শনিবার, ২৩ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

চাহিদার তুঙ্গে ‘সুবর্ণ রুই’

সৈয়দ নোমান, ময়মনসিংহ

চাহিদার তুঙ্গে ‘সুবর্ণ রুই’

মাত্র দুই বছর হয়েছে চতুর্থ প্রজন্মের ‘সুবর্ণ রুই’ জাতটির উদ্ভাবন করেছে ময়মনসিংহের বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে নতুন উদ্ভাবিত উন্নত জাতের এ মাছটি ইতিমধ্যে চাষি, উদ্যোক্তা ও হ্যাচারি মালিকদের পছন্দের শীর্ষে অবস্থান করছে। চাহিদা তুঙ্গে থাকায় ইনস্টিটিউট থেকে মৎস্য চাষি ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে এরই মধ্যে ৩ কোটি পোনা বিতরণ করা হয়েছে। বিএফআরআই-এর পরিসংখ্যান বলছে, গত প্রজনন মৌসুমে ৪০ জন চাষি, উদ্যোক্তা ও হ্যাচারি মালিকদের কাছে ১ কোটিরও বেশি পোনা রেণু বিতরণ করা হয়েছে। আর চলতি প্রজনন মৌসুমে ৪৭ জন চাষি, উদ্যোক্তা ও হ্যাচারি মালিকদের কাছে প্রায় ২ কোটি পোনা বিতরণ করা হয়েছে। এসব পোনা এখন খামারে চাষ হচ্ছে। এ ছাড়াও ২০ হাজার পোনা মৎস্য অধিদফতরের ৮টি বিভাগে ১০টি সরকারি হ্যাচারিতে দেওয়া হয়েছে। জানা যায়, অধিক উৎপাদনশীল ও অন্তঃপ্রজনন সমস্যামুক্ত উন্নত জাতের চতুর্থ প্রজন্মের ‘সুবর্ণ রুই’ মাছ মিষ্টিপানি ও আধা-লবণাক্ত পানির পুকুর, বিল, বাঁওড় এবং হাওরে চাষ করা হচ্ছে। এতে সামগ্রিকভাবে প্রতি বছর দেশে প্রায় ১ লাখ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন সম্ভব হবে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা। উন্নত এ জাতের রেণু পোনা হ্যাচারি থেকে সংগ্রহ করে নার্সারি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অনেকেই লাভবান হচ্ছেন। বিএফআরআই-এর মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ জানান, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে স্মরণীয় করে রাখার জন্যই এমন নামকরণ করা হয়োছিল।

 রুই মাছের নতুন ওই জাতটি দ্রুত বর্ধনশীল, স্থানীয় জাতের চেয়ে ২০.১২ শতাংশ বেশি উৎপাদনশীল,  খেতে সুস্বাদু এবং দেখতে লালচে ও আকর্ষণীয়। উন্নত জাতের নতুন উদ্ভাবিত রুই মাছ মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারণ করায় সামগ্রিকভাবে দেশে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি  পেয়েছে।

ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায়, হালদা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র উৎসের রুই মাছের মধ্যে দ্বৈত এ্যালিল ক্রসিং (di-allele crossing) এর মাধ্যমে ৯টি গ্রুপ থেকে প্রথমে বেইজ পপুলেশন(base population) তৈরি করা হয়। পরে বেইজ পপুলেশন থেকে সিলেকটিভ ব্রিডিং (mass selection)  এর মাধ্যমে ২০০৯ সালে রুই মাছের উন্নত জাতের ১ম প্রজন্মের (F1) মাছ উদ্ভাবন করা হয়। যা বেইজ পপুলেশন থেকে ৭.৫ ভাগ বেশি উৎপাদনশীল। পরবর্তীতে সিলেকটিভ ব্রিডিং-এর মাধ্যমে রুই মাছের দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের ১২.৩৮ ও ১৬.৮৩ ভাগ বেশি উৎপাদনশীল জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। সবশেষ ২০২০ সালে উন্নত জাতের  চতুর্থ প্রজন্মের জাত তৈরি করা হয়েছে, যা স্থানীয় জাতের চেয়ে ২০.১২ ভাগ বেশি উৎপাদনশীল। এমনকি এই জাতের কৌলিতাত্ত্বিক অবদান স্থানীয় জাতের চাইতে বেশি বিশুদ্ধ বলে প্রমাণিত হয়েছে। মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে এ জাত অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলে বিজ্ঞানীরা আশা করছেন।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর