মঙ্গলবার, ২ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

বিকাশ কর্মকর্তা সেজে ছয় ধাপে প্রতারণা

হাতিয়েছেন কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ, নগদ ও রকেট অ্যাকাউন্ট কিংবা ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড রয়েছে এমন ব্যক্তিদের টার্গেটে রাখে চক্রটি। এরপর শুরু হয় তাদের অভিনব কৌশল। প্রথমে নির্দিষ্ট বিকাশ নম্বরে বারবার ভুল পাসওয়ার্ড দিয়ে সেটি সাময়িকভাবে স্থগিত করত চক্রের সদস্যরা। পরে বিকাশ কর্মকর্তা সেজে গ্রাহককে ফোন করে বলত, বিকাশ অ্যাকাউন্ট ব্লক হয়ে গেছে। এ অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলার সুযোগ নেই। তবে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডে অর্থ স্থানান্তর করা যাবে। এভাবে ফাঁদে ফেলে গ্রাহকদের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের সব তথ্য নিয়ে নিত। চক্রটি এভাবেই বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ১ কোটিরও বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

 গতকাল রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে একাধিক ভুক্তভোগীর ডেবিট এবং ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। চক্রের হোতা খোকন ব্যাপারী ওরফে জুনায়েদকে (৩০) নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে রবিবার গ্রেফতার করা হয়েছে। 

মুক্তা ধর বলেন, খোকনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র মোবাইলে আর্থিক লেনদেনের প্লাটফরম ব্যবহার করে নিজেদের বিকাশ, নগদ ও রকেটের কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতারণা করে আসছিল। তাদের প্রথম ধাপ বিকাশ কর্মকর্তা হিসেবে ভুক্তভোগীকে ফোন দিয়ে অ্যাকাউন্ট আপডেট করার জন্য বলে। আপডেট না করলে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাবে বলে জানায়। দ্বিতীয় ধাপ প্রতারক চক্র ভুক্তভোগীর ব্যবহৃত বিকাশ অ্যাকাউন্টটিতে ভুল পাসওয়ার্ড তিনবারের বেশি দিলে তার অ্যাকাউন্টটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সাসপেন্ড হয়ে যায়। তৃতীয় ধাপ প্রতারক ভুক্তভোগীকে জানায় যে, তার অ্যাকাউন্টটি সাময়িকভাবে সাসপেন্ড করা হয়েছে। অ্যাকাউন্টে থাকা টাকা ব্লক হয়েছে। ওই টাকা ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডে ট্রান্সফার করা সম্ভব। চতুর্থ ধাপ প্রতারকরা ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডের নম্বর ও সিভিএন জানতে চায়। পঞ্চম ধাপ ভুক্তভোগী এসব তথ্য সরবরাহ করলে ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডের সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে যে মোবাইল নম্বর সরবরাহ করে সেই মোবাইল নম্বরে একটা ওটিপি কোড সংবলিত একটি ম্যাসেজ যায়। ষষ্ঠ ধাপ ভুক্তভোগী ম্যাসেজটি রিসিভ করার পর সেই কোডটি প্রতারক জানতে চায়। কোডটি প্রতারক তার কাছ থেকে পাওয়ার পর ভুক্তভোগীর ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণ টাকা প্রতারক তার নিজের বিকাশ অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে নেয়।

মুক্তা ধর বলেন, ভুক্তভোগীর কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের পরপরই তারা তাদের ব্যবহৃত সব আইডেন্টিটি গোপন করে রাখে। গ্রেফতার খোকনের ‘it’s khokon bro’ ও it’s khokon bro 02’ নামের দুটি ফেসবুক পেজ খুলে বিভিন্ন ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে তাদের তার ফ্রেন্ড লিস্টে অন্তর্ভুক্ত করত। তারপর তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা বুঝে মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে তাদের প্রতারণায় টার্গেটে রাখত। 

সর্বশেষ খবর