শিরোনাম
সোমবার, ৮ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

হারিয়ে যাচ্ছে খুলনার খাল

পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা জলাবদ্ধতায় ভোগান্তি

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

হারিয়ে যাচ্ছে খুলনার খাল

খুলনা নগরীর সোনাডাঙ্গা আবাসিক (দ্বিতীয় পর্যায়), ছোট বয়রা, হাসানবাগ এলাকার পানি নিষ্কাশনের অন্যতম তালতলা খাল দখলে-দূষণে অস্তিত্ব হারাচ্ছে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

খুলনা নগরীর সোনাডাঙ্গা আবাসিক (দ্বিতীয় পর্যায়), ছোট বয়রা, হাসানবাগ এলাকার পানি নিষ্কাশনের অন্যতম মাধ্যম তালতলা খাল। মুজগুন্নী মহাসড়কের হাসানবাগ হতে প্রায় দুই কিলোমিটার শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে খালটি ক্ষুদে নদীতে মিশেছে। সংস্কার ও অবৈধ দখলমুক্ত না করায় তালতলা খালটি ময়লা-আবর্জনায় প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। এর জায়গা দখল করে পাকা-আধাপাকা বাড়ি, গরুর খামার ও চলাচলের রাস্তা নির্মাণ হয়েছে। মৃতপ্রায় খালটি শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ভূমিকা রাখতে পারছে না।

স্থানীয়রা জানান, দখল-দূষণে খালটি অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। মুজগুন্নী মহাসড়ক থেকে খাল শুরুর ২০০ মিটার পরেই খালের ওপর দিয়ে ডাক্তারপাড়ার পাকা সড়ক চলে গেছে। সড়কের নিচে ছোট কালভার্ট করা হয়েছে। ওই সড়কের পর থেকে খাল সরু হতে শুরু করেছে। খালের মধ্যে বর্জ্য, গড়ে উঠেছে অবৈধ স্থাপনা।

২০০৯ সালে খুলনা নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে নদী-খালের অবৈধ দখল অপসারণে বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয় জরিপে বলা হয়, ভূমি রেকর্ডে খালটি ৩০-৬০ ফুট হলেও এতে মাত্র ৬-৭ ফুট করে ছোট আকারের ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে প্রজেক্টের আওতায়। এর বেশির ভাগ অংশ অবৈধ দখলে চলে গেছে। আউটার বাইপাসের পশ্চিম পাশে ড্রেনের শেষ সীমানা থেকে ক্ষুদে নদী পর্যন্ত এটি ভরাট ও অবৈধ দখল হয়ে গেছে। ২০১৫ সালে সিটি করপোরেশন খালটি খনন করে। কিন্তু যেনতেন সেই খননে কোনো সুফল মেলেনি। পরে সিটি করপোরেশন সেখানে ১৫ ফুট চওড়া রাস্তা নির্মাণ করেছে।

জানা যায়, খুলনা নগরীতে একসময় ময়ূর নদী, হাতিয়া নদী ও ক্ষুদে নদী সংযুক্ত ২২টি খাল ছিল। এর মধ্যে সিটি করপোরেশন ২০১৯ সালে ময়ূর নদী ও সংযুক্ত ২২টি খাল দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেয়। খালের জমি দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা ভেঙে জমি উদ্ধার করা হয়।

এ ছাড়া খুলনা সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে নদী-খাল খনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২২-২৩  অর্থবছরে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে ৮২৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকার মেগা প্রকল্পের অধীনে নদী-খাল দখলমুক্ত ও সংস্কার কাজ করা হবে।

অভিযোগ আছে, ধারাবাহিক মনিটরিং না থাকায় ডুবি হরিণটানার মধ্যবর্তী খাল, নিরালা খাল, রূপসা সাহেবখালি খাল, ছড়িছড়ার খাল, পাইপের মোড়ের খাল, মতিয়াখালি খাল, লবণচরা স্লুইস গেট-১ খাল, লবণচরা স্লুইস গেট-২ খাল, ক্ষেত্রখালি খাল, লবণচরা গোড়া খাল, নর্থ ব্যাংক খাল, সবুজবাগ খাল, মন্দার খাল, নবীনগর খালসহ নদী-খালগুলোর বেশির ভাগ অংশ বেদখল হয়ে গেছে। নিয়মিত পরিষ্কার ও সংস্কার না করায় অধিকাংশ স্থানে তা ভরাট হয়ে গেছে। এর মধ্যে দুই দফায় প্রায় ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ময়ূর ও হাতিয়া নদী খনন করা হলেও সুফল মেলেনি।

কেসিসির প্রধান পরিকল্পনাবিদ আবির-উল জব্বার বলেন, ময়ূর নদী আবারও খনন করা  হবে। এর দুই পাড়ে বাঁধাই করে ওয়াকওয়ে  নির্মাণ, পরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ময়ূর নদীসহ সংযুক্ত খাল সংরক্ষণ ও খাল আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে নেদারল্যান্ডস সরকারের আর্থিক সহায়তায় ফিজিবিলিটি স্টাডি কাজ চলমান রয়েছে।

সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক জানান, জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে চলমান প্রকল্পের আওতায় এ বছর ১২০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর