রবিবার, ৩১ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

মানসম্মত শিক্ষায় যত চ্যালেঞ্জ

খুলনায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কারিগরি পর্যায়ে সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

খুলনায় করোনাকালে বিগত তিন বছরে গুণগত শিক্ষার মান কমেছে। শ্রেণি কার্যক্রম চালু না থাকায় শিক্ষার্থী ঝরে পড়া, বাল্যবিয়ে, শিখন-শেখানো কাজে পিছিয়ে পড়া ও শিক্ষার্থীদের প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জন ব্যাহত হয়েছে। প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা শুধু মৌখিক মূল্যায়নের ভিত্তিতে প্রথম শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণিতে উন্নীত হয়েছে। যাদের অনেকেই বাংলা ও ইংরেজি সাবলীলভাবে পড়তে পারে না। একইভাবে মাধ্যমিকে বাল্যবিয়ে, শিশু শ্রমে যুক্ত হওয়া ও ৪০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থীকে ডিজিটাল ক্লাসের আওতায় আনা যায়নি। আধুনিক পাঠ্যক্রম না থাকায় কারিগরি পর্যায়েও রয়েছে মানসম্মত শিক্ষার অভাব। এ অবস্থায় খুলনায় শিক্ষা কর্মকর্তা, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক প্রতিনিধি, ইউনেস্কো প্রতিনিধি, এনজিও ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে আয়োজিত সেমিনারে মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কারিগরি পর্যায়ে সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসব উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হলে শিক্ষার কাক্সিক্ষত মান নিশ্চিত সম্ভব হবে। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বেসরকারি সংস্থা আশ্রয় ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মমতাজ খাতুন। খুলনা প্রাথমিক শিক্ষার বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. মোসলেম উদ্দিন বলেন, করোনাকালে শিখন-শেখানো কার্যক্রম চালু রাখা যায়নি। মোবাইলে অনলাইনে ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের যে মান থাকার কথা ছিল তা হয়নি। তিনি বলেন, প্রাথমিকে তিন ধরনের শিক্ষক রয়েছেন। প্রথম ভাগে অধিকতর যোগ্য শিক্ষকরা পেশায় সন্তুষ্ট থাকেন না। তারা ক্লাসরুমেও আন্তরিক হন না। দ্বিতীয় ভাগে শিক্ষকরা মনে করেন এ পেশার বাইরে কিছু করার নেই। আর তৃতীয় ভাগে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের ফলে শিক্ষকরাও সরকারি হয়েছেন।

তাদের অনেকের যোগ্যতার অভাব রয়েছে। শিক্ষকদের হতাশা ও যোগ্যতার অভাব শিক্ষার্থীদের শিখন-শেখানো কার্যক্রমে খারাপ প্রভাব ফেলে। তিনি বলেন, যারা ইংরেজি পড়াবেন তাদের নিজেদের সাবলীলভাবে ইংরেজি পড়তে জানতে হবে।

মাধ্যমিকে জেলা শিক্ষা অফিসার রুহুল আমিন বলেন, বাল্যবিয়ে, শিশু শ্রমে যুক্ত হওয়া, বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক প্রলোভনে শিক্ষার্থী ধরে রাখা চ্যালেঞ্জিং। করোনাকালে ৬০ ভাগ শিক্ষার্থী ছিল ডিজিটাল ক্লাসের আওতার বাইরে। প্রাথমিকে শক্ত ভিত তৈরি না হলে মাধ্যমিকে ওই শিক্ষার্থী তাল মেলাতে পারবে না।

কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের সহকারী আঞ্চলিক পরিদর্শক প্রকৌশলী সুশান্ত কুমার সাহা বলেন, খুলনা অঞ্চলে ৭২২টি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিপরীতে পরিদর্শক পদে কর্মরত রয়েছে মাত্র দুজন। যাদের পক্ষে বছরে একবারও কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া কারিগরি পাঠ্যক্রমে এখনো শিক্ষার্থীদের সাদা-কালো টেলিভিশনের কার্যক্রম শেখানো হয়। যা যুগের সঙ্গে বেমানান।

সেমিনারে বলা হয়, শিক্ষার মানোন্নয়নে সমস্যা-সম্ভাবনা চিহ্নিত করে সম্ভাব্য উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। সেই সঙ্গে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে স্থানীয় বিদ্বৎসাহীদের সম্পৃক্তকরণ, কোচিং কালচার বন্ধ, স্কুলে পাঠদান নিশ্চিত করা, পেশাগত দায়িত্ববোধ, প্রযুক্তিগত শিক্ষা ও অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষার্থীদের প্রান্তিক যোগ্যতা নিশ্চিত করা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক উন্নয়ন ও শ্রদ্ধাবোধ, স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া ও সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতিতে মেধা বিকাশের ওপর জোর দিতে হবে।

সর্বশেষ খবর