শনিবার, ২ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

বগুড়ার দই প্রতিদিন বিক্রি হয় অর্ধ কোটি টাকার

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ার দই প্রতিদিন বিক্রি হয় অর্ধ কোটি টাকার

ঐতিহ্যবাহী বগুড়ার দই, প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে অর্ধ কোটি টাকার। দেশে-বিদেশে এই দইয়ের বিশাল বাজার তৈরির সম্ভাবনা থাকলেও শুধু সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না। স্বাদে অতুলনীয় দই দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দই তৈরির কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দক্ষতা ছাড়া ভালো মানের দই তৈরি করা যায় না। দই তৈরির মূল উপকরণ ভালো মানের দুধ। দুধ যত ভালো মানের হবে দই ততটা স্বাদের হবে। দই তৈরির কাজে বিশেষ দক্ষ কারিগর না হলে উপকরণ নষ্ট হয়ে যায়। মিষ্টি দইয়ের জন্য চিনি এবং সাদা বা টক দইয়ের জন্য চিনির প্রয়োজন হয় না। দইয়ের কারিগররা ডায়াবেটিক রোগীদের জন্যও দই তৈরি করছেন। এ দইও বেশ বিক্রি হচ্ছে। বগুড়ার প্রবীণরা জানান, দইয়ের শুরুটা হয়েছিল বগুড়া শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে শেরপুর উপজেলায়। উনিশ শতাব্দীর ৬০-এর দশকের দিকে গৌর গোপাল পাল নামের এক ব্যবসায়ী প্রথম পরীক্ষামূলক দই তৈরি করেন। তখন দই সম্পর্কে সবার ভালো ধারণা ছিল না। গৌর গোপালের ওই দই-ই ধীরে ধীরে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী নবাব পরিবার ও সাতানী পরিবারের কাছে এ দই সরবরাহ করতেন গৌর গোপাল। সে সময় এই দইয়ের নাম ছিল নবাববাড়ির দই।

 নবাবী আমলে বিশেষ খাবার ছিল এ দই। দিন গড়িয়ে গেলেও এখনো বিশেষ খাবার হিসেবে ধরে রেখেছে দই। বিয়ে, জন্মদিন, ঈদ, পূজা, আকিকা, হালখাতা বা পারিবারিক যে কোনো অনুষ্ঠানে দই পরিবেশিত হয়। গৌর গোপালের পর রুচিতা দই বাজারজাত শুরু করে।

বগুড়া শহরের কবি নজরুল ইসলাম সড়কের আকবরিয়া দই, এশিয়া সুইটমিট, এনাম দই ঘর, নবাববাড়ির রুচিতা, ফুড ভিলেজ দই ঘর, বিআরটিসি মার্কেটের দই বাজার, মিষ্টিমহল, সাতমাথায় দই ঘর, মহরম আলী, নিউ মহরম আলী, শেরপুর দই ঘর, চিনিপাতাসহ অর্ধশতাধিক শো রুমে দই বিক্রি হচ্ছে।

প্রতি পাতিল বিক্রি হয় আকার অনুযায়ী ৩৫ টাকা থেকে ২৮০ টাকায়। ছোট বড় বিভিন্ন আকৃতির মাটির পাত্রে দই ভরানো হয়। আগে কেজি হিসেবে বিক্রি হলেও এখন উপকরণের মূল্য বৃদ্ধির কারণে দই বিক্রি হয় প্রতি পিস হিসেবে। বগুড়া শহরের চিনিপাতা দই দোকানে মেজবান দই ২৮০ টাকা, স্পেশাল দই ২৬০ টাকা, সাদা দই ২৪০ টাকা, টক দই বড় পাতিল ১৮০ ও ছোট পাতিল ১০০ টাকা, কাপ দই ৬৫, ক্ষিরসা সরা ৫২০ টাকা করে প্রতি পিস বিক্রি হয়। জেলার ১২টি উপজেলা মিলিয়ে আনুমানিক ৫০০টি দোকান রয়েছে। ৫০০ দোকানে প্রতিদিন গড়ে ৫০টি করে দই বিক্রি ধরা হলে পিসের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৫০০। আর ২৫০০ পিসকে গড়ে ২০০ টাকা করে বিক্রি ধরা হলে টাকার অঙ্ক গিয়ে দাঁড়ায় ৫০ লাখ টাকা।

আকবরিয়া লিমিটেডের চেয়ারম্যান হাসান আলী আলাল জানান, দই তৈরির সব উপকরণের দাম বেড়েছে। বাজারে রয়েছে প্রতিযোগিতা। সে প্রতিযোগিতাকে ছাপিয়ে বাজারে টিকে থাকতে ভালো মানের দই তৈরি করা হচ্ছে। আকবরিয়া দইয়ের চাহিদা রয়েছে। আকবরিয়ার দই বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হয়ে থাকে। রাজধানী ঢাকায় ছয়টিসহ সারা দেশে ৪৩টি শোরুমে আমাদের দই বিক্রি হয়ে থাকে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর