মঙ্গলবার, ১৪ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

পদ্মা সেতুর উদ্বোধন নিয়ে দুশ্চিন্তার ছাপ চালক-যাত্রীদের

রাহাত খান, বরিশাল

পদ্মা সেতুর উদ্বোধন নিয়ে দুশ্চিন্তা ভর করেছে বরিশাল-ভাঙ্গা ৯৭ কিলোমিটার সিঙ্গেল মহাসড়কের পরিবহন চালক ও যাত্রীদের। সেতু চালু হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে ঢাকা-বরিশাল যাতায়াত করা যাবে বলে যে ধারণা করা হচ্ছে, তার উল্টো আশঙ্কা জেঁকে বসেছে তাদের। সেতু উদ্বোধনের পর বরিশাল-ভাঙ্গা মহাসড়কে দুর্ঘটনা বৃদ্ধি এবং অধিক যানবাহনের কারণে সড়কে গতি মন্থর হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। পদ্মা সেতুর সুফল পেতে অবিলম্বে প্রস্তাবিত ভাঙ্গা-বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক ছয় লেন করার দাবি জানান বরিশাল চেম্বার সভাপতি। পদ্মা উদ্বোধন হলে এই মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়বে স্বীকার করে ছয় লেন মহাসড়কের ভূমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম চলছে বলে জানিয়েছে সওজ বিভাগ। ২৫ জুনের পর এই মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়বে বলে স্বীকার করেছেন বিভাগীয় কমিশনারও। ছয় লেন মহাসড়ক দ্রুত নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন তিনি। বরিশাল থেকে পদ্মার পশ্চিম তীরের কাঁঠালবাড়ী পর্যন্ত সড়ক পথের দূরত্ব ১২৫ কিলোমিটার। বরিশাল নগরের নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের ডিপো থেকে বিআরটিসির একটি যাত্রীবাহী বাস কাঁঠালবাড়ী পৌঁছাতে সময় লাগে ৩ ঘণ্টা। সে হিসাবে প্রতি ঘণ্টায় গড়ে প্রায় ৪০ কিলোমিটার বেগে চলে বাসগুলো। পদ্মা নদীতে ফেরির কারণে এখন দীর্ঘ সময় বিরতির পর যানবাহন পারাপার হয় এপার-ওপার।

২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর আর থেমে থেমে যান চলবে না। একটির পেছনে আরেকটি যান চলবে এই মহাসড়কে। মন্থর হবে গতি। বিশেষ করে ৯৭ কিলোমিটার মহাসড়কের কোনো স্থানে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলে মনে করেন বরিশাল-কাঁঠালবাড়ী রুটের বাস চালক মো. রবিউল মিয়া।

বাসযাত্রী মো. হারুনুর রশিদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালে নগরের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে এক জনসমাবেশে ভাঙ্গা-বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক চার লেন নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। চার বছর হয়ে গেল এখন পর্যন্ত চার লেনের কোনো খবর নেই। এখন রাস্তার যে পরিস্থিতি ২৫ জুন যদি পদ্মা সেতু চালু হয় তাহলে গাড়ির জট আরও বাড়বে। জনদুর্ভোগ বাড়বে।

আরেক যাত্রী রফিকুল ইসলাম বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার সুফল পেতে ভাঙ্গা-বরিশাল সড়ক প্রশস্ত করতে হবে।

বরিশাল-পাটুরিয়া-ঢাকা রুটের বাসচালক হান্নান হাওলাদার বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হলে তারাও ওই সেতু পার হয়ে ঢাকা যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। ওদিকের রাস্তাডা (পদ্মা থেকে ভাঙ্গা) বড়-ই আছে। কিন্তু ভাঙ্গা থেকে বরিশাল পর্যন্ত ৯৭ কিলোমিটার সিঙ্গেল রাস্তা। এ রাস্তাডা বড় হইলে আমাগো লাইগ্গা ভালো হইতো। তা না হইলে জ্যাম-জট হবে। অনেক কষ্ট হবে। ব্রিজের সুফল বিফলে যাবে।’

বরিশাল-ঢাকা রুটের সাকুরা পরিবহনের ম্যানেজার আনিছুর রহমান বলেন, ‘পদ্মা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ফোর লেন রয়েছে। ভাঙ্গা থেকে বরিশাল পর্যন্ত আগের রাস্তাই রইয়া গ্যালো। সেতু উদ্বোধন হলে গাড়ি বাড়বে, যানজটও বাড়বে। ভাঙ্গা-বরিশাল পর্যন্ত ফোর লেন করা দরকার।’ 

বরিশাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ উপকৃত হবে। কিন্তু একটু সমস্যা থেকেই গেল। ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত সড়কটা ছয় লেন করতে হবে।

ভাঙ্গা-বরিশাল-কুয়াকাটা ছয় লেন প্রকল্পের বরিশাল অংশের মুখপাত্র এবং বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মিন্টু রঞ্জন দেবনাথ বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে ভাঙ্গা-বরিশাল মহাসড়কে গাড়ির চাপ নিঃসন্দেহে বাড়বে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সড়কের বাঁক, বাজার বা যেখানে যানজট হতে পারে সেখানে এইচবিবি সাময়িক প্রশস্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফোর লেনের অগ্রগতির বিষয়ে তিনি বলেন, ৫টি এলএ কেসের প্রশাসনিক অনুমোদন মন্ত্রণালয় দিয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হলে পরবর্তী টেন্ডারিং কার্যক্রম শুরু করবে সওজ।

এ বিষয়ে বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিন-উল আহসান বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে রাস্তায় গাড়ির চাপ সামাল দেওয়ার জন্য ভাঙ্গা-বরিশাল-কুয়াকাটা প্রস্তাবিত ছয় লেন দ্রুত বাস্তবায়ন করা জরুরি। এ বিষয়ে ভূমি অধিগ্রহণসহ প্রকল্পের সার্বিক তদারকি করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর