সোমবার, ২৫ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

টিকিট কালোবাজারি অব্যবস্থাপনা খুলনায়

রেলস্টেশন নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন এ মাসেই

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

টিকিট কালোবাজারি অব্যবস্থাপনা খুলনায়

খুলনা রেলওয়ে স্টেশনে টিকিট সিন্ডিকেট, স্টেশনে বিভিন্ন বাতি জ্বালানোর জন্য বরাদ্দকৃত তেলের টাকা ভাগাভাগিসহ নানা অব্যবস্থাপনার অভিযোগ রয়েছে। নিয়মবহির্ভূতভাবে ভিআইপিদের নামে টিকিট বরাদ্দ নিয়ে পরে তা উচ্চমূল্যে বাইরে বিক্রি করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে সহকারী স্টেশন মাস্টারসহ পাঁচজনকে বদলি করা হয়েছে। সর্বশেষ গত ১৭ জুলাই খুলনার রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার ও বদলি হওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি।

এ ছাড়া অভিযোগ রয়েছে, অধিকাংশ সময় স্টেশনে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের তাদের কক্ষে পাওয়া যায় না। এমনকি সপ্তাহে দুই দিন ভারত-বাংলাদেশ বন্ধন এক্সপ্রেস খুলনা স্টেশনে অবস্থানকালীন সময়েও কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকেন না বলে জানা গেছে।

জানা যায়, গত ১৬ মে খুলনা রেলে টিকিট সিন্ডিকেটের কথা উল্লেখ করে সহকারী স্টেশন মাস্টারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে রেলওয়ে থানায় জিডি করেন স্টেশন মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার। এতে বলা হয়, সহকারী স্টেশন মাস্টার আশিক আহম্মেদ ও জাকির হোসেন, শ্রমিক নেতা (টিএক্সআর) বায়তুল ইসলাম, জাফর মিয়া ও তোতা মিয়া সরাসরি টিকিট কালোবাজারিতে জড়িত। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে ১৯ মে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক মো. শাহীদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত আদেশে সহকারী স্টেশন মাস্টার আশিক আহম্মেদ ও জাকির হোসেন, শ্রমিক নেতা বায়তুল ইসলাম, তোতা মিয়া ও স্টেশন মাস্টারের ‘বিশেষ ঘনিষ্ঠজন’ বলে পরিচিত লোকো খালাসি পফিদুর রহমানকে বদলি করা হয়। এর আগে ২ মে খুলনা জেলা প্রশাসনের অভিযানে রেলওয়েকর্মী ও বহিরাগতদের একটি সিন্ডিকেট চিহ্নিত হয়। যাত্রীরা অভিযোগ করেন, বিশেষ করে ঈদের সময় লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট পাওয়া যায় না। রেলের টিকিট কালোবাজারি করে দ্বিগুণ মূল্যে বিক্রি করা হয়।

বদলি হওয়া সহকারী স্টেশন মাস্টার আশিক আহম্মেদ জানান, স্টেশন মাস্টারের কর্মকান্ডের অনিময় তুলে ধরায় তাকে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিনের নিয়ম অনুযায়ী রেলস্টেশনে বিভিন্ন তেলের বাতি জ্বালানের জন্য মাসে প্রায় ১১ হাজার টাকা তেল বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু এখন সব লাইট ডিজিটাল হওয়ায় তেল বাবদ ওই টাকা লাগে না। যা স্টেশন মাস্টার নিজে আত্মসাৎ করেন। এ ছাড়া কর্মচারীদের অবসরভাতা প্রদানের সময় ফাইলপ্রতি উৎকোচ আদায় করা হতো, যা নিয়ে তার সঙ্গে বাগ্বিতন্ডা হয়েছে।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে স্টেশন মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার বলেন, তেল বরাদ্দের টাকা বিভিন্ন সেকশনে ভাগ করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া উৎকোচ আদায়ের অভিযোগ সত্য নয়। তিনি বলেন, বিভিন্ন ভিআইপি ও রাজনীতিবিদদের নামের ভুয়া চাহিদা দেখিয়ে সিন্ডিকেটটি টিকিট নেয়। টিকিট না দিলে বাইরের লোকজন ডেকে এনে দায়িত্বরতদের হেনস্তা করা হয়। সরকারি নির্দেশনায় ভিআইপিদের নামে টিকিট বরাদ্ধ বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু এই সিন্ডিকেটের টিকিটের চাহিদা এত বৃদ্ধি পেয়েছে যে টিকিট না দিলে তারা স্টেশনে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর হুমকি দিত।

এদিকে রেলস্টেশনের বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা নিয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির সদস্যসচিব সহকারী প্রকৌশলী ওয়ালিউল হক তমাল জানান, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে থানায় জিডির বিষয়ে তদন্ত করতে গিয়ে আরও কিছু বিষয় সামনে এসেছে। এরই মধ্যে সব পক্ষের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যেই প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর