সোমবার, ২০ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামের অভিশাপ ঘুচবে কবে

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের অভিশাপ ঘুচবে কবে

চট্টগ্রাম মহানগরের ‘অভিশাপ’ জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রায় ১১ কোটি টাকার চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এসব প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ৩৩৯ কোটি টাকা। কিন্তু এসব অর্থ ব্যয়ের সুফল পাচ্ছে না নগরবাসী। বর্ষা শুরুর বৃষ্টিতেই ডুবছে নগর। গত চার দিনের টানা বর্ষণে নগরের অধিকাংশ এলাকা পানির নিচে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে কবে মিলবে জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান চারটি প্রকল্পের সুফল। মুক্তি মিলবে জলাবদ্ধতা থেকে। গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে স্বয়ং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর বাড়ির উঠান ও সামনের রাস্তাও তলিয়ে যায়। তাছাড়া টানা বর্ষণে নগরীর বাদুরতলা, এক কিলোমিটার, বাকলিয়া, কেবি আমান আলী রোড, বহদ্দারহাট, মাইজপাড়া, টেক্সটাইল, বিজয়নগর, কাপাসগোলা, হালিশহর, ষোলোশহর দুই নম্বর গেট, মুরাদপুর, শুল্কবহর, কাতালগঞ্জ, চকবাজার, ফিরিঙ্গিবাজার এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। জানা যায়, নগরে জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) ‘চট্টগ্রাম   শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’  শীর্ষক ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ২৭০ কোটি টাকা। চউক ‘কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক  নির্মাণ’ শীর্ষক ২ হাজার ৩১০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৭০ কোটি টাকা। চসিক বাস্তবায়ন করছে ১ হাজার ৩৬২ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘বহদ্দারহাট থেকে বারইপাড়া হয়ে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত নতুন খাল খনন’ প্রকল্প। এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৯১৪ কোটি টাকা। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ১ হাজার ৬২০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করছে ‘চট্টগ্রাম মহানগরের বন্যানিয়ন্ত্রণ জলাবদ্ধতা নিষ্কাশন উন্নয়ন’ প্রকল্প। এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৮৪ কোটি টাকা। কিন্তু বড় চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন চলমান থাকলেও এর কোনো সুফলই পাওয়া যাচ্ছে না। বৃষ্টি হলেই হচ্ছে জলাবদ্ধতা। চলমান প্রকল্পগুলোতে বর্তমানে খালের দুই পাশে প্রতিরোধ দেয়াল ও সড়ক নির্মাণ, কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে যুক্ত খালগুলোর মুখে স্লুইসগেট স্থাপন, খালের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার-উন্নয়ন, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ ও নতুন নালা-নর্দমা নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে কাজগুলো এখনো চলমান।  বৃহত্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব এইচ এম মুজিবুল হক বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্প দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক সত্য হলো, এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন ধীরগতির কারণে বিলম্বিত হচ্ছে। বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো আন্তরিক হয়ে কাজ করলে দ্রুত শেষ হতো। মানুষও এসব কাজের সুফল পেত। কিন্তু এখন বৃষ্টি মানেই নগরবাসীর কাছে জলাবদ্ধতা নামে একটি আতঙ্ক। চসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও জলাবদ্ধতা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মোবারক আলী বলেন, টানা বর্ষণের কারণে কিছু নিচু এলাকায় পানি জমে গেলেও তা দ্রুতই নেমে যায়। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজের আওতায় খাল ও ড্রেনে বাঁধ দেওয়া হয়। ফলে পানি নামতে বিলম্ব হয়। এমন পাঁচটি জায়গায় ইতোমধ্যে বাঁধ কেটে দেওয়া হয়। ড্রেন থেকে বাঁধ সরানোর কারণে পানি চলাচল স্বাভাবিক হচ্ছে। চউকের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি এবং জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতার বাইরে থাকা খাল ও নালা-নর্দমাগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করার কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমানে নগরে উৎপাদিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিকল্পিত নয়। ফলে ময়লা-আবর্জনা খাল ও নালা-নর্দমায় মিশে যাচ্ছে। তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। চসিক সূত্রে জানা যায়, নগরে ছোট-বড় মোট ৫৭টি খাল আছে। এর মধ্যে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের অধীনে ৩৬টি খাল খনন-সংস্কার কাজ চলছে।

বাকি খালগুলো চসিক নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে পরিষ্কার করার কথা থাকলেও তা হয়নি। তবে কয়েক মাস আগে থেকে চসিক খাল পরিষ্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করে। অন্যদিকে, নগরের ৪১ ওয়ার্ডে খাল-নালা আছে ১ হাজার ১৩৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়াই খালের পাড় রয়েছে ১৯ কিলোমিটার। উন্মুক্ত নালা রয়েছে ৫ হাজার ৫২৭ স্থানে। বর্ষাকালে এসব নালা-ড্রেনও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। এক বছরে নালা, ড্রেন ও খালে পড়ে মারা গেছেন পাঁচজন। খোঁজ  মেলেনি একজনের।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর