শিরোনাম
শনিবার, ১৬ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

ভারী বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা

রাজধানীর অধিকাংশ পাম্প ও স্লুইস গেট নষ্ট

হাসান ইমন

নদীবেষ্টিত ঢাকার পশ্চিমাঞ্চলে বুড়িগঙ্গার পাড়ে বেড়িবাঁধ ও পূর্বাঞ্চলে বালু নদীর তলদেশ উঁচু হওয়া এবং খাল দখলের কারণে রাজধানীর মধ্যাঞ্চল বৃষ্টির পানির ‘বালতি’তে পরিণত হয়েছে। এখান থেকে পানি অপসারণের জন্য ঢাকার দুই সিটির ২১টি পাম্প রয়েছে। যার বেশিরভাগ পাম্পই বিকল। একই অবস্থা ডিএসসিসির ৫৫টি স্লুইস গেটের, যার মধ্যে ৩৭টি নষ্ট। অধিকাংশ পাম্প ও স্লুইস গেট নষ্ট থাকায় রাজধানীতে ভারী বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিল্ল্যাহ সিদ্দিক ভূইয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গত মাসে পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদের স্লুইস গেটগুলো সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করেছে। এগুলোর বেশিরভাগই নষ্ট। এখন মেরামতের জন্য প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বৃষ্টির পানি অপসারণের জন্য ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে নেওয়া পাম্পগুলোরও অনেক নষ্ট। এগুলো মেরামতের জন্য প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, কমলাপুর পাম্প স্টেশনের প্রতি সেকেন্ডে পাঁচ ঘনমিটার পানি তোলার তিনটি পাম্পের মধ্যে দুটি, রামপুরায় একই ক্ষমতাসম্পন্ন পাঁচটি পাম্পের মধ্যে একটি এবং ধোলাইখালে প্রতি সেকেন্ডে ৭.৫ ঘনমিটার ক্ষমতাসম্পন্ন সেচের তিনটি পাম্পের তিনটিই অচল। চালু যন্ত্রগুলো ৩০-৪০ ভাগ কার্যক্ষমতা নিয়ে চলছে। অপরদিকে কল্যাণপুরে পাঁচটি পাম্প চালানোর মতো পানি পাওয়া যায় না। কারণ বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ১৭১ একর জলাশয়ের ১৬৮ একরই দখল ও ভরাট হয়ে গেছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কর্মকর্তারা এ অবস্থার জন্য ঢাকা ওয়াসাকে দায়ী করছেন। তারা বলছেন, ওয়াসা রামপুরা ও কমলাপুরে দুটি স্টর্ম ওয়াটার পাম্প স্টেশন স্থাপনের কাজে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেছে। তারা আরও অভিযোগ করেন, ২০১৬ সালে পাম্প স্টেশন দুটি স্থাপনের সময় ২২০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। কোনো যন্ত্র স্থাপনের মাত্র ছয় বছরে তা নষ্ট হওয়ার কথা নয়। এখন বিকল পাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশন নিয়ে বিপাকে পড়েছে দুই সিটি। প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে ধোলাইখাল ও কমলাপুর পাম্প স্টেশন এবং উত্তর সিটিকে রামপুরা ও কল্যাণপুর পাম্প স্টেশন হস্তান্তর করে ঢাকা ওয়াসা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসসিসির এক প্রকৌশলী বলেন, ‘বর্তমানে কমলাপুর স্টেশনের তিনটি পাম্পের দুটি বিকল। পাম্প দুটির মেরামত দরকার। এ কাজের জন্য টেন্ডার হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদারের দেখা নেই। হঠাৎ ভারী বৃষ্টি হলে কী হবে আল্লাহই ভালো জানেন।’ এদিকে গত ২৬ জুন ঢাকা মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন ৫৫টি স্লুইচ গেট ডিএসসিসির কাছে হস্তান্তর করে। তবে ৫৫টি স্লুইচ গেটের মধ্যে ৩৭টি নষ্ট। বাকিগুলো আংশিক চালু রয়েছে। গত বছর ডিএসসিসি ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সরেজমিন প্রতিবেদন তৈরি করে। এই প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ডিএসসিসির অঞ্চল ৩-এর ২১টি স্লুুইস গেটের মধ্যে ১৭টি অচল, ৪টি আংশিক সচল। অঞ্চল ৪-এর ১৬টি স্লুইস গেটের মধ্যে ৭টি অচল, ৯টি আংশিক সচল এবং অঞ্চল ৫-এর ১৩টি গেটের মধ্যে সবকটিই অচল। এতে আরও বলা হয়, বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন ৫০টি স্লুইস গেট সংস্কার করে ডিএসসিসির কাছে হস্তান্তর করা প্রয়োজন।

অঞ্চল ৩-এর স্লুইস গেটগুলো হচ্ছে- মীর শওকত আলী রোড, লাইফ কেয়ার হাসপাতাল রোড, ঝাউচর গুদারাঘাট, নয়াগাঁও নদীর পাড়, খলা মুড়া ঘাট, গাজীর ঘাট, শেখ জামাল উচ্চবিদ্যালয়, খালপাড়, মুসলিম বাগ-১, মাদরাসা ঘাট, নূরবাগ ঘাট, মাওলানা ঘাট, পাঠাগার ঘাট, মুসলিমবাগ-২ (মাঠ), মুসলিমবাগ-৩, লাল গুদাম কমিউনিটি সেন্টার, তারা মসজিদ, বরিসুর ঘাট, ময়দার মিল, কয়লাঘাট/নৌকা ঘাট, মাতবর বাজার ঘাট, লোহার ব্রিজ, মুসলিমবাগ লবণের ফ্যাক্টরি ও মনির চেয়ারম্যান গলি। এর মধ্যে নয়াগাঁও নদীর পাড়, খলা মুড়াঘাট, গাজীর ঘাট ও মনির চেয়ারম্যান গলির স্লুইস গেট আংশিক সচল রয়েছে। অঞ্চল ৪-এর গেটগুলো হচ্ছে বেড়িবাঁধের পাশে (২টি), কামালবাগ, মদিনা ট্যাংকির পাশে, দেবীদাস ঘাট রোডের সম্মুখে, সোয়ারীঘাট রোডের বামে ও ডানে, পানঘাট, রাজারঘাট, মিডফোর্ট হাসপাতালের পেছনে ৩টি, বাবু বাজার ব্রিজের নিচে (খোলা), বাদামতলী   মসজিদ ঘাট, বাদামতলী, সদরঘাট, বি আইডব্লিউটিসি অফিসের পেছনে, ওয়াইজঘাট, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের পাশে, উল্টিনগঞ্জ পাবলিক টয়লেটের সামনে, শ্যামবাজার আলী গার্মেন্টের সামনে (২টি) ও শ্যামবাজারের সামনে (২টি)। এর মধ্যে কামালবাগ, মদিনা ট্যাংকির পাশে, দেবীদাস ঘাট রোড, সোয়ারীঘাট রোড, পানঘাট, রাজারঘাট, মিডফোর্ট হাসপাতালের পেছনে (৩টি) ও বাদামতলী মসজিদ ঘাটের গেটগুলো আংশিক সচল রয়েছে। অঞ্চল ৫-এর গেটগুলো হলো- কটনমিল মসজিদ সংলগ্ন, ২ নং সিটি গেট, বিটি ফার্নিচার, বুড়িগঙ্গা ক্লাব, তারেক স-মিল, রবি চন্দন গোসাইবাড়ী, বিল ব্যারাক গুদারাঘাট, ৩০/৩ আলমগঞ্জ, গঙ্গাশাহা মাজার, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট ও রশিদ মস্তান মাজার। এগুলোর সবকটিই বিকল।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর