সোমবার, ২৭ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা
কোরবানির ঈদ

দেশি পশুতেই মিটবে চাহিদা

উবায়দুল্লাহ বাদল

দেশি পশুতেই মিটবে চাহিদা

করোনার কারণে গত দুই বছর কোরবানি তুলনামূলক কম হলেও এ বছর তা বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সরকারের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। তারা বলছেন, দেশে এবার প্রায় সোয়া কোটি কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত রয়েছে। অর্থাৎ চাহিদার চেয়ে ২০ লাখেরও বেশি পশু রয়েছে। ফলে দেশি পশুতেই মিটবে কোরবানির চাহিদা। কোরবানি উদযাপনে সরকারের পক্ষ থেকে পরিপূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফার্মগেটে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে কোরবানির পশুর চাহিদা নিরূপণ, সরবরাহ ও অবাধ পরিবহন নিশ্চিতকরণ সংক্রান্ত আন্তমন্ত্রণালয় সভা শেষে মন্ত্রী এ কথা জানান। তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছরের মতো এবারও কোরবানির পশুর চাহিদা নিরূপণ করা হয়েছে। কোরবানির চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত পশু প্রস্তুত আছে। এবার কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ১ কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯টি। ফলে কোরবানির জন্য কোনোরকম সংশয়, সংকট বা আশঙ্কার কারণ নেই। কোরবানির হাটে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা হবে। রোগগ্রস্ত পশু হাটে বিক্রি করতে দেওয়া হবে না। ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ হয়রানির শিকার হবেন না, ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত সদস্য নিয়োগ করা হবে। আমরা সুন্দরভাবে আসন্ন ঈদুল আজহা উদযাপন করতে চাই।’ বর্তমানে দেশের ১৬টি জেলায় চলছে বন্যা। জুলাই মাসের শুরুতেই জমে উঠবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন পশুর হাট। প্রাণিসম্পদ অধিদফতর বলছে, দেশে এবারও পশুর সংকট নেই, আমদানির প্রয়োজন হবে না। তবে অধিদফতরের মতো খামারি-ব্যাপারিরাও বলছেন, পশুর দাম এবার কিছুটা চড়া থাকবে। দুই বছর করোনার আঘাতে অনেকেই কোরবানি দেননি। করোনার প্রকোপ কিছুটা কম হওয়ায় এ বছর কোরবানির সংখ্যা বাড়বে। পাশাপাশি বাড়বে কোরবানির পশুর দাম। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্ববাজারের তেলের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে ইতোমধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। দাম বেড়েছে পশুখাদ্যেরও। ইতোমধ্যে বাজারে গরুর গোশতের দাম প্রতি কেজি চলছে ৭৫০ টাকায়। ফলে এবারের কোরবানিতে পশুর দাম থাকবে ঊর্ধ্বমুখী- সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। পশু ব্যবসায়ী ও সাদিক এগ্রোর কর্ণধার মো. ইমরান হোসেন জানান, সম্প্রতি ডিজেলের   দাম বাড়ায় কোরবানির পশু পরিবহন ব্যয় বেড়েছে। সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো বেশ কয়েক মাস ধরে গো-খাদ্যের দাম বেড়েছে। গবাদি পশুর উৎপাদনে ৬৫ দশমিক ৭০ শতাংশ খরচই হয় খাদ্যে।

এ ছাড়া শ্রমিক, ওষুধ, আনুষঙ্গিক মিলিয়ে বাকি ২৪ শতাংশ খরচ হয়। এরপর লাভ। ফলে এ বছর পশুর দাম চড়া যাবে তা নিশ্চিত করেই বলা যায়।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মতে, ২০১৬ সালে ৯৮ লাখ ১৩ হাজার পশু কোরবানি হয়। তারপর থেকে ক্রমাগত বেড়ে ২০১৭ সালে ১ কোটি ৪ লাখ, ২০১৮ সালে ১ কোটি ৬ লাখ ও ২০১৯ সালে ১ কোটি ৬ লাখ ১৪ হাজার পশু কোরবানি হয়। ২০২০ সালের মার্চ থেকে দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে ওই বছর ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ২৬৩টি পশু কোরবানি হয়। ২০২১ সালে কোরবানিযোগ্য পশু ছিল ১ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি। এর মধ্যে কোরবানি হয়েছে ৯০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪২টি পশু। চলতি বছর কোরবানিযোগ্য গবাদি পশুর সংখ্যা ১ কোটি ২১ লাখের কিছু বেশি। এ বছর কোরবানির সংখ্যা ১ কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বন্যায় পশু সম্পদের ক্ষতি হলেও এবার আমাদের কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা সোয়া ১ কোটি রয়েছে। গত বছর ৯০ লাখের মতো পশু কোরবানি হয়েছিল। এবার এ সংখ্যা বাড়তে পারে। তারপরও দেশি পশুতেই আমাদের কোরবানির চাহিদা মিটবে ইনশা আল্লাহ। আমাদের বিদেশ থেকে কোরবানির পশু আমদানি করতে হবে না।’

ছোট পশুর চাহিদা থাকবে বেশি : ২০১৭ সাল থেকে ছাগল ও ভেড়ার চেয়ে গরু-মহিষ কোরবানি দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছিল। তবে গত বছর এতে ছেদ পড়ে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতর জানিয়েছে, গত বছর ছাগল ও ভেড়া কোরবানি হয়েছে ৫০ লাখ ৩৮ হাজার ৮৪৮টি; গরু-মহিষ কোরবানি হয়েছে ৪০ লাখ ৫৩ হাজার ৬৭৯টি। যেখানে করোনার আগে ২০১৯ সালে ৫৭ লাখ ১১ হাজার ৪৩৪টি গরু-মহিষ কোরবানি হয়েছিল এবং ছাগল ও ভেড়া হয়েছিল ৪৯ লাখ ১ হাজার ১৮৮টি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় এবারও ছোট গরু কিংবা ছাগল ও ভেড়ার দিকে ঝুঁকতে পারেন ক্রেতারা। এ ছাড়া দেশে মোট কোরবানির সংখ্যাও কমতে পারে বলে মনে করছেন তারা। তবে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (খামার) জিনাত সুলতানা বলেন, গত দুই বছর কোরবানির সময় লকডাউন ছিল। এবার সে পরিস্থিতি নেই, ফলে গত বছরের চেয়ে ১০ শতাংশ বাড়তি চাহিদা থাকতে পারে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানায়, গত বছর কাগজে-কলমে সারা দেশে বসেছিল ২ হাজার ৪০০টি হাট। এ বছরও এ রকমেরই হবে।  প্রতিটি হাটেই ভেটেরিনারি চিকিৎসক দল কাজ করবে। এবার ২৫ হাজার কসাইকে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পশু জবাইয়ের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর