শিরোনাম
শনিবার, ২৩ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

হঠাৎ অচেনা গাজীপুর

পাল্টে যাচ্ছে ট্রাফিক ব্যবস্থা

সাখাওয়াত কাওসার

হঠাৎ করেই যেন ফাঁকা হয়ে গেছে গাজীপুর মহানগরের মহাসড়ক। নেই ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। যত্রতত্র থামানো হচ্ছে না মহাসড়কে চলাচলকারী বাস কিংবা যাত্রী পরিবহনকারী যান। পাল্টে গেছে গাজীপুরের বিভিন্ন সড়কের ফুটপাতের দৃশ্যও। রাস্তার দুই পাশের দোকানের সামনে থাকা বিভিন্ন জিনিসপত্রও নেই। নির্বিঘ্নে হেঁটে যেতে পারছেন পথচারীরা। এমন দৃশ্য অনেকে কল্পনা করার সাহসও করতেন না। এ যেন অচেনা গাজীপুর। তবে বাস্তবে কয়েক দিন ধরে এমনটাই দেখা যাচ্ছে নতুন এই মহানগরকে। গত দুই দিনে এ বিষয়ে অনেকের কাছেই জানতে চাওয়া হয়। তাদের মন্তব্য ছিল, পুলিশ চাইলে অনেক কিছুই পারে। যেমনটা এখন পারছে। যদিও অনেকেই বিষয়টিকে মেনে নিতে পারছেন না। গত বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে আসা শাহীনুর রহমানের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, সকাল সাড়ে ১০টায় ময়মনসিংহ থেকে রওনা দিয়ে ঢাকায় এসেছি মাত্র ৩ ঘণ্টায়। অথচ কয়েক দিন আগেও কেবল গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত আসতে আড়াই ঘণ্টা থেকে ৩ ঘণ্টা সময় লাগত। গাজীপুর মাওনা থেকে এয়ারপোর্টে আসা পল্লব আহমেদ বলেন, গাজীপুর  চৌরাস্তা থেকে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত এসেছি মাত্র ৩০ মিনিটে। এটা অনেকটাই স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। প্রাইভেট কার চালক জুবায়ের আহমেদের মন্তব্যও ছিল অনেকটা একই রকম। জানা গেছে, গাজীপুর মহানগরের মোট ৩৩০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনে প্রায় ৬৫ লাখ জনসংখ্যা। প্রতিদিন সিএনজি অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, বাস, ট্রাকসহ ৫০ থেকে ৬০ হাজার বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করে। এর মধ্যে রয়েছে ৫১টি জেলার পরিবহন। বিশেষ করে গাজীপুর এলাকায় ২ হাজার ৫০০টি শিল্প-কারখানার অবস্থান। এসব কারখানায় নিয়মিত শ্রমিক পরিবহন এবং মালামাল পরিবহনের জন্য যানবাহনের বড় একটি অংশ চলাচল করে। মহাসড়ক সংলগ্ন কারখানাগুলোর পণ্য সড়কের ওপরই লোড-আনলোড এবং ট্রাক-কাভার্ড পার্কিং যানজটের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে জিএমপি। গত ১৩ জুলাই যোগদানের পর থেকে গাজীপুর মহানগর পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম দফায় দফায় যানজট নিরসনের বিষয়ে পরিবহন শ্রমিক, নেতা, সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র, কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তাদেরও মতামত নেন। সর্বশেষ পুলিশকে সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দিয়েই বৈঠক শেষ হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জিএমপির কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন,  যোগদানের পর পরই আমি আমার পরিকল্পনার বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মী এবং সুশীল সমাজকে অবহিত করেছি। সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি, তাদের সহযোগিতা চেয়েছি। ইতোমধ্যে নগরবাসী এবং জিএমপি স্পর্শ করে চলাচলকারী যানবাহনের যাত্রীরাও সড়ক- মহাসড়কের পরিবর্তন দেখেছে। আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। গাজীপুর জজ কোর্ট সংলগ্ন আবাসিক এলাকার কয়েকজন বলছিলেন, গাজীপুরের আঞ্চলিক সড়ক থেকে মহাসড়ক, সর্বত্রই দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল অর্ধ লক্ষাধিক অবৈধ অটোরিকশা এবং ইজিবাইক। এতে জেলায় প্রায় প্রতিদিনই সড়কে প্রাণ হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এসব অবৈধ যানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় সুশীল সমাজ প্রতিবাদ করলেও কোনো সমাধান আসেনি এত দিন। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও ছিল নানা প্রশ্ন। তবে পুলিশি ভূমিকার কারণেই এমনটা সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য তাদের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত যানজটের প্রভাব পড়ত খোদ রাজধানীতেও। ঈদ-পরবর্তী সময়ে রাজধানী এবং গাজীপুর এখনো জমে না উঠলেও কিছুদিন পরই এ বিষয়ে মন্তব্য করা যাবে। তবে এখন পর্যন্ত অনেক উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে। এমন দৃশ্য অব্যাহত থাকলে গাজীপুরের ট্রাফিক সিস্টেম অনেক জেলার জন্য অনুকরণীয় হতে পারে। জিএমপির উপকমিশনার (ট্রাফিক) আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, জিএমপি কমিশনার মহোদয়ের সুস্পষ্ট নির্দেশনা হলো মহাসড়কে অবৈধ যানবাহন চলাচল মুক্ত করা। প্রাথমিকভাবে টঙ্গী ব্রিজ হতে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত সাঁড়াশি অভিযান শুরু করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে পরিচালিত চলমান অভিযানে ১৪ জুলাই থেকে থেকে ২০ জুন পর্যন্ত ১ হাজার ১০০ ইজিবাইক জব্দ করা হয়েছে। হাই কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী নিষিদ্ধ কোনো যান আমরা মহাসড়কে চলতে দেব না। সড়ক পরিবহন আইন অমান্য করা ২৫৪টি যানবাহনে এবং প্রয়োজনীয় কাগজ দেখাতে না পারা ৩৩টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, পাশাপাশি ফুটপাত দখল করে দোকানপাট, দোকানের সামনে ভাড়া দেওয়া এবং মালামাল রাখা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মহাসড়কে যানজট নিরসন, দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ও শৃঙ্খলা ফেরাতে পর্যায়ক্রমে সব সড়ক-মহাসড়কে সব রকম অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর