শুক্রবার, ৮ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

রাজধানীতে জাল টাকা তৈরির কারখানা, গ্রেফতার ৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীতে জাল টাকা তৈরির কারখানা, গ্রেফতার ৪

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকা থেকে টাকা তৈরির সরঞ্জাম ও প্রায় ৫০ লাখ টাকার জাল নোটসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগ। গ্রেফতাররা হলেন- আইনজীবীর সহকারী আবু বকর সিদ্দিক রিয়াজ, মেশিনম্যান রফিকুল ইসলাম শাকিব, বিপণন সহকারী মনির হোসেন ও বিউটি আক্তার। জাল টাকা ছাড়াও তাদের কাছ থেকে টাকা তৈরির জন্য ল্যাপটপ, প্রিন্টার, বিভিন্ন ধরনের কাগজ, কালিসহ অন্যান্য সামগ্রী জব্দ করা হয়। গতকাল এসব তথ্য জানান ডিবির গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান।

তিনি বলেন, আসন্ন কোরবানির ঈদে চক্রটির টার্গেট ছিল ১ কোটি জাল টাকা বাজারে ছড়ানোর। যার মধ্যে অর্ধকোটি ইতোমধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছে বাজারে। রফিকুলের এ কাজের মূল উপাদান একটা ল্যাপটপ আর প্রিন্টার। এর সাহায্যেই বানিয়ে চলেছে ৫০০ ও ১ হাজার টাকার নোট। তিনি ৬-৭ বছর ধরে যুক্ত জাল টাকা বানানোর কাজে। একবার জেলও খেটেছে, সেখান থেকে বের হয়ে আবারও শুরু করে একই কাজ। ফটোশপের মাধ্যমে আসল টাকার আদলে তৈরি করে ডিজাইন। আর সুকৌশলে কাগজ জোড়া লাগিয়ে ফয়েল পেপার দিয়ে তৈরি করে রুপালি রঙের নিরাপত্তা সুতা।

গ্রেফতার রফিকুল ইসলাম শাকিব জানায়, ১ লাখ টাকায় খরচ পড়ে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা।      বিক্রি হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। এবার টার্গেট ছিল কোটির মতো। আগেরবার রফিকুলকে জেল থেকে বের হতে সাহায্য করে আদালতের মুহুরি আবু বকর সিদ্দিক রিয়াজ। টাকার লোভে আইনের কাজ ছেড়ে তাকে টেনে আনে অপরাধের পথে। মুহুরির পেশা ছেড়ে হয়ে ওঠে জাল টাকা তৈরির কারিগর।

গ্রেফতার মুহুরি আবু বকর রিয়াজ জানায়, রফিকুল যখন আদালতে হাজিরা দিতে যায়, তখন তার সঙ্গে পরিচয় হয়। এরপর একসঙ্গে কাজ শুরু করে। মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা আসে। এসব জাল টাকা কারবারিদের কাছে পৌঁছাতে আর বাজারে ছড়াতে কাজ করে আরও দুজন। ১ লাখ টাকার বান্ডিল কারবারিরা কেনে মাত্র ৮ হাজার টাকায়।

ডিবির কর্মকর্তা মশিউর আরও বলেন, গ্রেফতার বিউটি আক্তারের স্বামী আবুল কালাম জাল টাকার পুরনো ব্যবসায়ী। একাধিকবার ধরা পড়ে জেলহাজতে ছিল সে। জেলখানাতেই অন্য মামলায় আটক থাকা রফিকুলের সঙ্গে পরিচয়। রফিকুলকে আমন্ত্রণ জানায় জাল টাকা তৈরি এবং ব্যবসার কাজে। আর আইনজীবীর সহকারী আবু বকর সিদ্দিক রিয়াজ জাল টাকার মামলায় এদের জামিন করাতে গিয়ে সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলে। একপর্যায়ে নিজেও জাল টাকা তৈরির ব্যবসায় নেমে পড়ে। এ চক্রটি ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর এবং কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় বাসাভাড়া নিয়ে জাল টাকা তৈরি করে ঢাকা-চট্টগ্রাম-রাজশাহী-বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে আসছিল। ঈদের গরুর হাটকে কেন্দ্র করে জাল থাকার বড় ব্যবসা করার উদ্দেশ্যেই নদীর পাড়ে ঢাকা উদ্যানে বাসাভাড়া নিয়ে গত এক মাসে প্রতিদিনই অনেকজাল টাকা তৈরি করে বাজারজাত করে আসছিল। ঈদ এলেই বেপরোয়া হয়ে পড়ে এসব চক্র। একাধিকবার গ্রেফতার হলেও বিভিন্ন আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনে বের হয়ে এসে আবারও নামে একই অপরাধে। গ্রেফতারদের কাছ থেকে লিস্ট নিয়ে পাইকারদের ধরার মাধ্যমে বাজার থেকে জাল টাকা তোলা চেষ্টা করা হবে। এ চক্রের অপর এক সক্রিয় সদস্য আবুল কালাম পলাতক রয়েছে। তাকে ধরতে অভিযান চলছে।

সর্বশেষ খবর