ধর্মীয় ও সামাজিক অনুশাসন মেনে চলতে হবে। সুস্থ সংস্কৃতি চর্চা ফিরিয়ে আনতে হবে। এক দিনে না হলেও এসব উদ্যোগ নিলে ধীরে ধীরে সমাজ থেকে পরকীয়া নামের ব্যাধি কমবে এবং মায়ের হাতে আর কোনো সন্তানের জীবন যাবে না বলে মনে করেন অপরাধ বিশেষজ্ঞ এনামুল হক।
উজিরপুরে শিশু দীপ্ত ম ল হত্যায় তার মা সীমা ম লসহ চারজন এবং শায়েস্তাবাদে শিশু তন্নী আক্তার হত্যার ঘটনায় তার মা লিপি বেগম আদালতে স্বীকারোক্তমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বর্তমানে আসামিরা বরিশাল কারাগারে রয়েছেন। বরিশালে মায়ের হাতে দুই শিশু হত্যার ঘটনা এখন সব মহলে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।