রবিবার, ৩ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা
ঈদযাত্রা

টিকিটের আশায় ট্রেন-বাস কাউন্টারে ভিড়

নিজস্ব প্রতিবেদক

টিকিটের আশায় ট্রেন-বাস কাউন্টারে ভিড়

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে দ্বিতীয় দিনের মতো ট্রেনের অগ্রিম টিকিট কাটতে গতকাল রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে উপচে পড়া ভিড় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

আসন্ন ঈদুল আজহা উদযাপনে বাড়ি ফিরতে অগ্রিম টিকিটের আশায় ট্রেন ও বাস কাউন্টারগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন যাত্রীরা। ট্রেনের অগ্রিম টিকিট গত শুক্রবার বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রথম দিনে উপচেপড়া ভিড় ছিল কাউন্টারগুলোতে। একই অবস্থা ছিল গতকালও। বিক্রি শুরু হওয়ার তিন ঘণ্টায়ই শেষ হয়ে যায় ৬ জুলাইয়ের টিকিট। টিকিট না পেয়ে অনেকে আবার লাইনে দাঁড়িয়ে গেছেন। এদিকে বাস কাউন্টারগুলোতে অগ্রিম টিকিট প্রত্যাশীদের তেমন ভিড় না থাকলেও ৭/৮ তারিখের টিকিট আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। তবে উল্টো চিত্র লঞ্চ টার্মিনালে। ভাড়া কমালেও যাত্রীর চাপ নেই সদরঘাট টার্মিনালে।

ট্রেনের টিকিটের জন্য ৩৬ ঘণ্টা অপেক্ষা : গত শুক্রবার রাত ৮টায় নারায়ণগঞ্জ থেকে কমলাপুর রেলস্টেশনে এসে টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন রিয়াজুল ইসলাম। ৬ জুলাইয়ের টিকিট কেনার জন্য এসেছিলেন তিনি। গতকাল সকালে এ টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। কিন্তু রিয়াজুল লাইনের পেছনের দিকে থাকায় টিকিট পাননি। সকাল ৮টায় টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার পর সকাল ১০টার পরপরই কাউন্টারে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে যায়। টিকিট না পেয়ে গার্মেন্ট কারখানায় কাজ করা রিয়াজুল অফিস থেকে গতকালও ছুটি নেন। সকালেই ফের দাঁড়িয়ে যান লাইনে। সন্ধ্যায় তার সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। রিয়াজুল জানান, ঈদে বাড়ি যেতে হবে। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ করতে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের ৬ জুলাইয়ের টিকিট নিতে এসেছিলাম। না পেয়ে ৭ জুলাইয়ের টিকিট নিতে আগেভাগেই লাইনের প্রথমদিকে দাঁড়িয়ে গেছি। আশা করি সকালে (আজ) টিকিট পাব। পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পার্বতীপুরের একই ট্রেনের টিকিট নিতে শুক্রবার রাতে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন রমজান আলীও। কিন্তু লাইনে পেছনের দিকে থাকায় তিনিও গতকাল সকালে টিকিট পাননি। অগত্যা তিনিও ৭ জুলাইয়ের টিকিটের জন্য সকাল থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে গেছেন।

সকাল ৮টায় কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, টিকিটের জন্য যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। স্টেশনের ১৬টি কাউন্টারের সামনে ছিল টিকিট প্রত্যাশীদের দীর্ঘ লাইন। সকাল ৮টায় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে টিকিট বিক্রি শুরু হলেও ১১টার মধ্যে নারীদের একটি কাউন্টার ছাড়া পুরুষদের সব কাউন্টারে টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে যায়। চাহিদার তুলনায় টিকিট কম থাকার কারণে দূরদূরান্ত থেকে টিকিট নিতে আসা যাত্রীদের টিকিট না পেয়েই প্ল্যাটফরম ছাড়তে হয়েছে। কাউন্টারের পাশাপাশি অনলাইনেও ছিল টিকিটের চাপ। গতকাল কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ঈদযাত্রা টিকিট বিক্রি কার্যক্রম পরিদর্শন করেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। এসময় একটি অনুষ্ঠানে ইসলামী ব্যাংকের পক্ষ থেকে দেওয়া ৫০টি লাগেজ ট্রলি গ্রহণ করেন তিনি। বক্তব্যে রেলমন্ত্রী বলেন, যাত্রী চাহিদার তুলনায় টিকিটের সংখ্যা কম হওয়ায় অনেকে টিকিট পাচ্ছেন না। চাহিদার তুলনায় আমাদের সক্ষমতার ফারাক যতক্ষণ পর্যন্ত না কমানো যাবে, ততদিন পর্যন্ত এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি নেই।

বাস টিকিটে চাহিদা বেশি তারিখের : আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হলেও কাউন্টারগুলোতে তেমন ভিড় নেই যাত্রীর। তবে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আগামী ৭ এবং ৮ জুলাইয়ের টিকিটের চাহিদা বেশি। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গাবতলী এবং কল্যাণপুরের বিভিন্ন বাস কাউন্টার ঘুরে এবং কাউন্টারে দায়িত্বরতদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ২৪ জুন থেকে বাসে ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হলেও অধিকাংশ কাউন্টারের লোকজন গল্প করে অলস সময় পার করছেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে যাত্রীদের চাপ কিছুটা বাড়বে বলে আশা করেন তারা। গাইবান্ধাগামী হানিফ পরিবহনের টিকিট কিনতে আসা নাসিম নামের এক যাত্রী বলেন, আমি আজই (শনিবার) বাড়ি যাচ্ছি। কাউন্টারে আসামাত্রই টিকিট পেয়েছি, কোনো সমস্যা হয়নি। এখন নিরাপদে বাড়ি যেতে পারলেই হয়। 

ভাড়া কমিয়েও যাত্রী পাচ্ছে না লঞ্চ : পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াত করা বিভিন্ন রুটের লঞ্চের যাত্রী কমেছে। যাত্রী টানতে কমানো হয়েছে ভাড়া। এ ছাড়া কমেছে লঞ্চের সংখ্যাও। চিরচেনা ব্যস্ত সদরঘাট টার্মিনালের চেহারাটাই যেন বদলে গেছে এ কয়েকদিনে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি যাত্রী কমেছে ঢাকা-বরিশাল, ঢাকা-ঝালকাঠি, ঢাকা-ভান্ডারিয়া, ঢাকা-বরগুনা, ঢাকা-ভোলা, ঢাকা-পটুয়াখালী রুটে।

এসব রুটের অনেক লঞ্চের ডেকে আগে ভাড়া ৩০০-৩৫০ টাকা নেওয়া হলেও এখন ২০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া ছিল আগে ১ হাজার ২০০-১ হাজার ৪০০ টাকা, ডাবল কেবিনের ২ হাজার ২০০-২ হাজার ৪০০ টাকা। এখন সিঙ্গেলের ভাড়া ৮০০ টাকা এবং ডাবলের ভাড়া ১ হাজার ৬০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এতেও আশানুরূপ সাড়া মিলছে না বলে জানিয়েছেন লঞ্চের কর্মচারীরা।

লঞ্চঘাটে স্থাপিত টিকিট কাউন্টারগুলোর অন্তত পাঁচজন কর্মচারী জানান, এক সপ্তাহ আগেও যে পরিমাণ টিকিট বিক্রি হয়েছে এখন তা অর্ধেকে নেমেছে। এখন ঘাটে প্রবেশের জন্য ভিড় নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, আমাদের গর্বের পদ্মা সেতু চালুর পর লঞ্চের যাত্রী তিন ভাগের দুই ভাগই কমেছে। তবে আমরা আশা করছি, ধীরে ধীরে যাত্রী বাড়বে। সে জন্য সেবার ক্ষেত্রে ভিন্নতা আনার চিন্তাভাবনা চলছে। তিনি বলেন, যাত্রীসংখ্যা কমে যাওয়ায় লঞ্চগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা বেড়েছে। অনেকে ভাড়া কমিয়ে লঞ্চ চালু রাখার চেষ্টা করছে। আসন্ন ঈদুল আজহার জন্য কিছু লঞ্চ মেরামতের জন্য পাঠানো হয়েছে। ঈদের অন্তত দুই মাস পর বোঝা যাবে লঞ্চযাত্রী কতটা কমেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর