বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

পদের চেয়ে দ্বিগুণ কর্মকর্তা

♦ যুগ্ম সচিব হলেন আরও ৮৪ জন ♦ কাজ করতে হবে আগের পদেই

উবায়দুল্লাহ বাদল

পদের চেয়ে দ্বিগুণ কর্মকর্তা

উপসচিব থেকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দিয়েছে সরকার। নিয়মিত ব্যাচ হিসেবে বিসিএস ২০তম ব্যাচের ৩৫ জনসহ মোট ৮৪ কর্মকর্তা এ পদোন্নতি পেয়েছেন। বাকি কর্মকর্তারা আগের বঞ্চিত ও সদ্য বিলুপ্ত হওয়া ইকোনমিক ক্যাডারের, যারা প্রশাসন ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। গতকাল এ সংক্রান্ত দুটি প্রজ্ঞাপনে ৮২ জনের নাম প্রকাশ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এদের মধ্যে ৭৮ জন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য সরকারি দফতরে কর্মরত আছেন। চারজন বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাস ও হাইকমিশনে কর্মরত। বাকি দুজন লিয়েনে থাকায় তারা ফিরলে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের যোগদানপত্র ই-মেইলে (ংধষ@সড়ঢ়ধ.মড়া.নফ) পাঠাতে বলা হয়েছে। পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হলেও পদায়ন করা হয়নি। শিগগিরই বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ইন-সিটু (আগের পদে রাখা) করা হবে। ফলে তাদের আগের পদেই কাজ করে যেতে হবে। এ পদোন্নতির ফলে সরকারের যুগ্ম সচিবের সংখ্যা দাঁড়াল ৭৩৪ জনে। অথচ অনুমোদিত পদের সংখ্যা মাত্র ৩৩০। অর্থাৎ যুগ্ম সচিবের পদের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি কর্মকর্তা হলো প্রশাসনে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, স্থায়ী পদ না থাকায় এমনিতেই অনেক যুগ্ম সচিবকে নিচের পদে কাজ করতে হচ্ছে, তার ওপর নতুন করে পদোন্নতি দেওয়া হলো। পদোন্নতিপ্রাপ্ত বেশির ভাগ যুগ্ম সচিবকে বর্তমান কর্মস্থলে ইন-সিটু (উপসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করা স্থানে) থাকতে হবে। পদের চেয়ে বেশি কর্মকর্তা হওয়ায় পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ইন-সিটু (আগের পদে রাখা) করা হবে। অর্থাৎ এসব কর্মকর্তাকে আগের পদেই কাজ করতে হবে। ফলে পদোন্নতি পাওয়ার পরও তারা নতুন ডেস্ক পাচ্ছেন না সেটা প্রায় নিশ্চিত। অতীতেও পদোন্নতির পর পদের চেয়ে কর্মকর্তা বেশি হওয়ায় আগের পদেই কাজ করতে হয়েছে। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের ২৯ অক্টোবর ২০তম ব্যাচকে নিয়মিত ধরে প্রথম দফায় ২২২ জনকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ১৬৬ জন কর্মকর্তা ছিল ২০তম ব্যাচের। ওই ব্যাচের আরও ২২ জন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানসহ যোগ্যতা থাকা সত্ত্বে কমবেশি ৭৫ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতির জন্য বিবেচনা করা হয়নি। এবারের পদোন্নতি মূলত ২০ ব্যাচের অবশিষ্ট কর্মকর্তাকে কেন্দ্র করেই। কিন্তু এ দফায় নিয়মিত ব্যাচ হিসেবে ২০ ব্যাচের মাত্র ৩৫ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এমনকি মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের ২২ জন কর্মকর্তার মধ্যে মাত্র ১৩ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। ৯ জনকেই আমলে নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া বিসিএস ১৮তম ব্যাচের একজন কর্মকর্তাকেও পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, যাদের পদোন্নতি হয়নি তাদের অনেকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রয়েছে। কারও কারও নানা ধরনের অসঙ্গতিও রয়েছে। এমনকি অনেকের বিরুদ্ধে মাঠে কাজ করার সময় অসদাচরণের অভিযোগও রয়েছে। এসব কারণে অনেকের পদোন্নতি হয়নি।

‘সরকারের উপসচিব, যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদে পদোন্নতি বিধিমালা, ২০০২’-এ বলা হয়েছে, যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ও ৩০ শতাংশ অন্যান্য ক্যাডারের উপসচিব পদে কর্মরতদের বিবেচনায় নিতে হবে। বিধিমালা অনুযায়ী, উপসচিব পদে কমপক্ষে পাঁচ বছর চাকরিসহ সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের সদস্য হিসেবে কমপক্ষে ১৫ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা বা উপসচিব পদে কমপক্ষে তিন বছর চাকরিসহ ২০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকলে কোনো কর্মকর্তা যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির জন্য বিবেচিত হন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর