শনিবার, ১৬ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

করোনার সাফল্য ভুয়া বিলে ম্লান

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

করোনার সাফল্য ভুয়া বিলে ম্লান

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণ যখন তুঙ্গে, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে যখন রোগী ভর্তি বন্ধ, চারদিকে যখন চরম দুর্বিষহ অবস্থা, তখনই জেনারেল হাসপাতাল করোনা রোগীর জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে। হাসপাতালটি এককভাবে করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছে। অর্জন করেছে মানুষের আস্থা। কিন্তু ৫ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা ভুয়া বিল দেওয়ার ঘটনায় করোনার সাফল্য ম্লান হতে চলেছে। প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে প্রতিষ্ঠানটিকে। 

জানা যায়, জেনারেল হাসপাতালের হিসাবরক্ষক (চলতি দায়িত্ব) মোহাম্মদ  ফোরকান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের একটি স্মারক নম্বরে জেনারেল হাসপাতালের বিলের কাগজে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের আটকে যাওয়া ৫ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার টাকার বিল পাস করানোর চেষ্টা করেন। ২০২১-২২ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে চিকিৎসা যন্ত্রপাতি খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ হতে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের ২০১৩-১৪ অর্থ বছরের মেসার্স আহম্মেদ এন্টারপ্রাইজ কর্তৃক ৮টি আইসিইউ বেড ও ৮টি ভেন্টিলেটর এবং ১টি কার্ডিয়াক পেশেন্ট মনিটরের বকেয়া বিল ৫ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা পরিশোধের জন্য চেষ্টা করে। এজন্য তিনি ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে তত্ত্বাবধায়কের স্বাক্ষরও করিয়ে নেন। গত ২৮ জুন তত্ত্বাবধায়কের স্বাক্ষরযুক্ত ভুয়া বিলটি নিয়ে বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রণ অফিসে গেলে সেখানে দায়িত্বরত কর্মকর্তার কাছে বিষয়টি ধরা পড়ে। এরপর বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রণ অফিস থেকে ফোরকানকে পাঁচলাইশ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ঘটনা শুনে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি থানায় গিয়ে নিজের জিম্মায় ফোরকানকে ছাড়িয়ে আনেন। পরে পাঁচলাইশ থানা থেকে অভিযোগ দায়েরের জন্য কোতোয়ালি থানায় পাঠানো হয়। কিন্তু দুদকে মামলাটি চলমান থাকায় থানার পরামর্শে দুদকে অভিযোগ দায়ের করা হয়। তাছাড়া এ ঘটনা তদন্তে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। একই সঙ্গে জেনারেল হাসপাতালের সব ধরনের কার্যক্রম থেকে ফোরকানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই জেনারেল হাসপাতালটি এই অঞ্চলের মানুষের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনা সংক্রমণ কমার পর থেকে এখানে নতুন নতুন অনেক সেবা যোগ করা হয়েছে। কিন্তু ভুয়া বিলের একটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা সব অর্জনকে ম্লান করে দিয়েছে। অনেকের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছি।

 আমি মনে করি, সুষ্ঠু তদন্ত ও দুদকের অভিযোগের মাধ্যমে বিষয়টির একটি সুন্দর সমাধান হবে।’  জানা যায়, গত ২৮ জুন ঘটনার পরদিনই ফোরকানকে হিসাব শাখার সব ধরনের কাজ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। গত ৩০ জুন অফিস চলার সময়ের মধ্যে হিসাব শাখার সব ধরনের দায়িত্ব হাসপাতালে কর্মরত মো. নাছির উদ্দিন খালেদকে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন তত্ত্বাবধায়ক। কিন্তু দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়ায় গত ৪ জুলাই তত্ত্বাবধায়ককে চিঠি দেন নাছির উদ্দিন খালেদ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দায়িত্ব বুঝিয়ে দেননি।  

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য কয়েক দিন সময় চেয়েছে। হিসাবের বিষয় হওয়ায় বুঝিয়ে নিতে একটু বিলম্ব হচ্ছে। তবে অনিয়মের বিষয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।        

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর