রবিবার, ৩ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

সাবেক ছিটমহলে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও এমপিওভুক্ত হয়নি

শিক্ষার আলো জ্বালানিয়া মানুষগুলো হতাশায়

নজরুল মৃধা, রংপুর

বিনিময়ের মাত্র সাত বছরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সাবেক ছিটমহলের প্রায় ৫০ হাজার বাসিন্দার জীবনমান পাল্টে গেলেও শিক্ষার আলো জ্বালানিয়া মানুষগুলো রয়েছে হতাশায়। ২০১৫ সালের ১ আগস্ট ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময় হলে ১১১টি ছিটের বাসিন্দা বাংলাদেশের নগরিকত্ব পান। সেই সঙ্গে পান ভূমির অধিকার। নিজস্ব ভূখ  পাওয়ার পরে ছিটমহল বাসিন্দারা শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে একে একে গড়ে তোলেন ৪১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে আটটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। বাকিগুলো বেসরকারি পর্যায়ে উচ্চ বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও মাদরাসা রয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একটিও এখন পর্যন্ত এমপিওভুক্ত হয়নি। ফলে শিক্ষকরা আধপেটা থেকে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন। ছিটমহল আন্দোলনের সাবেক নেতা ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুড়িগ্রামের তিন উপজেলায় ১২টি ছিটের লোকসংখ্যা আনুমানিক ১০ হাজার। এখানে চারটি উচ্চবিদ্যালয়, তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শেখ ফজিলাতুন নেছা নামে একটি দাখিল মাদরাসা এবং মইনুল-মোস্তাফা নামে একটি মহাবিদ্যালয় রয়েছে। লালমনিরহাটে ৫৯টি সাবেক ছিটে সাতটি উচ্চ বিদ্যালয়, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। সাবেক এসব ছিটে ১৫ হাজারের মতো বাসিন্দা রয়েছে। পঞ্চগড়ে সাবেক ৩৬টি ছিটে প্রায় ২৫ হাজারের মতো জনসংখ্যা। এখানে উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে ১৪টি, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে চারটি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নামে আলিম মাদরাসা রয়েছে একটি এবং কলেজ রয়েছে দুটি। নীলফামারীতে সাবেক চারটি ছিটে জনসংখ্যা আনুমানিক ৫০০ থেকে ৭০০। এখানে একটি হাইস্কুল রয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী পাঠ গ্রহণ করছে।

 প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গড়ে ১৫ থেকে ১৮ জন শিক্ষক রয়েছে। ৩১টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাড়ে ছয় শরও বেশি শিক্ষক পাঠদান করছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এমপিওভুক্ত না হওয়ায় শিক্ষকরা নামমাত্র সম্মানির বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের পাঠ দিচ্ছেন। ফলে অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

কুড়িগ্রামের দাশিয়াছড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবদুল মান্নান খান, মো. হায়দার আলী, ময়নুল-মোস্তফা মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষক মিজানুর রহমান, সমন্বয়পাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নূর ইসলামসহ অনেকে তাদের কষ্টের কথা জানিয়ে বলেন, ছিটমহল বিনিময়ের পরে সব ক্ষেত্রে উন্নয়ন হয়েছে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করা হয়েছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় এবং মাদরাসার কোনো শিক্ষকই এমপিওভুক্ত হয়নি। ফলে আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছি।

ছিটমহল আন্দোলন সমন্বয় কমিটির সাবেক সভাপতি গোলাম মোস্তফা খান বলেন, মাত্র সাত বছরে এখানকার যে উন্নয়ন হয়েছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমরা মায়ের মতো সম্মান করি। তার কাছে আকুল আবেদন তিনি যেন সাবেক ছিটমহলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এমপিওভুক্ত এবং অবকাঠোমো উন্নয়নের  বিষয়ে নজর দেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর