শুক্রবার, ৫ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

বন্যা নিয়ন্ত্রণের নামে নদী ভরাট

রাজশাহীতে হারিয়ে গেছে পদ্মার ৯ শাখা নদী

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

বন্যা নিয়ন্ত্রণের নামে নদী ভরাট

রাজশাহীর নয়টি প্রবহমান নদীকে বন্যা নিয়ন্ত্রণের নামে মেরে ফেলা হয়েছে। নদীগুলো হচ্ছে- নারদ, সন্ধ্যা, স্বরমঙ্গলা, দয়া, বারাহী, হোজা, নবগঙ্গা, চিনারকূপ ও মুসাখান। সবকটিই ছিল পদ্মার শাখা নদী। এর মধ্যে নারদ নদীটিকে উদ্ধার করা গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারদ বাদেও নয়টি নদীর মধ্যে চিনারকূপ, জোহা ও মুসাখানের উৎসমুখ উদ্ধার করে আবারও সেগুলোকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

পরিবেশবাদী সংগঠন হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, ১৮৮৫ সালে কথিত বন্যা নিয়ন্ত্রণের নামে পদ্মা নদীর তীরে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হয়। তখন নগরীর বুলনপুর এলাকা থেকে তালাইমারী পর্যন্ত ১২টি স্লইসগেট নির্মাণ করা হয়। নদীগুলোর উৎসমুখেও এ স্লইসগেট নির্মাণ করা হয়। এরপর থেকে আস্তে আস্তে নদীগুলোর উৎসমুখ মরে যেতে থাকে। এক পর্যায়ে নদীর পরিচয় হারিয়ে যায়। মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, এ নদীগুলোর হাজার হাজার হেক্টর সরকারি খাসজমি এখনো দখলমুক্ত আছে, যা খনন করে বর্ষার পানি ধরে কৃষিকাজে ব্যবহার করা সম্ভব। তবে দয়া ও স্বরমঙ্গলার উৎসমুখ আর উদ্ধার করা সম্ভব নয়। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) নারদ নদীটিকে উদ্ধার করেছে। তারা উৎসমুখ বাদ দিয়েই অপর একটি খালের মাধ্যমে পদ্মা নদীর সঙ্গে নদীটিকে সংযুক্ত করে দিয়েছে। ছয় বছর আগে নদীটির খননকাজ শুরু হয়। ৪ কিলোমিটার উপশাখাসহ নদীর ৩৪ কিলোমিটার খনন করা হয়েছে। নারদের মোট তিনটি প্রবাহ। প্রথম প্রবাহ রাজশাহীতে, দ্বিতীয় ও তৃতীয়টি নাটোরে। নারদের প্রথম প্রবাহটি রাজশাহী শহর থেকে নয় কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে শাহাপুর গ্রামে। পদ্মা নদী থেকে এর উৎপত্তি। শাহাপুর থেকে কাটাখালী, কাপাশিয়া, জামিরা, হলিদাগাছী, মৌগাছী, পুঠিয়ার তাতারপুর, বিড়ালদহ, ভাড়রা ও কান্দ্রা পীরগাছা হয়ে নাটোরের ভিতর দিয়ে নন্দকুজা নদীতে পড়েছে। বিএমডিএ খননকাজ করার সময় নদীটির উৎসমুখ থেকে খনন না করে রাজশাহীর চারঘাটের মুক্তারপুর এলাকায় পদ্মা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত পাঁচ কিলোমিটার লম্বা একটি খাল খনন করে উপজেলার হলিদাগাছীতে নারদের সঙ্গে যুক্ত করেছে। সেখান থেকে নারদের ভাটিতে খননকাজ করা হয়েছে। নদীর এ নতুন ধারা মুসাখানের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশিদ জানান, নদীটি প্রায় ১০০ বছর আগে বেদখল হয়ে গিয়েছিল।

নদীর তীরবর্তী মানুষ নদীটির দখল নিয়ে বাড়িঘর, বাগান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলেছিলেন। আর এস রেকর্ডে নদীর কোনো অস্তিত্ব ছিল না। সি এস রেকর্ড দেখে নদীর প্রবাহ খুঁজে বের করা হয়েছে। এরপর নদীর জায়গা পুনরুদ্ধারে অনেক বাধা অতিক্রম করতে হয়েছে। সন্ধ্যা নদী নারদের একটি শাখা। এর উৎসমুখ পুঠিয়া উপজেলার রঘুরামপুর বাগিচাপাড়ায়। পুঠিয়ার শিবপুর বাজারের পাশ দিয়ে বাঁশপুকুরিয়া, নন্দনপুর হয়ে কান্তার বিলে পতিত হয়েছে। নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১১ কিলোমিটার। নারদ খননের সময় এ নদীর উৎসমুখের ৪ কিলোমিটার খনন করা হয়েছে। রাজশাহী নগরীর তালাইমারী এলাকায় ছিল স্বরমঙ্গলা নদীর উৎসমুখ। এ নদীর একটি শাখা ছিল দয়া। এটি নগরীর কাজলা-জামালপুর ও নামোভদ্রা এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হতো। এ জামালপুর মৌজায় পড়েছে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট)। নদীটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিম দেয়াল বরাবর উত্তরদিকে বয়ে গেছে। এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিম দেয়ালের পাশে তাকালে নদীর রেখা বোঝা যায়। রেললাইনের উত্তর পাশে দয়া নদীর খাতটি বেশ স্পষ্টই ছিল। সমতল থেকে ৪ ফুট গভীর ও ২৫ গজ প্রশস্ত এ জলাভূমিতে বছরের ছয় মাস পানি থাকত। এ জায়গাটি এখন ভরাট করে ফেলা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর