সোমবার, ১৩ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

ভর্তি জালিয়াতি করে বহিষ্কৃত তবু থাকছেন ঢাবির হলে

নাসিমুল হুদা, ঢাবি

ভর্তি জালিয়াতি করে বহিষ্কৃত তবু থাকছেন ঢাবির হলে

ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস ও জালিয়াতি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন দুই শিক্ষার্থী। এ অভিযোগে তাদের ছাত্রত্ব বাতিল ও স্থায়ী বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নিয়ম অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে তাদের চলে যাওয়ার কথা থাকলেও দিব্যি হলে থাকছেন ওই দুই শিক্ষার্থী। তবে হল কর্তৃপক্ষের দাবি, এ বিষয়ে কিছুই জানেন না তারা।

এমন ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তারা বলছেন, হলগুলোতে আসন বরাদ্দের ক্ষেত্রে প্রশাসনের কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় কোন কক্ষে কারা অবস্থান করছে এ বিষয়ে তাদের কাছে তথ্য থাকে না। ফলে বহিষ্কৃত কোনো শিক্ষার্থী হলে থাকলেও দাফতরিক প্রক্রিয়ায় তা জানার কথা নয় হল প্রশাসনের।

বহিষ্কৃত হয়েও হলে থাকা ওই দুই শিক্ষার্থী হলেন মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের মো. বায়েজিদ, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের শিক্ষার্থী। আরেকজন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের মো. মাসুদ রানা, তিনি সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলে সংযুক্ত ছিলেন। এর মধ্যে ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি বহিষ্কৃত হন মো. বায়েজিদ। সিআইডির তদন্তে তাদের বিরুদ্ধে জালিয়াতির বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় তাকেসহ ১৫ জনকে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট। তিনি সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ৩২১ নম্বর কক্ষে দিব্যি থাকছেন বলে আশপাশের কক্ষগুলোর একাধিক শিক্ষার্থী নিশ্চিত করেছেন। নির্ভয়ে চলাফেরাও করেন। তিনি হল ছাত্রলীগের উপ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকও ছিলেন। হলে থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন বায়েজিদ। তবে তিনি বলেন, ‘আমি নিয়মিত হলে থাকি না। বরং মাঝে মাঝে বন্ধুদের কাছে আসি।’ তবে ৩২১ নম্বর কক্ষের পাশের কক্ষগুলোতে থাকা একাধিক শিক্ষার্থী তার নিয়মিত হলে থাকার বিষয়টি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছেন। হলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সোহানুর রহমানের ছাত্রলীগের পদপ্রার্থী থাকার সময় বায়েজিদ তার অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তবে তার নিয়মিত হলে থাকার বিষয়টি স্বীকার করেননি সোহানুর রহমান। এ বিষয়ে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আবদুর রহিম বলেন, ‘আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। এখনো বিষয়টি আমার নজরে আসেনি। এ রকম হয়ে থাকলে অতি দ্রুত ব্যবস্থা নেব।’

অন্যদিকে মাসুদ রানাকে ২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারি শৃঙ্খলা কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সিন্ডিকেট থেকে বহিষ্কার করা হয়। এমনকি ডাকসুর আলটিমেটামের ভিত্তিতে ওই বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি ৬৩ জন বহিষ্কৃতের তালিকাও প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ। ওই তালিকার ৩১ নম্বরে ছিল মাসুদ রানার নাম।

তবে বহিষ্কারাদেশের পরও দুই বছরের বেশি সময় ধরে হলের ২২ নম্বর কক্ষে অবস্থান করতেন মাসুদ রানা। সর্বশেষ গত মাসের শেষের দিকে হল ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। তার ছেড়ে দেওয়া সিট নিয়ে হল ছাত্রলীগের দুই পক্ষের উত্তেজনার পর তার হলে থাকার বিষয়টি সামনে আসে।

হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাসুদ রানা বহিষ্কৃত হলেও হল সংসদের ভিপি এম এম কামাল উদ্দিনের সঙ্গে সুসম্পর্কের সুবাদে অবৈধভাবে হলের ২২ নম্বর কক্ষে থাকতেন। নিজেও বহিষ্কৃত হওয়ার আগে হল ছাত্রলীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

তবে কামাল উদ্দিন বলেন, ‘উনি (ছাত্রলীগের) যে কমিটিতে পদ পেয়েছিলেন, সেই কমিটিতে আমি সহসভাপতি হয়েছিলাম। তাকে আমি শেল্টার দেব কীভাবে? আমরা বরং করোনার আগেই হল সংসদের পক্ষ থেকে কোনো মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীকে হলে না থাকার ব্যাপারে নোটিশ দিয়েছিলাম।’

এদিকে মাসুদ রানার হলের থাকার বিষয়টি জানতেন না বলে দাবি করে হলের বর্তমান প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আমি তো করোনার সময়ের মধ্যে প্রাধ্যক্ষ হয়েছি। এটা আমাকে কেউ বলেনি। এখন তো সে হল থেকে চলে গেছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর