শুক্রবার, ১ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা
গ্রামীণ টেলিকমের মামলা

আইনজীবী পেয়েছেন ১২ কোটি, হাই কোর্টের বিস্ময় প্রকাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে রিটকারীদের আইনজীবীকে ১২ কোটি টাকা দিয়ে সমঝোতার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক হাই কোর্ট বেঞ্চ। তিনি বলেন, ‘শুনেছি শ্রমিকদের আইনজীবীকে অর্থের বিনিময়ে হাত করে তাদের মামলায় আপস করতে বাধ্য করা হয়েছে। কোর্টকে ব্যবহার করে অনিয়ম যেন না হয়। যদি সবকিছু আইন অনুযায়ী না হয়, তবে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে। আমি চাই না কোর্ট এবং আইনজীবীর সততা নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠুক।’ এরপর আদালত শ্রমিকরা কত টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন, তার তালিকা দাখিল করার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে এ-সংক্রান্ত নথিও দাখিল করতে বলা হয়েছে। হাই কোর্ট বলেন, বাংলাদেশ কেন, উপমহাদেশে এমন কোনো আইনজীবী জন্ম নেননি, যার ফি ১২ কোটি টাকা হবে। এ সময় ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের আইনজীবীকে উদ্দেশ করে কত টাকা নিয়েছেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আমি ২০ লাখ টাকা নিয়েছি।’  বিচারপতি বলেন, ‘চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের আইনজীবী কীভাবে ১২ কোটি টাকা নেন।’ এ সময় আইনজীবীরা আদালতকে জানান, চাকরিচ্যুত শ্রমিকরা এ পর্যন্ত ৩৮০ কোটি টাকা পেয়েছেন। বাকি আট শ্রমিকের চারজন দেশের বাইরে থাকায় তাদের টাকা পরিশোধ করা হয়নি। চারজন শ্রমিক মারা যাওয়ায় তাদের ওয়ারিশ জটিলতা নিরসন না হওয়ায় তাদের অর্থ পরিশোধ সম্ভব হয়নি। আদালতে গ্রামীণ টেলিকমের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান। শ্রমিকদের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী। পরে আইনজীবী ইউসুফ আলী সাংবাদিকদের বলেন, ১২ কোটি টাকা নেওয়ার খবর একটা গুজব। একটা নিউজ পোর্টাল কোনো তথ্য ছাড়াই নিউজ ছেপেছে। মামলা প্রত্যাহারের শর্তে গ্রামীণ টেলিকমের চাকরিচ্যুত ১৭৬ জন শ্রমিকের পাওনা বাবদ ৪৩৭ কোটি টাকায় সমঝোতা করা প্রতিষ্ঠানটির মালিক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এর আগে ৭ ফেব্রুয়ারি মুহাম্মদ ইউনূসের মালিকানাধীন গ্রামীণ টেলিকমের অবসায়ন চেয়ে হাই কোর্টে আবেদন করা হয়। গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষে এ আবেদন দায়ের করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে গ্রামীণ টেলিকমে শ্রমিক ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে শ্রমিক অসন্তোষ চলে আসছে। শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন (বি-২১৯৪) সিবিএর সঙ্গে আলোচনা না করেই এক নোটিসে ৯৯ কর্মীকে ছাঁটাই করে গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ। গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আশরাফুল হাসান স্বাক্ষরিত এক নোটিসের মাধ্যমে এ ছাঁটাই করা হয়েছে। এরপর সেই নোটিসের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে রিট করেন ২৮ জন কর্মী। এই ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে ড. ইউনূসকে তলব করেছিলেন হাই কোর্ট। ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল দিয়েছিলেন শ্রমিকদের পুনর্বহালের নির্দেশ। এ ছাড়া গত বছর ১২ সেপ্টেম্বর শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করে ঢাকার কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদফতর। ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে এ মামলা করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদফতরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর